ট্রাম্পের কাছে এবার অপমানিত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট
- আপডেট : ২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 266
পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর, বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনেতাই হয়তো বুঝতে শুরু করেছেন; ওভাল অফিসে আমন্ত্রণ পাওয়া মানেই সম্মানজনক কিছু নয়। বরং, সেখানে গেলেই লুকিয়ে থাকে একপ্রকার ‘প্রকাশ্যে অপমান’-এর সম্ভাবনা। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সাম্প্রতিক হোয়াইট হাউস সফর যেন তারই এক জীবন্ত উদাহরণ।
বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে রামাফোসা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক মজবুত করতে চেয়েছিলেন। শান্তিপূর্ণ আলোচনার আশায় এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু হলেও তা আচমকা বিতর্কে রূপ নেয়। ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘শ্বেতাঙ্গ চাষিদের ওপর গণহত্যা’র মিথ্যা অভিযোগ তুলে চাপ তৈরি করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক, যিনি নিজেও দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম। তবে তিনি পুরো সময় নীরব দর্শক ছিলেন।
বৈঠক চলাকালীন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ট্রাম্পকে কীভাবে বোঝানো সম্ভব যে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ভিত্তিহীন? রামাফোসা তখন বলেন, ‘এ বিষয়ে জানার জন্য ওকে আমাদের দেশের মানুষের কথা শুনতে হবে।’ তখনই ট্রাম্প হঠাৎ বলে ওঠেন, ‘লাইট বন্ধ করো, টিভি চালাও।’
তারপর একের পর এক ভিডিয়ো এবং খবরের কাটিং সামনে আনেন ট্রাম্প, যার মূল বার্তা: দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের উপর নিপীড়ন হচ্ছে। ভিডিয়োতে ‘শুট দ্য বুর’ গান শোনানো হয়, যা বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের সময়ে গাওয়া হতো। অথচ ট্রাম্প এটিকে শ্বেতাঙ্গ বিদ্বেষের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, অনেক শ্বেতাঙ্গ কৃষককেই তিনি আমেরিকায় ‘শরণার্থী’ হিসেবে জায়গা দিয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প রামাফোসাকে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করলেও উলটো দিক থেকে কোনও প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া মেলেনি। রামাফোসা বরং, তিনি শান্ত ও সংযত থেকে কথা বলেন। আলোচনায় নিজের সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন দুই বিখ্যাত শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান গলফার, এর্নি এলস ও রেটিফ গুসেন এবং কৃষিমন্ত্রী, যিনি নিজেই একজন বিরোধী দলের সদস্য। এদের উপস্থিতি যেন রামাফোসার চারপাশে একটা কূটনৈতিক ‘সেফ জোন’ তৈরি করে। রামাফোসা বলেন, ‘যদি সত্যিই দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের গণহত্যা চলত, তবে এই তিনজন আজ এখানে থাকতেন না।’
বুধবারের এই বৈঠকটি ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে হঠাৎ আক্রমণের মাধ্যমে ট্রাম্প যেভাবে হতচকিত করে দিয়েছিলেন তার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ওভাল অফিসের এই নাটকীয়তা যতটা না রামাফোসার উদ্দেশে, তার চেয়েও বেশি মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে কেন্দ্র করে। ট্রাম্প জানেন, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ মিশনের অন্যতম মূলমন্ত্র হলো জনগণের ক্ষোভ ও অভিযোগকে চাঙ্গা রাখা। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানেন যে তার সমর্থকরা কী দেখতে চায়। তবে বিদেশি নেতারা এখন যে ট্রাম্পের এই ‘অফিস কূটনীতি’ কীভাবে সামলাতে হয়, তা শিখে গেছেন, সেটাও বেশ স্পষ্ট। হয়তো তাই ভবিষ্যতে ট্রাম্পকে তার চিরচেনা কৌশল পাল্টাতে হবে; তা না হলে দর্শকরা আগ্রহ হারাতে পারে।