দিনে ১৫ টি সিগারেটের থেকেও বেশি ক্ষতিকারক একাকিত্ব : হু

- আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার
- / 35
পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: একসময় ৫০ কিলোমিটার দূরে থাকা আত্মীয়র সঙ্গে দেখা করার জন্য মাস তিন এক অপেক্ষা করতে হত।ল্যান্ড ফোন আসার পর সেই দূরত্ব খানিকটা যেন কমে গেল।গলার আওয়াজ শোনা গেলেও কাছের মানুষকে দেখার সুযোগ ছিল না। এরপর এল মোবাইল।প্রথমে শুধু স্বর, তারপর ভিডিয়ো কল।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া গেল কাতার থেকে আমেরিকা।এক মুহুর্তে গোটা দুনিয়ার হাল হকিকত সামনে এনে দিল স্মার্ট ফোন।
এক সময় মনে করা হচ্ছিল, দূরত্ব ঘোচাবে প্রযুক্তি। বসুধৈব কুটুম্বকম কথাটাকে সত্য প্রমাণ করবে মোবাইল ফোন। কিন্তু স্মার্ট ফোনের অত্যাধিক ব্যবহার মানুষকে আপনজনদের থেকে যেন আরও দূরে ঠেলে দিল। সবাই মুখ গুঁজে রয়েছে স্মার্ট ফোনে। আর এর জেরে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাড়ির বয়স্ক, শিশু ও কিশোর–কিশোরীরা।
বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (হু) মনে করছে একাকিত্ব এই মুহুর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অনেক বড় হুমকি।হু–র মতে, মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াচ্ছে একাকিত্ব। এই ক্ষতি মাপতে গিয়ে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দিনে ১৫ টি সিগারেট একজন মানুষের যতটা ক্ষতি করতে পারে, ঠিক ততটা পরিমাণ স্বাস্থ্যের ক্ষতি ডেকে আনে একাকিত্ব।
এই সমস্যার কথা ভেবে একটি আন্তর্জাতিক কমিশন তৈরি করেছে হু। সেখানে রয়েছেন আমেরিকান চিকিৎসক ডা. বিবেক মুর্তি, আফ্রিকার চিডো এমপেম্বা সহ ১১ জন আইনজীবী ও সরকারি মন্ত্রীরা।
এই কমিশনটি একাকিত্ব নিয়ে আরও গবেষণা ও সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে আগামী ৩ বছর। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড ১৯–র পর থেকে একাকিত্বের প্রবণতা আরও বেড়েছে।
ডা. মুর্তির মতে, একাকিত্বের সমস্যার ক্ষেত্রে বয়স কোনও ফ্যাক্টর নয়। যে কোনও বয়সী মানুষ এর শিকার হতে পারে। ১৫ টি সিগারেটের থেকেও বেশি ক্ষতি করে একাকিত্ব। এমনকি স্থূলতা ও ব্যায়াম না করার জন্য শরিরে যেসব সমস্যা দানা বাঁধে, তার থেকেও বেশি ক্ষতি করে একাকিত্ব।
উন্নত দেশের মানুষ একাকিত্বে ভোগেন, এমনটা মনে করা হলেও, ডা. মুর্তি জানাচ্ছেন, অনুন্নত দেশেও প্রতি ৪ জন বয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন একাকিত্বের সমস্যায় ভুগছেন।তাঁর মতে, বয়স্কদের মধ্যে একাকিত্বের সমস্যা ডিমেনশিয়া ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়।
ছোটদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। ৫–১৫ শতাংশ কিশোর কিশোরীরাও একাকিত্বে ভুগছে। আফ্রিকার ১২.৭ শতাংশ কিশোর কিশোরী একাকিত্বে ভোগে। ইউরোপে সেটা ৫.৩। স্কুলে পড়াকালীন যেসব ছেলে মেয়ে একাকিত্বে ভোগে, উচ্চশিক্ষায় তাদের পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফল দেখা যেতে পারে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও। একাকিত্বে ভোগা কিশোর কিশোরীরা পেশাগত জগতেও সমস্যার মুখোমুখি হন। তারা নিজের পেশায় সন্তুষ্ট হতে পারে না। কর্মক্ষমতাও তাদের কম হয় বলে মনে করছে হু–র বিশেষজ্ঞরা।