২৫ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বর্ধমানের ভাতার থেকে সংখ্যালঘু ভাইদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি মমতার

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার
  • / 1

এস জে আব্বাস, পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী কীর্তি আজাদ ও বর্ধমান-পূর্বের প্রার্থী ডাক্তার শর্মিলা সরকারের সমর্থনে মঙ্গলবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নির্বাচনী সভায় উপস্থিত হন। সেখান থেকে তিনি তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে জেলাবাসী কে তৃণমূলের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

 

তিনি বলেন, কালনা থেকে একটা ব্রিজ করে দিচ্ছি প্রায় দু হাজার কোটি টাকা দিয়ে, যেটা শান্তিপুরে গিয়ে মিশবে। দেউচা পাঁচামি তে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লার খনি তৈরি হচ্ছে এবং সেখানে ১ লক্ষ লোকের কাজ হবে। তাছাড়া, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে  দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের আলাদা একটা রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।

 

বন্যায় মানুষের সমস্যা আটকাতে দামোদরের নিম্ন অববাহিকায় তিন হাজার কোটি ব্যয়ে প্রকল্প করা হচ্ছে। দুর্গাপুর অন্ডালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ স্থাপন, সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষাণ মান্ডি থেকে শুরু করে মাটি তীর্থ সহ নানা কাজের কথা তিনি জনসভায় মানুষদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন।

তিনি বলেন,এই ইলেকশনটা রাজ্য সরকারের নয়, মনে রাখবেন এই ইলেকশনটা হচ্ছে দিল্লির। তিনি বিজেপির দিকে কটাক্ষ করে বলেন, দিল্লির কেউ কেউ বলছে, মমতা ব্যানার্জি কৈফিয়ত দাও তুমি কি করেছো? এর উত্তরে তিনি বলেন, আরে মমতা ব্যানার্জি তো কৈফিয়ত দেবে , যখন বিধানসভা নির্বাচন হবে। কৈফিয়ত একবার কেন হাজার বার দেবো। মমতা ব্যানার্জি কী করেছে যদি বলতে হয়, তাহলে একটা রামায়ণ, একটা কোরআন ,একটা মহাভারত একটা বাইবেলের কাহিনী শেষ হয়ে যাবে। আগে তোমরা বলো, তোমরা কী করেছ?

এই সূত্রেই তিনি বিভেদের ইঙ্গিত করে বলেন, হ্যাঁ তোমরা করেছো, “তোমরা-আমরা”। বিজেপি না করলেই বলছো, খেতে দেওয়া হবে না। অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে। এনআরসি করা হবে। ক্যা করা হবে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড করা হবে। সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর প্রত্যেকদিন সকালবেলায় “প্রচার বাবু”র মুখ।

 

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রচার বাবু বলে কটাক্ষ করেন। তৃণমূল নেত্রী আরো বলেন, শুনুন কে কী খাবে, কে কী পরবে, কে কী ভাষায় কথা বলবে, কোনটা কার ধর্ম, কে কোন ধর্ম পালন করবে – সেটা সম্পূর্ণ তার নিজস্ব অধিকার। আমাদের সংবিধান আমাদের সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। আজও দেশের সংবিধান ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়নি। অতএব, সকলকে তিনি সতর্ক হওয়ার কথা বলেন। তিনি নাম না করে দিলীপ ঘোষের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে বলুন তো, যে মানুষটা বিজেপির হয়ে এখানে দাঁড়িয়েছেন, তার মুখের ভাষা শুনেছেন? তিনি সবসময় বলেন, পেটান মারুন , জ্বালান …।

ভোট কাটাকাটি চক্রান্তের প্রসঙ্গে বলেন, বিজেপির দুটো চোখ বাংলায়। একটা চোখ কংগ্রেস, আর একটা চোখ হচ্ছে সিপিএম। কী করে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করা যায়, নানা রকম কায়দা চলে।

