২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কথা রাখলেন মমতা, তাজপুরের মুকুটে নতুন পালক

রফিকুল হাসান
  • আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার
  • / 22

প্রতীকী ছবি

পুবের কলম প্রতিবেদক, পুর্ব মেদিনীপুর: তাজপুরে গ্রীনফিল্ড বন্দর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য সরকার। এক হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠবে তাজপুর বন্দর। তবে এর জন্য রাজ্য সরকারকে কোনরকম জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। সেই জমি রাজ্যের হাতেই রয়েছে। জমির চিহ্নিতকরণের কাজ ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে রাজ্য। তাজপুর বন্দর তৈরীর জন্য সোমবার গ্লোবাল টেন্ডার ডেকেছে রাজ্য সরকার। এরফলে তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে আরো এক ধাপ এগোল রাজ্য সরকার। বন্দর নির্মাণের জন্য দরপত্র চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেওয়া যাবে।

১৬ হাজার কোটি টাকার গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এতে প্রত্যক্ষভাবে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রথম পর্যায়ে ৬টি বার্থ ও পরের পর্যায়ে আরো ৯ টি বার্থ তৈরি হবে এই বন্দরে। ৯৯ বছরের লিজ দেওয়া হবে। এই বন্দর এর সঙ্গে নিকটতম জাতীয় সড়ক এবং রেলপথের যোগাযোগের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। ৩৫০ মিটার প্রস্থ এবং প্রায় ১৬ মিটার নাব্যতা থাকায় তাজপুর একটি গভীর সমুদ্র বন্দর হিসেবে কাজ করতে পারবে। 

আরও পড়ুন: তাজপুর বন্দর: আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে শীঘ্রই চুক্তির সম্ভাবনা রাজ্যের

২০১৯ সালে এই বন্দর তৈরীর কথা প্রথম বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাজপুর বন্দর এর সাইটের উদ্বোধন করেছিলেন। তখন ঠিক হয়েছিল কেন্দ্র এবং রাজ্য যৌথ উদ্যোগে এই বন্দর তৈরি করবে। এমনকি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিজেদের অধিকাংশ শেয়ারও কেন্দ্রকে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানায় শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের শেষ দিকে রাজ্য নিজেই এই বন্দর তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য তাজপুর ছাড়াও আরও দুটি  প্রস্তাবিত জায়গার নাম নবান্নে পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে একটি দাদনপাত্রবাড় এবং অপরটি কাঁথির শৌলা সংলগ্ন এলাকা। যদিও নবান্ন, তাজপুরের সাইটটিকে প্রস্তাবিত বন্দরের জন্য চূড়ান্ত করে। এই বন্দর আগামী দিনে উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে হয়ে উঠবে বলে প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি। 

আরও পড়ুন: আগেই উদ্বোধন হয়েছে ক্যানসার হাসপাতালের, প্রধানমন্ত্রীকে আর কি কি শোনালেন মমতা

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পলি পড়ে যাওয়ার কারণে হলদিয়া বন্দরে বড় জাহাজ ঢুকতে পারছে না। এর জন্য মাঝ সমুদ্রে ‘শিপ টু শিপ’ ট্রান্সলোডিং করতে হচ্ছে। ফলে খরচ বাড়ছে। কিন্তু গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হলে তাজপুরে সরাসরি বড় জাহাজ ঢুকে যাবে। ট্রান্সলোডিং এর হয়রানি থাকবে না। তাতে অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয় হবে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে প্রতিবছর ৫-৬ হাজার কোটি টাকার মাছ ও চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি হয়। তাজপুরে বন্দর হলে মাছ ও চিংড়ি রপ্তানিতে অনেক সুবিধা হবে। বীরভূমের পাচামি থেকে কয়লা অনায়াসে তাজপুর বন্দর দিয়ে বাইরে পাঠানো যাবে। এছাড়া আকরিক লোহা পেট্রোপণ্য প্রভৃতি নানাবিধ জিনিসপত্র তাজপুর বন্দর থেকেই নানা দেশে আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর নাব্যতার সমস্যায় ভুগছে। তাই বড় জাহাজ গুলি ঢুকতে পারছে না। 

আরও পড়ুন: থমকে যাওয়া রেল পথ সম্প্রসারনের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি সুন্দরবনবাসীর, বরাদ্দ ১ টাকা!

তাজপুর বন্দর প্রকল্প টি রূপায়িত হলে ভবিষ্যতে পূর্ব মেদিনীপুরের আর্থসামাজিক চেহারাই বদলে যাবে। বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সম্প্রতি জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বেশ কয়েকবার তাজপুর সমুদ্র বন্দরের প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন। রাজ্য থেকেও বিশেষজ্ঞ টিম গিয়ে একাধিকবার ওই এলাকা ঘুরে দেখেছে। উপকূল থেকে কয়েক কিমি গভীরে গড়ে উঠেছে বন্দর। এর মাঝে তৈরি হবে সেতু। সেখান থেকে মালপত্র সড়ক ও রেলপথে নানা প্রান্তে রওনা দেবে।

তাজপুর গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের গ্লোবাল টেন্ডারের খবরে রামনগর, কাঁথি,এগরা সহ সমগ্র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে খুশীর হাওয়া। স্হানীয় বিধায়ক তথা মৎস্য মন্ত্রী অখিল গিরি, প্রাক্তন সহকারী সভাধিপতি মামুদ হোসেন, জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কথা রাখলেন মমতা, তাজপুরের মুকুটে নতুন পালক

আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার

পুবের কলম প্রতিবেদক, পুর্ব মেদিনীপুর: তাজপুরে গ্রীনফিল্ড বন্দর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য সরকার। এক হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠবে তাজপুর বন্দর। তবে এর জন্য রাজ্য সরকারকে কোনরকম জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। সেই জমি রাজ্যের হাতেই রয়েছে। জমির চিহ্নিতকরণের কাজ ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে রাজ্য। তাজপুর বন্দর তৈরীর জন্য সোমবার গ্লোবাল টেন্ডার ডেকেছে রাজ্য সরকার। এরফলে তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে আরো এক ধাপ এগোল রাজ্য সরকার। বন্দর নির্মাণের জন্য দরপত্র চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেওয়া যাবে।

১৬ হাজার কোটি টাকার গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এতে প্রত্যক্ষভাবে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রথম পর্যায়ে ৬টি বার্থ ও পরের পর্যায়ে আরো ৯ টি বার্থ তৈরি হবে এই বন্দরে। ৯৯ বছরের লিজ দেওয়া হবে। এই বন্দর এর সঙ্গে নিকটতম জাতীয় সড়ক এবং রেলপথের যোগাযোগের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। ৩৫০ মিটার প্রস্থ এবং প্রায় ১৬ মিটার নাব্যতা থাকায় তাজপুর একটি গভীর সমুদ্র বন্দর হিসেবে কাজ করতে পারবে। 

আরও পড়ুন: তাজপুর বন্দর: আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে শীঘ্রই চুক্তির সম্ভাবনা রাজ্যের

২০১৯ সালে এই বন্দর তৈরীর কথা প্রথম বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাজপুর বন্দর এর সাইটের উদ্বোধন করেছিলেন। তখন ঠিক হয়েছিল কেন্দ্র এবং রাজ্য যৌথ উদ্যোগে এই বন্দর তৈরি করবে। এমনকি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিজেদের অধিকাংশ শেয়ারও কেন্দ্রকে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানায় শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের শেষ দিকে রাজ্য নিজেই এই বন্দর তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য তাজপুর ছাড়াও আরও দুটি  প্রস্তাবিত জায়গার নাম নবান্নে পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে একটি দাদনপাত্রবাড় এবং অপরটি কাঁথির শৌলা সংলগ্ন এলাকা। যদিও নবান্ন, তাজপুরের সাইটটিকে প্রস্তাবিত বন্দরের জন্য চূড়ান্ত করে। এই বন্দর আগামী দিনে উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে হয়ে উঠবে বলে প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি। 

আরও পড়ুন: আগেই উদ্বোধন হয়েছে ক্যানসার হাসপাতালের, প্রধানমন্ত্রীকে আর কি কি শোনালেন মমতা

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পলি পড়ে যাওয়ার কারণে হলদিয়া বন্দরে বড় জাহাজ ঢুকতে পারছে না। এর জন্য মাঝ সমুদ্রে ‘শিপ টু শিপ’ ট্রান্সলোডিং করতে হচ্ছে। ফলে খরচ বাড়ছে। কিন্তু গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হলে তাজপুরে সরাসরি বড় জাহাজ ঢুকে যাবে। ট্রান্সলোডিং এর হয়রানি থাকবে না। তাতে অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয় হবে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে প্রতিবছর ৫-৬ হাজার কোটি টাকার মাছ ও চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি হয়। তাজপুরে বন্দর হলে মাছ ও চিংড়ি রপ্তানিতে অনেক সুবিধা হবে। বীরভূমের পাচামি থেকে কয়লা অনায়াসে তাজপুর বন্দর দিয়ে বাইরে পাঠানো যাবে। এছাড়া আকরিক লোহা পেট্রোপণ্য প্রভৃতি নানাবিধ জিনিসপত্র তাজপুর বন্দর থেকেই নানা দেশে আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর নাব্যতার সমস্যায় ভুগছে। তাই বড় জাহাজ গুলি ঢুকতে পারছে না। 

আরও পড়ুন: থমকে যাওয়া রেল পথ সম্প্রসারনের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি সুন্দরবনবাসীর, বরাদ্দ ১ টাকা!

তাজপুর বন্দর প্রকল্প টি রূপায়িত হলে ভবিষ্যতে পূর্ব মেদিনীপুরের আর্থসামাজিক চেহারাই বদলে যাবে। বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সম্প্রতি জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বেশ কয়েকবার তাজপুর সমুদ্র বন্দরের প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন। রাজ্য থেকেও বিশেষজ্ঞ টিম গিয়ে একাধিকবার ওই এলাকা ঘুরে দেখেছে। উপকূল থেকে কয়েক কিমি গভীরে গড়ে উঠেছে বন্দর। এর মাঝে তৈরি হবে সেতু। সেখান থেকে মালপত্র সড়ক ও রেলপথে নানা প্রান্তে রওনা দেবে।

তাজপুর গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের গ্লোবাল টেন্ডারের খবরে রামনগর, কাঁথি,এগরা সহ সমগ্র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে খুশীর হাওয়া। স্হানীয় বিধায়ক তথা মৎস্য মন্ত্রী অখিল গিরি, প্রাক্তন সহকারী সভাধিপতি মামুদ হোসেন, জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।