২৯ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আফগান শরণার্থী নারীদের শিক্ষার আলো দেখাচ্ছেন নানসেন পুরস্কার জয়ী চিকিৎসক সালিমা রহমান

পুবের কলম
  • আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার
  • / 32

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ প্রথম আফগান শরণার্থী নারী হিসেবে একজন চিকিৎসক হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সালিমা রহমান। শুধু তিনি নিজেই সাফল্য লাভ করেননি, অন্যান্য শরণার্থী নারীদের আলোয় ফেরার পথ দেখাচ্ছেন ডা. সালিমা রহমান। করোনাকালে অতি দক্ষতার সঙ্গে তিনি তাঁর কাজ করে গিয়েছেন। সালিমা রহমানের এই কৃতিত্বের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা নানসেন পুরস্কার দিয়েছে তাঁকে।

আরও পড়ুন: স্কুলে ফি বৃদ্ধি নিয়ে বিজেপিকে তোপ অতিশীর, অভিভাবকদের ওপর লুটপাট চলচ্ছে নিশানা

আফগান শরণার্থী নারীদের শিক্ষার আলো দেখাচ্ছেন নানসেন পুরস্কার জয়ী চিকিৎসক সালিমা রহমান


সোভিয়েত আগ্রাসন শুরুর পর ১৯৭৯ সালে স্বজনদের হাত ধরে পাকিস্তানে চলে আসেন ১৩ বছরের কিশোর আবদুল। এরপর অন্য আফগান শরণার্থীদের মতো তাঁর জীবনটাও শরনার্থী শিবিরেই আটকা পড়ে যায়। এই ভাবেই বড় হয়ে উঠতে থাকেন আবদুল। এক সময়ে তিনি বিয়ে করেন।
১৯৯১ সালে জন্ম হয় সালিমার। কিন্তু জন্মের সময় মায়ের অবস্থা ক্রমশ জটিল হতে থাকে। হাসপাতালে না নিয়ে গেলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে, এই রকম অবস্থা তৈরি হয়। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে শরনার্থী শিবিরে নামমাত্র চিকিৎসা পরিষেবার মাধ্যমেই জন্ম হয় সালিমার। জন্মের পর সালিমার শরীর খুব দুর্বল থাকে।

আরও পড়ুন: রাজ্যের মাদ্রাসায় চালু হবে হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড, ভাতাও প্রায় দ্বিগুণ


২০ বছর আগে পাকিস্তানে আটক শহরের বারাকাট প্রাথমিক স্কুলে শরণার্থী বালিকা স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে সালিমা।
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হতে থাকে জীবনে কিছু করতে হবে, নিজের কমিউনিটির কথা ভাবতে হবে। সেইভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে থাকেন সালিমা। বাধা আসে সমাজের।

আরও পড়ুন: মণিপুরের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে সমাজকে শিক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিলেন আহমেদ হাসান ইমরান

আফগান শরণার্থী নারীদের শিক্ষার আলো দেখাচ্ছেন নানসেন পুরস্কার জয়ী চিকিৎসক সালিমা রহমান


সালিমার কথায়, ‘আমার স্বপ্ন ছিল, পাকিস্তানে চিকিৎসক হওয়ার পর নিজের কমিউনিটির জন্য বিশেষ কিছু করা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সমাজ। যেমন আমি যে শৈশব থেকে শরণার্থী, এটা আমার মাথায় ছিল না। ফলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে প্রথম ধাক্কা লাগে। কারণ পাকিস্তানের নাগরিকেরা যেভাবে স্কুল শেষ করে কলেজে ভর্তি হতে পারেন, আমি তো তাঁদের চেয়ে আলাদা। জানতে পারলাম, আমার জন্য প্রক্রিয়াটি অন্যদের চেয়ে আলাদা। ফলে আমাকে অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়েছিল। একবার মনে হয়েছিল বোধহয়, পেরে উঠব না। তারপরেও হাল ছাড়িনি।
তাও আবার লড়াই থেমে থাকেনি। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি এসেছিল পাকিস্তানে থাকা আফগান শরণার্থীদের কাছ থেকে। বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠরা মোটেই খুশি ছিলেন না। তাঁদের প্রশ্ন ছিল বাবার কাছে। ‘মেয়েকে এত পড়ানোর কি আছে? বিদেশে এসে আমাদের সব সংস্কৃতি বাদ দেওয়া হল? কিন্তু বাবা আমাকে সাহস জুগিয়ে গেছেন প্রতিনিয়ত।