তিনি বিনা পয়সায় রেশন দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র সরকার সবাইকে রেশন দেওয়ার বিরূদ্ধে। এর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এটা আমি করতে পারি? একজনকে দেবো ,সে ডাল ভাত খাবে। আর একজন তার বাড়ির সামনে না খেয়ে থাকবে! ৩০ হাজার কোটি টাকা আমরা দিয়েছি বলেই আজ প্রত্যেকটা লোক বিনা পয়সায় রেশন পান। এটা মোদি বাবু করেননি।

১০০ দিনের কাজের টাকা আটকানো ও আবাস যোজনা টাকা বন্ধের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ভোটটা ওদের দেবেন কেন? কেন্দ্রের যা যা দায়িত্ব ছিল, তারা একটাও পালন করেছে কি ? ১০০ দিনের কাজের টাকা আমরা দিলাম ৫৯ লক্ষ কর্মচারীকে এবং তাদের জন্য “কর্মশ্রী” প্রকল্প করলাম, যাতে আমরা ৫০ দিনের কাজ জবকার্ড ধারী দের দিতে পারি।

আমরা ৪৩ লক্ষ লোককে বাড়ি করে দিয়েছি। আরও আমাদের কাছে ১১ লক্ষ লিস্ট ছিল। আমরা অনেক স্কুটনি করে আসল গরিব লোকেরা যাতে পায়, একটা লিস্ট তৈরি করলাম। সাড়ে তিনশো টিম বাংলায় এল। সব দেখলো। বলল, ঠিক হে কয়ি বাত নেহি হে। হাম রুপিয়া দে দেঙ্গে। আজও দিয়েছে? মনে রাখবেন, যে ১১ লক্ষের লিস্ট আছে, আমরা ডিসেম্বর মাসে তাদের প্রথম কিস্তি দিয়ে দেবো ষাট হাজার টাকা।

প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধার্থে কৃষক বন্ধু জমির পরিমাণ নিয়ে কেন্দ্র সরকার কে কটাক্ষ করে বলেন,এক কাঠা জমি আছে যার, তাকেও তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়। আর এক একর জমি থাকলে সে ১০ হাজার টাকা পায়। আর প্রচার বাবুদের পাঁচ একর জমি থাকলে তবেই আপনি ওদের একটু সাহায্য পাবেন।সবার কি পাঁচ একর আছে?

 

বিজেপির নেতাদের ভোট চাওয়া প্রসঙ্গে বলেন , ভোট চাইছেন। ওদের জিজ্ঞেস করুন। কত লোককে চাকরি দিয়েছেন? ২ কোটি বেকারকে চাকরি দেবেন বলেছিলেন, একটা লোককেও চাকরি দেননি। আজকে ভারতবর্ষে বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।আর আমরা বাংলায় যখন চাকরি দিই ,আপনারা কোর্টকে দিয়ে চাকরিগুলি খেয়ে নেন। এ প্রসঙ্গে তিনি কিছু ভুল থাকলে দেখিয়ে দিলে তা সংশোধন করে দেওয়ার চেষ্টার কথা বলেন। তা না করে , রায় দিয়ে ছাব্বিশ হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি খেয়ে নিলেন!

 

আর এক মাসের মধ্যে আট বছরের মাইনে সুদ সহ ফেরত দিতে হবে! বলে দিলেন।পারবেন?(ফেরত দিতে)। আর যদি কোনো ছেলে মেয়ে আত্মহত্যা করে তার দায়িত্ব আপনারা নেবেন? আমি সেই জন্য বলছি, চিন্তা করবেন না। আমরা আমাদের সাধ্যমত আমরা কেসটা লড়বো। তাছাড়া তিনি এই রায়ের ফলে স্কুল গুলির পরিকাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় বলেন, যারা স্কুলে পড়ে তারা কোথায় যাবে? স্কুলগুলোতে মাস্টার কোথা থেকে আসবে? স্কুলের বাচ্চারা গিয়ে বসে থাকবে? ওখানে বিজেপির লোকেরা গিয়ে পড়াবে! না আরএসএস পড়াবে!

