২৩ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নাজিমুদ্দিন হত্যাকাণ্ড­ ৮৪ দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ কৃষ্ণনগর জিআরপি-র

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, শুক্রবার
  • / 179

শফিকুল ইসলাম : নদিয়া­ নদিয়ার দেবগ্রাম রেলস্টেশনে নাজিমুদ্দিন খুন মামলায় ৮৪ দিনে চার্জশিট দিল পুলিশ। এখনও পর্যন্ত পুলিশ এই মামলায় প্রায় ৮ জন সাক্ষীকে জেরা করেছে। জানা গেছে, ৩০০ পাতারও বেশি এই চার্জশিট কৃষ্ণনগর আদালতে জমা দিয়েছেন কৃষ্ণনগর রেল পুলিশের তদন্তকারী দল। এই বিষয়ে কৃষ্ণনগর জিআরপির ওসি, তদন্তকারী অফিসার এবং বেলডাঙা থানার আইসি যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছেন। নাজিমুদ্দিন খুন মামলায় অভিযুক্ত সুদীপ ঘোষ, বুরান ঘোষ ওরফে বীরু ঘোষ, বাবাই ওরফে পরিমল ঘোষ আর রিঙ্কু ঘোষের বিরুদ্ধে এই চার্জশিট কৃষ্ণনগর আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। কেসের অন্যতম আসামী নরেন ঘোষ এখনও পলাতক।

উল্লেখ্য, গত ১৩. ১২. ২০২১ তারিখ রাত ১১টা ১০মিনিট নাগাদ দেবগ্রামে শিয়ালদহ-লালগোলা শাখার ট্রেন থেকে নামিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে চলন্ত ট্রেনের চাকার নিচে ফেলে দেওয়ার ফলে মর্মান্তিক মৃতু্য হয়েছিল নাজিমুদ্দিনের। দু’খণ্ড হয়ে রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়েছিল দেবগ্রামের রেললাইনে। নাজিমুদ্দিন শেখের বাড়ি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার স্বরূপনগর পশ্চিমপাড়া বেগুনবাড়ি গ্রামে। ১৩ ডিসেম্বর রাতে শিয়ালদহ থেকে লালাগোলা মেমু ট্রেনে বাড়িতে ফেরার সময় ভেন্ডার কামরায় উঠেছিলেন। সেখানে কয়েকজন ছানা ব্যবসায়ী নিজামুদ্দিনকে দেবগ্রাম স্টেশনে নামিয়ে মারধর করে ট্রেনের নীচে ছুড়ে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় ট্রেনের চাকায় কেটে তার শরীর দু’টুকরো হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় চার্জশিট দিল সিবিআই

উল্লেখ্য, এই শাখায় পরিযায়ী শ্রমিক এবং সাধারণ যাত্রীদের উপর নিত্যযাত্রীদের অত্যাচারের অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। সিট থেকে উঠিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মারধরের অভিযোগ ওঠে নিত্যযাত্রীদের বিরুদ্ধে। তারপরেও রেলের পক্ষ থেকে কোনওরকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। নাজিমুদ্দিনের বড় ভাই আবদুর রহিম জানান, ট্রেনে এক বৃদ্ধার কাছে কিছু ক্যাপসিকাম বা মরিচ ছিল। একই কামরায় ১০-১২ জন ছানা ব্যবসায়ী ছিল। ছিলেন নাজিমুদ্দিন সহ তাঁর কয়েকজন বন্ধুও। ট্রেন বেথুয়াডহরি ছাড়ার পর ওই বৃদ্ধা কান্নাকাটি করে বলতে থাকেন তাঁর কিছু মরিচ কেউ চুরি করে নিয়েছে।

আরও পড়ুন: কৃষ্ণনগরে ‘ওয়াকফ বোর্ডের’  কবরস্থান দখল করে নির্মাণ কাজ, ক্ষোভ, প্রতিবাদ স্থানীয় বাসিন্দাদের

 

