বিহারে তালিকায় বিদেশি নেই, সুপ্রিম কোর্টে জানালো কমিশন

- আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, বুধবার
- / 42
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: নির্বাচন কমিশন বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধন নিয়ে জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৫২ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। এদের মধ্যে ১৮ লক্ষ মৃত, ২৬ লক্ষ ভিন্ন নির্বাচনকেন্দ্রে উঠে গিয়েছে। আর ৮ লক্ষ ভোটারের নাম একাধিক কেন্দ্রের তালিকায় ছিল। তবে কতজন বিদেশিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে, তার উল্লেখ করে নি কমিশন।
এমন কি সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতেও ২১ জুলাই কমিশন যে হলফনামা পেশ করেছে তাতেও বিদেশি চিহ্নিত করার কথা বলা হয় নি। অথচ বিদেশি বিদেশি বলে হইচই ফেলে দিয়ে ছিল বিজেপি। সুপ্রিম কোর্টে ২৮ জুলাই ফের শুনানি হবে। গত ২৪ জুন বিহারে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের কথা জানানো হয়। গত ৩০ মে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বলেছিলেন, কমিশন সব দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্বতন্ত্র ভাবে কথা বলা ছাড়াও অন্তত চার হাজার বার পরামর্শ করেছে।
কমিশন ২১ রকম সংস্কার করতে চায়। কিন্তু তখন এত কথা বলেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, অথচ বিহারে ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধনের কথা বলেননি। তার মানে কি কমিশনও এই বিশেষ উদ্যোগের কথা জানত না? এই প্রশ্ন উঠছে। এটা রহস্যজনক যে, ২৪ জুন বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের কথা ঘোষণার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আবেদনপত্র ছাপা হয়ে গেল। হাজার দশেক বুথভিত্তিক অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে গেল। ৪ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবককে নিয়োগ করা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে গেল। রাজনৈতিক দলগুলির বুথস্তরের প্রতিনিধিদেরও জানানো হয়ে গেল। তাহলে কি কমিশন সব আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিল? সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে এই সব অকথিত অংশ প্রকাশ হয়ে পড়বে।
ভোটার তালিকায় সংশোধন সবসময়ই হয়। তার মধ্যে অভিনবত্ব কিছু নেই। নতুন ভোটারের নাম অন্তর্ভুক্ত করা বা মৃতদের নাম বাদ দেওয়াও চলমান প্রক্রিয়া। এবছরেরই জানুয়ারিতে ভোটার তালিকা একবার সংশোধিত হয়েছিল বিহারে। তার ৬ মাসের মধ্যে হঠাৎ বিশেষ সংশোধনের প্রয়োজন পড়ল কেন তা বোঝা দুষ্কর।
নির্বাচন কমিশনের আইনে সংক্ষিপ্ত সংশোধন এবং নিবিড় সংশোধনের কথা বলা আছে। কিন্তু বিশেষ নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধনের কথা বলা নেই। প্রথম এই শব্দবন্ধনী ব্যবহার করল। আর তা শুরু হল বিহার দিয়েই। কমিশনের মুক্ত এবং অবাধ নির্বাচন পরিচালনার প্রশ্নে কোনও রাজনৈতিক দলই এপর্যন্ত আপত্তি করেনি। প্রতি বছরই তো কমিশন তালিকা সংশোধন করে।
এই প্রথম কমিশন ভোটদাতাদের নাগরিকত্ব যাচাই করার কাজে নামল। কারও নাগরিকত্ব রয়েছে কি নেই তা স্থির করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীরা তা স্পষ্ট ভাবেই বলেছেন। ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে কমিশন যে হলফনামা পেশ করেছে তাতে বলেছে, প্রকৃত নাগরিকদেরই একমাত্র ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তাই ভোটার তালিকা সংশোধনের সময়, কোনও ভোটদাতার নাগরিকত্ব যাচাইয়ের অধিকার রয়েছে কমিশনের।
২০০৩ সালে বিহারে জোরদার ভোটার তালিকা সংশোধনের অভিযান চালানো হয়েছিল। তখনও কিন্তু ভোটারদের নাগরিকত্ব যাচাই করেনি কমিশন। এখন যেভাবে আবেদনপত্র পূরণ করতে হচ্ছে তখন তা করতে হয়নি। সেদিক থেকে এখন যেটা চলছে তা ব্যতিক্রমী প্রক্রিয়া। কমিশন ২০০৩ সালকে কাটমার্ক বছর বা ভিত্তি বছর হিসেবে ধরছে কীসের ভিত্তিতে? তার মানে কি ২০০৩ সালের প্রক্রিয়া ক্রুটিমুক্ত ছিল বলে স্বীকার করছে কমিশন?
নাগরিকত্ব আইনে বলা আছে, ১৯৫০ সালের পর ভারতে যার জন্ম এবং ভারতে বসবাস তিনি ভারতের নাগরিক। আগে ভোটার কার্ড বা বাড়ির ঠিকানার প্রমাণ হলেই কাজ মিটে যেত। এখন কমিশন যদি নাগরিকত্বের প্রমাণ না পায় তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন ভোটার হিসেবে গণ্য করে তাকে শুনানিতে ডাকা হবে। সেখানে প্রমাণ দিতে না পারলে নাম বাদ যাবে। সেই অর্থে বিহারে সংশোধন নয়, নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরি হচ্ছে। তাই ২৮ জুলাই শুনানিতে সব আবেদনকারীর তরফে দাবি করা হবে, এবছরের জানুয়ারিতে তালিকায় যে সংশোধন করা হয়েছিল তার ভিত্তিতে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হোক। বিশেষ নিবিড় সংশোধন এর ভিত্তিতে ভোট এরপর হবে।