তিনি নাম না করে (শুভেন্দু অধিকারী!) র পাল্টি খাওয়া প্রসঙ্গে বলেন , বিজেপিতে গিয়ে চালাকি করছিস। কেন প্রচুর টাকা করেছিস বলে! পাছে সিবিআই ধরে! পাছে ইডি ধরে! পাছে এন আই এ ধরে! এ প্রসঙ্গে তিনি ই ডি – সি বি আই অফিসারদের (!) অক্ষমতা প্রসঙ্গে বলেন, লোকগুলো ভয় পাই বলে প্রবলেম। না হলে তো কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়তো! সেদিন পুরুলিয়ায় চাকরি কে বিক্রি করে দিয়েছিল? নামটা আমি বলবো না। আপনারা খুঁজে নিন। কত লোকের বিনিময়ে কত কি করেছো? যারা দিয়েছে টাকা, তারা ভয়ে মুখ খুলে না। সবচেয়ে বড় কুকর্মটা করেছে, সে কার নাম – বড় গাদ্দার। কোর্ট কী রায় দেবে, তুই জানলি কি করে? তুই দুইদিন আগে বলে দিলি, বোমা ফাটাবো। এতগুলো বাচ্চার জীবন কেড়ে নিয়ে তুই নাচছিস্। নেচে নেচে বেড়া। একদিন মানুষ ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে বলবে, “শুকনো গাঙ্গে আসুক জীবনের বন্যা।”

তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে আহবান জানান , এই সরকারকে ভেঙে দিন ভোটের মাধ্যমে । এরা বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা করে একাউন্টে দেবে। দিয়েছে? পঞ্চাশ হাজার দিয়েছে?

কেন ভোট দেবেন? মিথ্যা কথা বলে যারা তাদের একটা ভোটও নয়। মা বোনেরা বেঁধে জোট/ জোড়া ফুলে ভোট। এনআরসির বিরুদ্ধে বেঁধে জোট /জোড়া ফুলে সব ভোট – বলে স্লোগান দেন।

তিনি বিজেপির লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, আবার কত বড় সাহস! কদিন আগে বলল, তিন মাস বাদে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেব। একটা লক্ষ্মীর ভান্ডারে হাত ছুঁয়ে দেখা!সাহস থাকলে হাত ছুঁয়ে দেখা। ওটা মায়ের সম্মান, কেড়ে নিতে দেব না। যতদিন বাঁচবেন, ততদিন পাবেন।

তিনি সকলের উদ্দ্যেশে আরো বলেন, মানুষের মতো মানুষ তৈরি করুন। কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা যারা কৃষি কাজ করেন, মনে রাখবেন এটাও একটা গর্বের কাজ। শস্য না পড়লে কেউ দুটো খেয়ে থাকতে পারতো না।

তিনি বিজেপির ধর্মীয় উন্মাদনা, ইতিহাস মুছে ফেলার চক্রান্তের বিরুদ্ধে বলেন,এরা আর মা দুর্গার কথা বলে না, মা কালীর কথা বলেনা, সরস্বতীর কথা বলে। না মহাত্মা গান্ধীর কথা বলে, না ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম সব কা সুমতি দে দো ভগবানের কথা বলেনা। না নেতাজি, না গান্ধীজী, না আম্বেদকার, না মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, না বিরসা মুন্ডা,না রঘুনাথ মুরমু ,না পঞ্চানন বর্মা, না হরিচাঁদ ঠাকুর কারো কথা বলে না। শুধু নিজের কথা বলে । সারা পৃথিবী আজকে ধিক্কার দিচ্ছে।

আর কেউ প্রতিবাদ করলেই হয় সিবিআই পাঠিয়ে দিচ্ছে, নয় এনআইএ পাঠিয়ে দিচ্ছে, আর তা না হলেই ই ডি পাঠিয়ে দিচ্ছে।
আর ওদের বড় বন্ধু বসে আছে আর একটা লাল বাড়িতে। সেই বন্ধুদের দিয়ে লিখিয়ে দিচ্ছে, বলো উনি গ্রেফতার, বলো ওনাকে সিবিআই ডাকবে। একজন পুলিশ কর্মী মারা গিয়েছিল। তার বউ এফআইআর করেছিল গাদ্দারের নামে। কোর্ট থেকে অর্ডার নিয়ে এল ওর বিরূদ্ধে নাকি এফ আই আর করা যাবে না!