আরও পড়ুন: বগটুই: শীঘ্রই চার্জশিট পেশ করবে সিবিআই

বৃদ্ধার কান্নাকাটি শুনে নাজিমুদ্দিন বৃদ্ধাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যান এবং জানতে চান তাঁর কত টাকার মরিচ চুরি হয়েছে। বৃদ্ধা জানান দু-আড়াইশো টাকার মরিচ চুরি হয়েছে। নাজিমুদ্দিন বৃদ্ধাকে দুশো টাকা দিয়ে দেন। তারপর যাত্রীদের মধ্যে কেউ নিয়েছে কি না, তার জানার জন্য খোঁজা শুরু করেন। খোঁজ পাওয়া যায় এক ছানা ব্যবসায়ী মরিচ চুরি করেছে। তখন নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে ছানা ব্যবসায়ীদের বচসা শুরু হয়। এর পর ট্রেন দেবগ্রাম স্টেশনে দাঁড়ালে ছানা ব্যবসায়ীরা নাজিমুদ্দিন ও তাঁর দুই বন্ধু রসিক রাজা ও অমিত কর্মকারকে জোর করে ট্রেন থেকে নামিয়ে নেয়। ব্যাপক মারধর করে। ট্রেন ছেড়ে দিলে রসিক রাজা ও অমিত কর্মকারকে ছেড়ে দেয়। তাঁরা ট্রেনে উঠে পড়ে। নাজিমুদ্দিনকে প্রচণ্ড মারধর করে ট্রেনের চাকার নীচে ফেলে দেয়। ট্রেন নাজিমুদ্দিনের দেহকে দু’টুকরো করে চলে যায়। একদিকে থাকে বুক থেকে মাথা। অন্যদিকে থাকে কোমর থেকে নীচের দিক।

 

মহাম্মদ নাজিমুদ্দিনকে হত্যা মামলায় তার দাদা আধুর রহিম লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ১৪.১২.২০২১তারিখে। ১৫.১২.২০২১ দু’জন আসামী গ্রেফতার হয়, সুদীপ ঘোষ আর বুরান ঘোষ ওরফে বিরু ঘোষ। পরে আরও ২ জন আসামী গ্রেফতার হয় বাবাই ওরফে পরিমল ঘোষ আর রিঙ্কু ঘোষ। কেসের অন্যতম আসামী নরেন ঘোষ এখনো পলাতক।

 

আইন অনুযায়ী আসামিদের গ্রেফতার হওয়ার দিন থেকে (অর্থাৎ ১৫.১২.২০২১) ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশকে চার্জশিট দিতে হবে নাহলে ৯১ তম দিনে আসামী সুদীপ ঘোষ ও বুরান ঘোষ জামিন পেয়ে যাবে। আবদুর রহিমের দাবি, আসামীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাক্ষীরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন, আসামিদের শনাক্তও করছেন। এই মামলার দু’জন আইনজীবী আলি আহসান আলমগীর ও জ্যোতি সাঁধুখান। আসামীরা কেউই এখনও জামিন পাননি। নাজিমুদ্দিনের পরিবার ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় রয়েছে।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নাজিমুদ্দিন হত্যাকাণ্ড­ ৮৪ দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ কৃষ্ণনগর জিআরপি-র

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, শুক্রবার

শফিকুল ইসলাম : নদিয়া­ নদিয়ার দেবগ্রাম রেলস্টেশনে নাজিমুদ্দিন খুন মামলায় ৮৪ দিনে চার্জশিট দিল পুলিশ। এখনও পর্যন্ত পুলিশ এই মামলায় প্রায় ৮ জন সাক্ষীকে জেরা করেছে। জানা গেছে, ৩০০ পাতারও বেশি এই চার্জশিট কৃষ্ণনগর আদালতে জমা দিয়েছেন কৃষ্ণনগর রেল পুলিশের তদন্তকারী দল। এই বিষয়ে কৃষ্ণনগর জিআরপির ওসি, তদন্তকারী অফিসার এবং বেলডাঙা থানার আইসি যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছেন। নাজিমুদ্দিন খুন মামলায় অভিযুক্ত সুদীপ ঘোষ, বুরান ঘোষ ওরফে বীরু ঘোষ, বাবাই ওরফে পরিমল ঘোষ আর রিঙ্কু ঘোষের বিরুদ্ধে এই চার্জশিট কৃষ্ণনগর আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। কেসের অন্যতম আসামী নরেন ঘোষ এখনও পলাতক।

উল্লেখ্য, গত ১৩. ১২. ২০২১ তারিখ রাত ১১টা ১০মিনিট নাগাদ দেবগ্রামে শিয়ালদহ-লালগোলা শাখার ট্রেন থেকে নামিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে চলন্ত ট্রেনের চাকার নিচে ফেলে দেওয়ার ফলে মর্মান্তিক মৃতু্য হয়েছিল নাজিমুদ্দিনের। দু’খণ্ড হয়ে রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়েছিল দেবগ্রামের রেললাইনে। নাজিমুদ্দিন শেখের বাড়ি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার স্বরূপনগর পশ্চিমপাড়া বেগুনবাড়ি গ্রামে। ১৩ ডিসেম্বর রাতে শিয়ালদহ থেকে লালাগোলা মেমু ট্রেনে বাড়িতে ফেরার সময় ভেন্ডার কামরায় উঠেছিলেন। সেখানে কয়েকজন ছানা ব্যবসায়ী নিজামুদ্দিনকে দেবগ্রাম স্টেশনে নামিয়ে মারধর করে ট্রেনের নীচে ছুড়ে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় ট্রেনের চাকায় কেটে তার শরীর দু’টুকরো হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় চার্জশিট দিল সিবিআই

