১৯ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহাকাশেরও নিজস্ব সুর রয়েছে! ব্রহ্মাণ্ডের সেই `শব্দ` শুনলেন বিজ্ঞানীরা

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৩০ জুন ২০২৩, শুক্রবার
  • / 149

পুবের কলম,ওয়েব ডেস্ক:পৃথিবীতে বড় কোলাহল। তবে একবার স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার পেরতে পারলেই নিকষ কালো মহাশূন্য এবং তার অখণ্ড নীরবতা। একটু ভুল হল, একেবারে নীরব কিন্তু নয় এই ব্রহ্মাণ্ড । বহু বছর ধরেই বিজ্ঞানীদের অনুমান ছিল, ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে মহাকর্ষজ তরঙ্গ । বৃহস্পতিবার সেই অনুমান সত্যে পরিণত হল। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই তরঙ্গই সৃষ্টি করছে শব্দের, অনেকটা যেন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতো। এ যেন ব্রহ্মাণ্ডের ব্রহ্মসঙ্গীত। 

উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, চীন, ভারতের শয়ে শয়ে বিজ্ঞানীরা রেডিও টেলিস্কোপের সাহায্যে বহু বছরের সাধনায় এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে জানতে এই আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। 

মহাকর্ষজ তরঙ্গের অস্তিত্ব ১০০ বছরেরও আগে অনুমান করেছিলেন কিংবদন্তি বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন । এই তরঙ্গ মহাশূন্যে আলোর গতিবেগে ভেসে বেড়ায়, সামনে যা-ই আসুক তাকে ভেদ করে চলে যায়, বাধাপ্রাপ্ত হয় না বললেই চলে। ২০১৫ সালের আগে মহাকর্ষজ তরঙ্গের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চয়তা ছিল না। সে বছর দুটি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষে সৃষ্টি হওয়া মহাকর্ষজ তরঙ্গের অস্তিত্ব টের পায় আমেরিকা এবং ইতালির অবজারভেটরি। সেটাই প্রথম। মহা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা থেকে সৃষ্টি হওয়া উচ্চ কম্পাঙ্কের  তরঙ্গ পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা দশকের পর দশক যার খোঁজে ছিলেন তা হল নিম্ন কম্পাঙ্কের মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, যা মহাশূন্যে অনবরত ভেসে চলেছে এবং নেপথ্য শব্দের সৃষ্টি করছে বলা মনে করা হত। ইন্টারন্যাশনাল পালসার টাইমিং অ্যারে নামক এক সংস্থার ব্যানারে দেশবিদেশের বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ খোঁজার চেষ্টায় ব্রতী ছিলেন। অবশেষে তার খোঁজ পেলেন তাঁরা। ইউরোপিয়ান পালসার টাইমিং অ্যারের মাইকেল কিথ বলছেন, “এবার আমরা জানি যে ব্রহ্মাণ্ড মহাকর্ষজ তরঙ্গে প্লাবিত।”

কোথা থেকে আসছে এইসব তরঙ্গ? এক নম্বর তত্ত্ব বলছে, নক্ষত্রপুঞ্জের মাঝে থাকা দুই কৃষ্ণগহ্বরের  সংঘর্ষে সৃষ্টি হচ্ছে এরা। তবে এর আগে আবিষ্কৃত হওয়া তরঙ্গের ‘সৃষ্টিকর্তা’ কৃষ্ণগহ্বরের থেকে কল্পনার অতীত বড় এবারের কৃষ্ণগহ্বর। এমনকী সূর্যের থেকে কোটি কোটি গুণ বড় হতে পারে। কিথ বলছেন, এই দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরের থেকে যে ধ্বনি ভেসে আসছে তা অনেকটা একটা রেস্তরাঁয় বসে সবার কথা কানে আসার মতো। 

আর এক তত্ত্ব বলছে, সৃষ্টির আদিতে হওয়া মহা বিস্ফোরণের পর হওয়া দ্রুত সম্প্রসারণের কারণে সৃষ্টি হতে পারে এই অভিকর্ষজ তরঙ্গ। যাইহোক, ভবিষ্যতে এই ধরনের নিম্ন কম্পাঙ্কের অভিকর্ষীয় তরঙ্গ সেই আদি সম্প্রসারণের ব্যাপারে আলোকপাত করতে পারে। এমনকী হদিশ দিতে পারে ডার্ক ম্যাটার রহস্যের।     