কদিন এভাবে চলবে? তোমাদের বিদায়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে। দেশের মানুষ ভয়ে ভয়ে আছে। মুখ ফুটছে না,কিন্তু ভোট ফুটছে। বরং এই ভোটের মাধ্যমে বিজেপিকে বিদায় দেবার জন্য এবার দেশের মানুষ তৈরি।

তিনি পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর অভয় দিয়ে বলেন, যারা তফসিলি নমঃশূদ্র, মনে রাখবেন আপনারা অনেক সম্মানীয় মানুষ । আপনাদের আমি সম্মান করি। সংখ্যালঘু ভাইবোনেরা ভয় পাবেন না। মনে রাখবেন, আমি থাকতে আপনাদের গায়ে হাত দেবার ক্ষমতা কারও নেই।আপনাদের জীবন নিরাপত্তা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

 

আদিবাসী ভাই বোনেদের সারি ও সারনা ধর্মের জন্য আমাদের আন্দোলন চলবে। সকলকে শান্তিতে থাকার ও ভালো থাকার বার্তা দিয়ে সভা শেষে একটি আদিবাসী নৃত্য সংগীতের তালে তালে সভা শেষ হয়। উদ্বেলিত জনতা জয় বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলে সভা। রাজ্যের শান্তিপ্রিয় মানুষদের বারবার অনুরোধ করেন যাতে একটা ভোটও বিজেপিকে না দেওয়া হয়।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বর্ধমানের ভাতার থেকে সংখ্যালঘু ভাইদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি মমতার

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার

এস জে আব্বাস, পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী কীর্তি আজাদ ও বর্ধমান-পূর্বের প্রার্থী ডাক্তার শর্মিলা সরকারের সমর্থনে মঙ্গলবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নির্বাচনী সভায় উপস্থিত হন। সেখান থেকে তিনি তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে জেলাবাসী কে তৃণমূলের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

 

তিনি বলেন, কালনা থেকে একটা ব্রিজ করে দিচ্ছি প্রায় দু হাজার কোটি টাকা দিয়ে, যেটা শান্তিপুরে গিয়ে মিশবে। দেউচা পাঁচামি তে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লার খনি তৈরি হচ্ছে এবং সেখানে ১ লক্ষ লোকের কাজ হবে। তাছাড়া, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে  দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের আলাদা একটা রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।

 

বন্যায় মানুষের সমস্যা আটকাতে দামোদরের নিম্ন অববাহিকায় তিন হাজার কোটি ব্যয়ে প্রকল্প করা হচ্ছে। দুর্গাপুর অন্ডালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ স্থাপন, সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষাণ মান্ডি থেকে শুরু করে মাটি তীর্থ সহ নানা কাজের কথা তিনি জনসভায় মানুষদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন।

তিনি বলেন,এই ইলেকশনটা রাজ্য সরকারের নয়, মনে রাখবেন এই ইলেকশনটা হচ্ছে দিল্লির। তিনি বিজেপির দিকে কটাক্ষ করে বলেন, দিল্লির কেউ কেউ বলছে, মমতা ব্যানার্জি কৈফিয়ত দাও তুমি কি করেছো? এর উত্তরে তিনি বলেন, আরে মমতা ব্যানার্জি তো কৈফিয়ত দেবে , যখন বিধানসভা নির্বাচন হবে। কৈফিয়ত একবার কেন হাজার বার দেবো। মমতা ব্যানার্জি কী করেছে যদি বলতে হয়, তাহলে একটা রামায়ণ, একটা কোরআন ,একটা মহাভারত একটা বাইবেলের কাহিনী শেষ হয়ে যাবে। আগে তোমরা বলো, তোমরা কী করেছ?

