২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বর্ধমানের খান বাহাদুর আবদুল জব্বার হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৭ জানুয়ারী ২০২৩, মঙ্গলবার
  • / 46

সফিকুল ইসলাম (দুলাল) বর্ধমান: বর্ধমানের একজন মানুষ যে ভোপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন সে-কথা আজ অনেকেই জানেন না। ইংরেজ সরকার তাঁকে উপাধি দিয়েছিল খান বাহাদুর। প্রেসিডেন্সির ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন তিনি। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর সহপাঠী ও বন্ধু ছিলেন। তিনি ভোপাল নবাবের আমন্ত্রণে সেখানে যান। ১৮৯৭-১৯০২ পর্যন্ত তিনি সেখানকার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। খান বাহাদুর আবদুল জব্বারের নাম আজ হয়তো অনেকেই জানেন না। তাঁকে নিয়ে আলাদা করে চর্চা হয়নি।

আবদুল জব্বার ১৮৩৭ সালের ২৪ অক্টোবর বর্ধমান জেলার পারহাটি গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি মঙ্গলকোটের কাশিয়ারা। খানদানি মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তার বাবা খান বাহাদুর গোলাম আসগর কোম্পানি সরকারের বিচার বিভাগের সদরে আলা ছিলেন। আবদুল জব্বার বর্ধমান রাজ স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন। এই স্কুলে রামতনু লাহিড়ী ছিলেন তাঁর শিক্ষক।

আরও পড়ুন: দাঙ্গা বাধানোর ছক ছিল পাকিস্তানের: প্রধানমন্ত্রী

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টার্ন্স সহ বিএ পাশ করেন আবদুল জব্বার। স্বাধীনচেতা এই মুসলিম যুবককে ইংরেজরা বিভিন্ন প্রলোভনে আটকে রাখার চেষ্টা করেছিল। তাকে প্রেসিডেন্সির ম্যাজিস্ট্রেট করা হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন ভারতীয়দেরকে কুলি বলে সম্বোধন করা হয়েছিল তার প্রতিবাদে মহাত্মা গান্ধি সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন।

আরও পড়ুন: Pahalgam Terror attack:’মন কি বাতে’ পহেলগাঁও হামলার বদলার প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর

এই আন্দোলনের রেস কলকাতায় ছড়িয়ে পড়লে, কলকাতার টাউন হলে খান বাহাদুর আবদুল জব্বারের সভাপতিত্বে বিশাল এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হয়েছিলেন রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। আবদুল জব্বার খান বাহাদুর ইংরেজদের গোলামি ত্যাগ করে দেশ স্বাধীন করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তিনি নানাভাবে সাহায্য করতেন।

আরও পড়ুন: প্রয়াত মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাদাবি

পড়াশোনার পর তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৮৮৯ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতায় প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। বঙ্গীয় আইন পরিষদে ১৮৮৪, ১৮৮৬ ও ১৮৯৩ সালে তিনি সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন। অবসর গ্রহণের পর ১৮৯৭ থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত তিনি ভোপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। এসময় জনকল্যাণের জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

ভারতের মুসলিমদের প্রথম সংগঠন সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মহামেডান অ্যাসোসিয়েশনে তিনি সদস্য ছিলেন। এ ছাড়াও মহামেডান লিটারেরি সোসাইটির সদস্য ছিলেন এবং ১৯০০ সালে সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন। নওয়াব আবদুল লতিফের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মুসলিমদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে তিনি তৎপর ছিলেন। মুসলিম ধর্ম পরিচয় নামে একটি বইও লিখেছিলেন তিনি।

ওই সময়ের সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। অসাধারণ নেতৃত্বের অধিকারী আবদুল জব্বার ভোপালের নবাবের নজরে পড়েন। ১৯১৮ সালের জানুয়ারিতে নিজ গ্রামে তিনি ইন্তেকাল করেন। আবদুল জব্বার খান বাহাদুর ছাড়া বর্ধমানের আর কোনও ব্যক্তি দেশীয় রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে উন্নতি হয়েছিলেন এমন নাম খুঁজে পাওয়া যায় না।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বর্ধমানের খান বাহাদুর আবদুল জব্বার হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী

আপডেট : ১৭ জানুয়ারী ২০২৩, মঙ্গলবার

সফিকুল ইসলাম (দুলাল) বর্ধমান: বর্ধমানের একজন মানুষ যে ভোপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন সে-কথা আজ অনেকেই জানেন না। ইংরেজ সরকার তাঁকে উপাধি দিয়েছিল খান বাহাদুর। প্রেসিডেন্সির ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন তিনি। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর সহপাঠী ও বন্ধু ছিলেন। তিনি ভোপাল নবাবের আমন্ত্রণে সেখানে যান। ১৮৯৭-১৯০২ পর্যন্ত তিনি সেখানকার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। খান বাহাদুর আবদুল জব্বারের নাম আজ হয়তো অনেকেই জানেন না। তাঁকে নিয়ে আলাদা করে চর্চা হয়নি।

আবদুল জব্বার ১৮৩৭ সালের ২৪ অক্টোবর বর্ধমান জেলার পারহাটি গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি মঙ্গলকোটের কাশিয়ারা। খানদানি মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তার বাবা খান বাহাদুর গোলাম আসগর কোম্পানি সরকারের বিচার বিভাগের সদরে আলা ছিলেন। আবদুল জব্বার বর্ধমান রাজ স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন। এই স্কুলে রামতনু লাহিড়ী ছিলেন তাঁর শিক্ষক।

আরও পড়ুন: দাঙ্গা বাধানোর ছক ছিল পাকিস্তানের: প্রধানমন্ত্রী

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টার্ন্স সহ বিএ পাশ করেন আবদুল জব্বার। স্বাধীনচেতা এই মুসলিম যুবককে ইংরেজরা বিভিন্ন প্রলোভনে আটকে রাখার চেষ্টা করেছিল। তাকে প্রেসিডেন্সির ম্যাজিস্ট্রেট করা হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন ভারতীয়দেরকে কুলি বলে সম্বোধন করা হয়েছিল তার প্রতিবাদে মহাত্মা গান্ধি সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন।

আরও পড়ুন: Pahalgam Terror attack:’মন কি বাতে’ পহেলগাঁও হামলার বদলার প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর

এই আন্দোলনের রেস কলকাতায় ছড়িয়ে পড়লে, কলকাতার টাউন হলে খান বাহাদুর আবদুল জব্বারের সভাপতিত্বে বিশাল এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হয়েছিলেন রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। আবদুল জব্বার খান বাহাদুর ইংরেজদের গোলামি ত্যাগ করে দেশ স্বাধীন করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তিনি নানাভাবে সাহায্য করতেন।

আরও পড়ুন: প্রয়াত মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাদাবি

পড়াশোনার পর তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৮৮৯ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতায় প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। বঙ্গীয় আইন পরিষদে ১৮৮৪, ১৮৮৬ ও ১৮৯৩ সালে তিনি সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন। অবসর গ্রহণের পর ১৮৯৭ থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত তিনি ভোপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। এসময় জনকল্যাণের জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

ভারতের মুসলিমদের প্রথম সংগঠন সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মহামেডান অ্যাসোসিয়েশনে তিনি সদস্য ছিলেন। এ ছাড়াও মহামেডান লিটারেরি সোসাইটির সদস্য ছিলেন এবং ১৯০০ সালে সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন। নওয়াব আবদুল লতিফের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মুসলিমদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে তিনি তৎপর ছিলেন। মুসলিম ধর্ম পরিচয় নামে একটি বইও লিখেছিলেন তিনি।

ওই সময়ের সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। অসাধারণ নেতৃত্বের অধিকারী আবদুল জব্বার ভোপালের নবাবের নজরে পড়েন। ১৯১৮ সালের জানুয়ারিতে নিজ গ্রামে তিনি ইন্তেকাল করেন। আবদুল জব্বার খান বাহাদুর ছাড়া বর্ধমানের আর কোনও ব্যক্তি দেশীয় রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে উন্নতি হয়েছিলেন এমন নাম খুঁজে পাওয়া যায় না।