বাবার অনুপ্রেরণাতেই আমি এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাই। চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করি।


পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক হিসেবে সালিমা রহমান ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কাজ করছেন সেখানে। ওই সময় পাকিস্তানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতালটিতে করোনা ইউনিট চালু হয়। তখন তিনি ছিলেন সেখানকার একমাত্র শরণার্থী চিকিৎসক। সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে তিনি করোনারোগীদের সেবা করেছেন।


হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে শরণার্থী নারীদের চিকিৎসাসেবা দিতে নিজের আলাদা চেম্বারও খুলেছেন সালিমা রহমান। ২০১৫ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়াশোনা শেষ করলেও লাইসেন্স নিতে সময় লেগে যাওয়ায় নিজের চেম্বার খুলতে তাঁকে এ বছরের জুন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে।

আফগান শরণার্থী নারীদের শিক্ষার আলো দেখাচ্ছেন নানসেন পুরস্কার জয়ী চিকিৎসক সালিমা রহমান


সালিমার কথায়, শরণার্থী শিবিরের নারীরা বহু সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পড়াশোনা তো দূর-অস্ত। রয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চাপ। আমি শরণার্থীদের স্কুলে যাই, হাসপাতাল কিংবা চেম্বারে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব বুঝতে পারি। কেউ ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করল, সঙ্গে সঙ্গে পরিবার থেকে বাধা আসে। এইভাবেই ইচ্ছেগুলো শেষ হয়ে যায়।


তবে আমি বলব আমি সৌভাগ্যবান। বাবাকে সব সময় পাশে পেয়েছি। আফগান শরণার্থীদের মধ্যে নারীশিক্ষার বিকাশ ও পাকিস্তানে কোভিড মোকাবিলায় ভূমিকার জন্য নানসেন পুরস্কার বিজয়ী হন সালিমা রহমান।

সালিমার লক্ষ্য, আগামী দিনেও আফগান শরণার্থী নারীদের শিক্ষার প্রসারে আরও কাজ করা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আফগান শরণার্থী নারীদের শিক্ষার আলো দেখাচ্ছেন নানসেন পুরস্কার জয়ী চিকিৎসক সালিমা রহমান

আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ প্রথম আফগান শরণার্থী নারী হিসেবে একজন চিকিৎসক হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সালিমা রহমান। শুধু তিনি নিজেই সাফল্য লাভ করেননি, অন্যান্য শরণার্থী নারীদের আলোয় ফেরার পথ দেখাচ্ছেন ডা. সালিমা রহমান। করোনাকালে অতি দক্ষতার সঙ্গে তিনি তাঁর কাজ করে গিয়েছেন। সালিমা রহমানের এই কৃতিত্বের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা নানসেন পুরস্কার দিয়েছে তাঁকে।

আরও পড়ুন: স্কুলে ফি বৃদ্ধি নিয়ে বিজেপিকে তোপ অতিশীর, অভিভাবকদের ওপর লুটপাট চলচ্ছে নিশানা

আফগান শরণার্থী নারীদের শিক্ষার আলো দেখাচ্ছেন নানসেন পুরস্কার জয়ী চিকিৎসক সালিমা রহমান


সোভিয়েত আগ্রাসন শুরুর পর ১৯৭৯ সালে স্বজনদের হাত ধরে পাকিস্তানে চলে আসেন ১৩ বছরের কিশোর আবদুল। এরপর অন্য আফগান শরণার্থীদের মতো তাঁর জীবনটাও শরনার্থী শিবিরেই আটকা পড়ে যায়। এই ভাবেই বড় হয়ে উঠতে থাকেন আবদুল। এক সময়ে তিনি বিয়ে করেন।
১৯৯১ সালে জন্ম হয় সালিমার। কিন্তু জন্মের সময় মায়ের অবস্থা ক্রমশ জটিল হতে থাকে। হাসপাতালে না নিয়ে গেলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে, এই রকম অবস্থা তৈরি হয়। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে শরনার্থী শিবিরে নামমাত্র চিকিৎসা পরিষেবার মাধ্যমেই জন্ম হয় সালিমার। জন্মের পর সালিমার শরীর খুব দুর্বল থাকে।