এই সূত্রেই তিনি বিভেদের ইঙ্গিত করে বলেন, হ্যাঁ তোমরা করেছো, “তোমরা-আমরা”। বিজেপি না করলেই বলছো, খেতে দেওয়া হবে না। অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে। এনআরসি করা হবে। ক্যা করা হবে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড করা হবে। সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর প্রত্যেকদিন সকালবেলায় “প্রচার বাবু”র মুখ।

 

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রচার বাবু বলে কটাক্ষ করেন। তৃণমূল নেত্রী আরো বলেন, শুনুন কে কী খাবে, কে কী পরবে, কে কী ভাষায় কথা বলবে, কোনটা কার ধর্ম, কে কোন ধর্ম পালন করবে – সেটা সম্পূর্ণ তার নিজস্ব অধিকার। আমাদের সংবিধান আমাদের সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। আজও দেশের সংবিধান ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়নি। অতএব, সকলকে তিনি সতর্ক হওয়ার কথা বলেন। তিনি নাম না করে দিলীপ ঘোষের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে বলুন তো, যে মানুষটা বিজেপির হয়ে এখানে দাঁড়িয়েছেন, তার মুখের ভাষা শুনেছেন? তিনি সবসময় বলেন, পেটান মারুন , জ্বালান …।

ভোট কাটাকাটি চক্রান্তের প্রসঙ্গে বলেন, বিজেপির দুটো চোখ বাংলায়। একটা চোখ কংগ্রেস, আর একটা চোখ হচ্ছে সিপিএম। কী করে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করা যায়, নানা রকম কায়দা চলে।

তিনি বিনা পয়সায় রেশন দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র সরকার সবাইকে রেশন দেওয়ার বিরূদ্ধে। এর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এটা আমি করতে পারি? একজনকে দেবো ,সে ডাল ভাত খাবে। আর একজন তার বাড়ির সামনে না খেয়ে থাকবে! ৩০ হাজার কোটি টাকা আমরা দিয়েছি বলেই আজ প্রত্যেকটা লোক বিনা পয়সায় রেশন পান। এটা মোদি বাবু করেননি।

১০০ দিনের কাজের টাকা আটকানো ও আবাস যোজনা টাকা বন্ধের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ভোটটা ওদের দেবেন কেন? কেন্দ্রের যা যা দায়িত্ব ছিল, তারা একটাও পালন করেছে কি ? ১০০ দিনের কাজের টাকা আমরা দিলাম ৫৯ লক্ষ কর্মচারীকে এবং তাদের জন্য “কর্মশ্রী” প্রকল্প করলাম, যাতে আমরা ৫০ দিনের কাজ জবকার্ড ধারী দের দিতে পারি।

আমরা ৪৩ লক্ষ লোককে বাড়ি করে দিয়েছি। আরও আমাদের কাছে ১১ লক্ষ লিস্ট ছিল। আমরা অনেক স্কুটনি করে আসল গরিব লোকেরা যাতে পায়, একটা লিস্ট তৈরি করলাম। সাড়ে তিনশো টিম বাংলায় এল। সব দেখলো। বলল, ঠিক হে কয়ি বাত নেহি হে। হাম রুপিয়া দে দেঙ্গে। আজও দিয়েছে? মনে রাখবেন, যে ১১ লক্ষের লিস্ট আছে, আমরা ডিসেম্বর মাসে তাদের প্রথম কিস্তি দিয়ে দেবো ষাট হাজার টাকা।

প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধার্থে কৃষক বন্ধু জমির পরিমাণ নিয়ে কেন্দ্র সরকার কে কটাক্ষ করে বলেন,এক কাঠা জমি আছে যার, তাকেও তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়। আর এক একর জমি থাকলে সে ১০ হাজার টাকা পায়। আর প্রচার বাবুদের পাঁচ একর জমি থাকলে তবেই আপনি ওদের একটু সাহায্য পাবেন।সবার কি পাঁচ একর আছে?

