০৬ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজা দখলের নয়া ছক ইসরাইলের, উদ্বেগ রাষ্ট্রসংঘের

চামেলি দাস
  • আপডেট : ৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 488

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: গাজা উপত্যকায় পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান চালিয়ে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার নতুন একটি যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুমোদন করল ইসরাইল। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে রবিবার রাতে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই পরিকল্পনায় সিলমোহর দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সরকারি মুখপাত্র ডেভিড মেন্সার।

নতুন পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য শুধু হামাসকে দমন করা নয়, বরং গাজার নির্দিষ্ট অঞ্চল দখল করে দীর্ঘমেয়াদে তা ধরে রাখা। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ জানান, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে হামাসের শক্তি নষ্ট করা এবং গাজায় থাকা ইসরাইলি জিম্মিদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা হবে।

আরও পড়ুন: গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪১, মোট প্রাণহানি ৫৮ হাজার ৬৬০ ছাড়াল

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার অসামরিক মানুষদের দক্ষিণে সরে যেতে বাধ্য করা হবে। তবে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ গাজায় লক্ষাধিক মানুষ গাদাগাদি করে রয়েছেন। এতে খাদ্য, ওষুধ ও পানীয় জলের সংকট আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

আরও পড়ুন: গাজায় খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যুর মিছিল, নিহত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি

রাষ্ট্রসংঘ এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে। তাদের দাবি, ইসরাইল এই যুদ্ধ কৌশলের অংশ হিসেবে ‘জীবনধারণের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র’-এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তা জনগণের উপর চাপ তৈরির হাতিয়ার বানাতে চাইছে। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে ত্রাণ সরবরাহ ইসরাইলি নিয়ন্ত্রিত হাব বা কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট বাছাই করা পরিবারকে সরাসরি দেওয়া হবে। এই কেন্দ্রে মার্কিন চুক্তিভিত্তিক সংস্থাগুলি নিরাপত্তা দেবে, যাতে হামাস এই ত্রাণ না পায়।

আরও পড়ুন: হয়তো সম্মানজনক চুক্তি, না হয় মুক্তির যুদ্ধ: হামাস কমান্ডার হাদ্দাদের হুঁশিয়ারি

তবে এই ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বলছে, এটি ত্রাণ বিতরণে নিরপেক্ষতার নীতি ভঙ্গ করছে এবং এর ফলে সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়বে। ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী ইতমার বেন গভিরও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, ‘গাজায় যথেষ্ট খাবার আছে, তাই মানবিক সাহায্যের দরকার নেই।’

এই যুদ্ধ পরিকল্পনার বাস্তবায়নে ইসরাইল সেনাবাহিনীর হাজার হাজার রিজার্ভ সেনাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। আইডিএফ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির বলেন, ‘বিমান, সমুদ্র এবং স্থলপথে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না হামাস ধ্বংস হচ্ছে এবং সব জিম্মিকে উদ্ধার করা হচ্ছে।’

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, অক্টোবর ২০২৩-এ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৫২,০০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই মহিলা ও শিশু। শুধুমাত্র মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাম্প্রতিক হামলাতেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২,৪০০ জনের।

এ দিকে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা রবিবার ইসরাইলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে মিসাইল ছোঁড়ে, যাতে অন্তত ৬ জন আহত হন। এই হামলার জেরে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলেও প্রভাব পড়ে। হুথিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে তাদের ‘সম্পূর্ণ বিমান অবরোধ’ চলবে।

নেতানিয়াহু পালটা জবাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তার কথায়, ‘আমরা আগে যেমন করেছি, এবারও করব। এটা একবারের জন্য নয়; এখানে বারবার ‘বুম’ হবে।’

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গাজা দখলের নয়া ছক ইসরাইলের, উদ্বেগ রাষ্ট্রসংঘের

আপডেট : ৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: গাজা উপত্যকায় পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান চালিয়ে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার নতুন একটি যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুমোদন করল ইসরাইল। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে রবিবার রাতে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই পরিকল্পনায় সিলমোহর দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সরকারি মুখপাত্র ডেভিড মেন্সার।

নতুন পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য শুধু হামাসকে দমন করা নয়, বরং গাজার নির্দিষ্ট অঞ্চল দখল করে দীর্ঘমেয়াদে তা ধরে রাখা। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ জানান, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে হামাসের শক্তি নষ্ট করা এবং গাজায় থাকা ইসরাইলি জিম্মিদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা হবে।

আরও পড়ুন: গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪১, মোট প্রাণহানি ৫৮ হাজার ৬৬০ ছাড়াল

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার অসামরিক মানুষদের দক্ষিণে সরে যেতে বাধ্য করা হবে। তবে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ গাজায় লক্ষাধিক মানুষ গাদাগাদি করে রয়েছেন। এতে খাদ্য, ওষুধ ও পানীয় জলের সংকট আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

আরও পড়ুন: গাজায় খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রেই মৃত্যুর মিছিল, নিহত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি

রাষ্ট্রসংঘ এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে। তাদের দাবি, ইসরাইল এই যুদ্ধ কৌশলের অংশ হিসেবে ‘জীবনধারণের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র’-এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তা জনগণের উপর চাপ তৈরির হাতিয়ার বানাতে চাইছে। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে ত্রাণ সরবরাহ ইসরাইলি নিয়ন্ত্রিত হাব বা কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট বাছাই করা পরিবারকে সরাসরি দেওয়া হবে। এই কেন্দ্রে মার্কিন চুক্তিভিত্তিক সংস্থাগুলি নিরাপত্তা দেবে, যাতে হামাস এই ত্রাণ না পায়।

আরও পড়ুন: হয়তো সম্মানজনক চুক্তি, না হয় মুক্তির যুদ্ধ: হামাস কমান্ডার হাদ্দাদের হুঁশিয়ারি

তবে এই ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বলছে, এটি ত্রাণ বিতরণে নিরপেক্ষতার নীতি ভঙ্গ করছে এবং এর ফলে সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়বে। ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী ইতমার বেন গভিরও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, ‘গাজায় যথেষ্ট খাবার আছে, তাই মানবিক সাহায্যের দরকার নেই।’

এই যুদ্ধ পরিকল্পনার বাস্তবায়নে ইসরাইল সেনাবাহিনীর হাজার হাজার রিজার্ভ সেনাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। আইডিএফ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির বলেন, ‘বিমান, সমুদ্র এবং স্থলপথে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না হামাস ধ্বংস হচ্ছে এবং সব জিম্মিকে উদ্ধার করা হচ্ছে।’

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, অক্টোবর ২০২৩-এ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৫২,০০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই মহিলা ও শিশু। শুধুমাত্র মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাম্প্রতিক হামলাতেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২,৪০০ জনের।

এ দিকে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা রবিবার ইসরাইলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে মিসাইল ছোঁড়ে, যাতে অন্তত ৬ জন আহত হন। এই হামলার জেরে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলেও প্রভাব পড়ে। হুথিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে তাদের ‘সম্পূর্ণ বিমান অবরোধ’ চলবে।

নেতানিয়াহু পালটা জবাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তার কথায়, ‘আমরা আগে যেমন করেছি, এবারও করব। এটা একবারের জন্য নয়; এখানে বারবার ‘বুম’ হবে।’