উল্লেখ্য, এই শাখায় পরিযায়ী শ্রমিক এবং সাধারণ যাত্রীদের উপর নিত্যযাত্রীদের অত্যাচারের অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। সিট থেকে উঠিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মারধরের অভিযোগ ওঠে নিত্যযাত্রীদের বিরুদ্ধে। তারপরেও রেলের পক্ষ থেকে কোনওরকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। নাজিমুদ্দিনের বড় ভাই আবদুর রহিম জানান, ট্রেনে এক বৃদ্ধার কাছে কিছু ক্যাপসিকাম বা মরিচ ছিল। একই কামরায় ১০-১২ জন ছানা ব্যবসায়ী ছিল। ছিলেন নাজিমুদ্দিন সহ তাঁর কয়েকজন বন্ধুও। ট্রেন বেথুয়াডহরি ছাড়ার পর ওই বৃদ্ধা কান্নাকাটি করে বলতে থাকেন তাঁর কিছু মরিচ কেউ চুরি করে নিয়েছে।

আরও পড়ুন: কৃষ্ণনগরে ‘ওয়াকফ বোর্ডের’  কবরস্থান দখল করে নির্মাণ কাজ, ক্ষোভ, প্রতিবাদ স্থানীয় বাসিন্দাদের

 

আরও পড়ুন: বগটুই: শীঘ্রই চার্জশিট পেশ করবে সিবিআই

বৃদ্ধার কান্নাকাটি শুনে নাজিমুদ্দিন বৃদ্ধাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যান এবং জানতে চান তাঁর কত টাকার মরিচ চুরি হয়েছে। বৃদ্ধা জানান দু-আড়াইশো টাকার মরিচ চুরি হয়েছে। নাজিমুদ্দিন বৃদ্ধাকে দুশো টাকা দিয়ে দেন। তারপর যাত্রীদের মধ্যে কেউ নিয়েছে কি না, তার জানার জন্য খোঁজা শুরু করেন। খোঁজ পাওয়া যায় এক ছানা ব্যবসায়ী মরিচ চুরি করেছে। তখন নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে ছানা ব্যবসায়ীদের বচসা শুরু হয়। এর পর ট্রেন দেবগ্রাম স্টেশনে দাঁড়ালে ছানা ব্যবসায়ীরা নাজিমুদ্দিন ও তাঁর দুই বন্ধু রসিক রাজা ও অমিত কর্মকারকে জোর করে ট্রেন থেকে নামিয়ে নেয়। ব্যাপক মারধর করে। ট্রেন ছেড়ে দিলে রসিক রাজা ও অমিত কর্মকারকে ছেড়ে দেয়। তাঁরা ট্রেনে উঠে পড়ে। নাজিমুদ্দিনকে প্রচণ্ড মারধর করে ট্রেনের চাকার নীচে ফেলে দেয়। ট্রেন নাজিমুদ্দিনের দেহকে দু’টুকরো করে চলে যায়। একদিকে থাকে বুক থেকে মাথা। অন্যদিকে থাকে কোমর থেকে নীচের দিক।

 

মহাম্মদ নাজিমুদ্দিনকে হত্যা মামলায় তার দাদা আধুর রহিম লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ১৪.১২.২০২১তারিখে। ১৫.১২.২০২১ দু’জন আসামী গ্রেফতার হয়, সুদীপ ঘোষ আর বুরান ঘোষ ওরফে বিরু ঘোষ। পরে আরও ২ জন আসামী গ্রেফতার হয় বাবাই ওরফে পরিমল ঘোষ আর রিঙ্কু ঘোষ। কেসের অন্যতম আসামী নরেন ঘোষ এখনো পলাতক।

 

আইন অনুযায়ী আসামিদের গ্রেফতার হওয়ার দিন থেকে (অর্থাৎ ১৫.১২.২০২১) ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশকে চার্জশিট দিতে হবে নাহলে ৯১ তম দিনে আসামী সুদীপ ঘোষ ও বুরান ঘোষ জামিন পেয়ে যাবে। আবদুর রহিমের দাবি, আসামীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাক্ষীরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন, আসামিদের শনাক্তও করছেন। এই মামলার দু’জন আইনজীবী আলি আহসান আলমগীর ও জ্যোতি সাঁধুখান। আসামীরা কেউই এখনও জামিন পাননি। নাজিমুদ্দিনের পরিবার ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় রয়েছে।