 

বিজেপির নেতাদের ভোট চাওয়া প্রসঙ্গে বলেন , ভোট চাইছেন। ওদের জিজ্ঞেস করুন। কত লোককে চাকরি দিয়েছেন? ২ কোটি বেকারকে চাকরি দেবেন বলেছিলেন, একটা লোককেও চাকরি দেননি। আজকে ভারতবর্ষে বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।আর আমরা বাংলায় যখন চাকরি দিই ,আপনারা কোর্টকে দিয়ে চাকরিগুলি খেয়ে নেন। এ প্রসঙ্গে তিনি কিছু ভুল থাকলে দেখিয়ে দিলে তা সংশোধন করে দেওয়ার চেষ্টার কথা বলেন। তা না করে , রায় দিয়ে ছাব্বিশ হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি খেয়ে নিলেন!

 

আর এক মাসের মধ্যে আট বছরের মাইনে সুদ সহ ফেরত দিতে হবে! বলে দিলেন।পারবেন?(ফেরত দিতে)। আর যদি কোনো ছেলে মেয়ে আত্মহত্যা করে তার দায়িত্ব আপনারা নেবেন? আমি সেই জন্য বলছি, চিন্তা করবেন না। আমরা আমাদের সাধ্যমত আমরা কেসটা লড়বো। তাছাড়া তিনি এই রায়ের ফলে স্কুল গুলির পরিকাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় বলেন, যারা স্কুলে পড়ে তারা কোথায় যাবে? স্কুলগুলোতে মাস্টার কোথা থেকে আসবে? স্কুলের বাচ্চারা গিয়ে বসে থাকবে? ওখানে বিজেপির লোকেরা গিয়ে পড়াবে! না আরএসএস পড়াবে!

তিনি নাম না করে (শুভেন্দু অধিকারী!) র পাল্টি খাওয়া প্রসঙ্গে বলেন , বিজেপিতে গিয়ে চালাকি করছিস। কেন প্রচুর টাকা করেছিস বলে! পাছে সিবিআই ধরে! পাছে ইডি ধরে! পাছে এন আই এ ধরে! এ প্রসঙ্গে তিনি ই ডি – সি বি আই অফিসারদের (!) অক্ষমতা প্রসঙ্গে বলেন, লোকগুলো ভয় পাই বলে প্রবলেম। না হলে তো কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়তো! সেদিন পুরুলিয়ায় চাকরি কে বিক্রি করে দিয়েছিল? নামটা আমি বলবো না। আপনারা খুঁজে নিন। কত লোকের বিনিময়ে কত কি করেছো? যারা দিয়েছে টাকা, তারা ভয়ে মুখ খুলে না। সবচেয়ে বড় কুকর্মটা করেছে, সে কার নাম – বড় গাদ্দার। কোর্ট কী রায় দেবে, তুই জানলি কি করে? তুই দুইদিন আগে বলে দিলি, বোমা ফাটাবো। এতগুলো বাচ্চার জীবন কেড়ে নিয়ে তুই নাচছিস্। নেচে নেচে বেড়া। একদিন মানুষ ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে বলবে, “শুকনো গাঙ্গে আসুক জীবনের বন্যা।”

তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে আহবান জানান , এই সরকারকে ভেঙে দিন ভোটের মাধ্যমে । এরা বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা করে একাউন্টে দেবে। দিয়েছে? পঞ্চাশ হাজার দিয়েছে?