আরও পড়ুন: রাজ্যের মাদ্রাসায় চালু হবে হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড, ভাতাও প্রায় দ্বিগুণ


২০ বছর আগে পাকিস্তানে আটক শহরের বারাকাট প্রাথমিক স্কুলে শরণার্থী বালিকা স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে সালিমা।
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হতে থাকে জীবনে কিছু করতে হবে, নিজের কমিউনিটির কথা ভাবতে হবে। সেইভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে থাকেন সালিমা। বাধা আসে সমাজের।

আরও পড়ুন: মণিপুরের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে সমাজকে শিক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিলেন আহমেদ হাসান ইমরান

আফগান শরণার্থী নারীদের শিক্ষার আলো দেখাচ্ছেন নানসেন পুরস্কার জয়ী চিকিৎসক সালিমা রহমান


সালিমার কথায়, ‘আমার স্বপ্ন ছিল, পাকিস্তানে চিকিৎসক হওয়ার পর নিজের কমিউনিটির জন্য বিশেষ কিছু করা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সমাজ। যেমন আমি যে শৈশব থেকে শরণার্থী, এটা আমার মাথায় ছিল না। ফলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে প্রথম ধাক্কা লাগে। কারণ পাকিস্তানের নাগরিকেরা যেভাবে স্কুল শেষ করে কলেজে ভর্তি হতে পারেন, আমি তো তাঁদের চেয়ে আলাদা। জানতে পারলাম, আমার জন্য প্রক্রিয়াটি অন্যদের চেয়ে আলাদা। ফলে আমাকে অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়েছিল। একবার মনে হয়েছিল বোধহয়, পেরে উঠব না। তারপরেও হাল ছাড়িনি।
তাও আবার লড়াই থেমে থাকেনি। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি এসেছিল পাকিস্তানে থাকা আফগান শরণার্থীদের কাছ থেকে। বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠরা মোটেই খুশি ছিলেন না। তাঁদের প্রশ্ন ছিল বাবার কাছে। ‘মেয়েকে এত পড়ানোর কি আছে? বিদেশে এসে আমাদের সব সংস্কৃতি বাদ দেওয়া হল? কিন্তু বাবা আমাকে সাহস জুগিয়ে গেছেন প্রতিনিয়ত।


বাবার অনুপ্রেরণাতেই আমি এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাই। চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করি।


পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক হিসেবে সালিমা রহমান ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কাজ করছেন সেখানে। ওই সময় পাকিস্তানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতালটিতে করোনা ইউনিট চালু হয়। তখন তিনি ছিলেন সেখানকার একমাত্র শরণার্থী চিকিৎসক। সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে তিনি করোনারোগীদের সেবা করেছেন।


হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে শরণার্থী নারীদের চিকিৎসাসেবা দিতে নিজের আলাদা চেম্বারও খুলেছেন সালিমা রহমান। ২০১৫ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়াশোনা শেষ করলেও লাইসেন্স নিতে সময় লেগে যাওয়ায় নিজের চেম্বার খুলতে তাঁকে এ বছরের জুন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে।

আফগান শরণার্থী নারীদের শিক্ষার আলো দেখাচ্ছেন নানসেন পুরস্কার জয়ী চিকিৎসক সালিমা রহমান


সালিমার কথায়, শরণার্থী শিবিরের নারীরা বহু সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পড়াশোনা তো দূর-অস্ত। রয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চাপ। আমি শরণার্থীদের স্কুলে যাই, হাসপাতাল কিংবা চেম্বারে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব বুঝতে পারি। কেউ ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করল, সঙ্গে সঙ্গে পরিবার থেকে বাধা আসে। এইভাবেই ইচ্ছেগুলো শেষ হয়ে যায়।


তবে আমি বলব আমি সৌভাগ্যবান। বাবাকে সব সময় পাশে পেয়েছি। আফগান শরণার্থীদের মধ্যে নারীশিক্ষার বিকাশ ও পাকিস্তানে কোভিড মোকাবিলায় ভূমিকার জন্য নানসেন পুরস্কার বিজয়ী হন সালিমা রহমান।

সালিমার লক্ষ্য, আগামী দিনেও আফগান শরণার্থী নারীদের শিক্ষার প্রসারে আরও কাজ করা।