Tag :

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মহাকাশেরও নিজস্ব সুর রয়েছে! ব্রহ্মাণ্ডের সেই `শব্দ` শুনলেন বিজ্ঞানীরা

আপডেট : ৩০ জুন ২০২৩, শুক্রবার

পুবের কলম,ওয়েব ডেস্ক:পৃথিবীতে বড় কোলাহল। তবে একবার স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার পেরতে পারলেই নিকষ কালো মহাশূন্য এবং তার অখণ্ড নীরবতা। একটু ভুল হল, একেবারে নীরব কিন্তু নয় এই ব্রহ্মাণ্ড । বহু বছর ধরেই বিজ্ঞানীদের অনুমান ছিল, ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে মহাকর্ষজ তরঙ্গ । বৃহস্পতিবার সেই অনুমান সত্যে পরিণত হল। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই তরঙ্গই সৃষ্টি করছে শব্দের, অনেকটা যেন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতো। এ যেন ব্রহ্মাণ্ডের ব্রহ্মসঙ্গীত। 

উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, চীন, ভারতের শয়ে শয়ে বিজ্ঞানীরা রেডিও টেলিস্কোপের সাহায্যে বহু বছরের সাধনায় এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে জানতে এই আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। 

মহাকর্ষজ তরঙ্গের অস্তিত্ব ১০০ বছরেরও আগে অনুমান করেছিলেন কিংবদন্তি বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন । এই তরঙ্গ মহাশূন্যে আলোর গতিবেগে ভেসে বেড়ায়, সামনে যা-ই আসুক তাকে ভেদ করে চলে যায়, বাধাপ্রাপ্ত হয় না বললেই চলে। ২০১৫ সালের আগে মহাকর্ষজ তরঙ্গের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চয়তা ছিল না। সে বছর দুটি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষে সৃষ্টি হওয়া মহাকর্ষজ তরঙ্গের অস্তিত্ব টের পায় আমেরিকা এবং ইতালির অবজারভেটরি। সেটাই প্রথম। মহা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা থেকে সৃষ্টি হওয়া উচ্চ কম্পাঙ্কের  তরঙ্গ পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা দশকের পর দশক যার খোঁজে ছিলেন তা হল নিম্ন কম্পাঙ্কের মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, যা মহাশূন্যে অনবরত ভেসে চলেছে এবং নেপথ্য শব্দের সৃষ্টি করছে বলা মনে করা হত। ইন্টারন্যাশনাল পালসার টাইমিং অ্যারে নামক এক সংস্থার ব্যানারে দেশবিদেশের বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ খোঁজার চেষ্টায় ব্রতী ছিলেন। অবশেষে তার খোঁজ পেলেন তাঁরা। ইউরোপিয়ান পালসার টাইমিং অ্যারের মাইকেল কিথ বলছেন, “এবার আমরা জানি যে ব্রহ্মাণ্ড মহাকর্ষজ তরঙ্গে প্লাবিত।”

কোথা থেকে আসছে এইসব তরঙ্গ? এক নম্বর তত্ত্ব বলছে, নক্ষত্রপুঞ্জের মাঝে থাকা দুই কৃষ্ণগহ্বরের  সংঘর্ষে সৃষ্টি হচ্ছে এরা। তবে এর আগে আবিষ্কৃত হওয়া তরঙ্গের ‘সৃষ্টিকর্তা’ কৃষ্ণগহ্বরের থেকে কল্পনার অতীত বড় এবারের কৃষ্ণগহ্বর। এমনকী সূর্যের থেকে কোটি কোটি গুণ বড় হতে পারে। কিথ বলছেন, এই দৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরের থেকে যে ধ্বনি ভেসে আসছে তা অনেকটা একটা রেস্তরাঁয় বসে সবার কথা কানে আসার মতো। 

আর এক তত্ত্ব বলছে, সৃষ্টির আদিতে হওয়া মহা বিস্ফোরণের পর হওয়া দ্রুত সম্প্রসারণের কারণে সৃষ্টি হতে পারে এই অভিকর্ষজ তরঙ্গ। যাইহোক, ভবিষ্যতে এই ধরনের নিম্ন কম্পাঙ্কের অভিকর্ষীয় তরঙ্গ সেই আদি সম্প্রসারণের ব্যাপারে আলোকপাত করতে পারে। এমনকী হদিশ দিতে পারে ডার্ক ম্যাটার রহস্যের।