কেন ভোট দেবেন? মিথ্যা কথা বলে যারা তাদের একটা ভোটও নয়। মা বোনেরা বেঁধে জোট/ জোড়া ফুলে ভোট। এনআরসির বিরুদ্ধে বেঁধে জোট /জোড়া ফুলে সব ভোট – বলে স্লোগান দেন।

তিনি বিজেপির লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, আবার কত বড় সাহস! কদিন আগে বলল, তিন মাস বাদে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেব। একটা লক্ষ্মীর ভান্ডারে হাত ছুঁয়ে দেখা!সাহস থাকলে হাত ছুঁয়ে দেখা। ওটা মায়ের সম্মান, কেড়ে নিতে দেব না। যতদিন বাঁচবেন, ততদিন পাবেন।

তিনি সকলের উদ্দ্যেশে আরো বলেন, মানুষের মতো মানুষ তৈরি করুন। কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা যারা কৃষি কাজ করেন, মনে রাখবেন এটাও একটা গর্বের কাজ। শস্য না পড়লে কেউ দুটো খেয়ে থাকতে পারতো না।

তিনি বিজেপির ধর্মীয় উন্মাদনা, ইতিহাস মুছে ফেলার চক্রান্তের বিরুদ্ধে বলেন,এরা আর মা দুর্গার কথা বলে না, মা কালীর কথা বলেনা, সরস্বতীর কথা বলে। না মহাত্মা গান্ধীর কথা বলে, না ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম সব কা সুমতি দে দো ভগবানের কথা বলেনা। না নেতাজি, না গান্ধীজী, না আম্বেদকার, না মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, না বিরসা মুন্ডা,না রঘুনাথ মুরমু ,না পঞ্চানন বর্মা, না হরিচাঁদ ঠাকুর কারো কথা বলে না। শুধু নিজের কথা বলে । সারা পৃথিবী আজকে ধিক্কার দিচ্ছে।

আর কেউ প্রতিবাদ করলেই হয় সিবিআই পাঠিয়ে দিচ্ছে, নয় এনআইএ পাঠিয়ে দিচ্ছে, আর তা না হলেই ই ডি পাঠিয়ে দিচ্ছে।
আর ওদের বড় বন্ধু বসে আছে আর একটা লাল বাড়িতে। সেই বন্ধুদের দিয়ে লিখিয়ে দিচ্ছে, বলো উনি গ্রেফতার, বলো ওনাকে সিবিআই ডাকবে। একজন পুলিশ কর্মী মারা গিয়েছিল। তার বউ এফআইআর করেছিল গাদ্দারের নামে। কোর্ট থেকে অর্ডার নিয়ে এল ওর বিরূদ্ধে নাকি এফ আই আর করা যাবে না!

কদিন এভাবে চলবে? তোমাদের বিদায়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে। দেশের মানুষ ভয়ে ভয়ে আছে। মুখ ফুটছে না,কিন্তু ভোট ফুটছে। বরং এই ভোটের মাধ্যমে বিজেপিকে বিদায় দেবার জন্য এবার দেশের মানুষ তৈরি।

তিনি পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর অভয় দিয়ে বলেন, যারা তফসিলি নমঃশূদ্র, মনে রাখবেন আপনারা অনেক সম্মানীয় মানুষ । আপনাদের আমি সম্মান করি। সংখ্যালঘু ভাইবোনেরা ভয় পাবেন না। মনে রাখবেন, আমি থাকতে আপনাদের গায়ে হাত দেবার ক্ষমতা কারও নেই।আপনাদের জীবন নিরাপত্তা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

 

আদিবাসী ভাই বোনেদের সারি ও সারনা ধর্মের জন্য আমাদের আন্দোলন চলবে। সকলকে শান্তিতে থাকার ও ভালো থাকার বার্তা দিয়ে সভা শেষে একটি আদিবাসী নৃত্য সংগীতের তালে তালে সভা শেষ হয়। উদ্বেলিত জনতা জয় বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলে সভা। রাজ্যের শান্তিপ্রিয় মানুষদের বারবার অনুরোধ করেন যাতে একটা ভোটও বিজেপিকে না দেওয়া হয়।