০৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় গণহত্যার সহায়তায় অভিযুক্ত ৪৮টি কোম্পানির নাম প্রকাশ করল রাষ্ট্রসংঘ

চামেলি দাস
  • আপডেট : ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 50

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি দখলদারী ও ধারাবাহিক গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৮টি আন্তর্জাতিক কোম্পানির নাম প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ফিলিস্তিনে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সিস্কা আলবানিজ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই তালিকা প্রকাশ করেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, এই কোম্পানিগুলো গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতা, নজরদারি, সামরিক হামলা এবং অবৈধ বসতি নির্মাণে সরাসরি সহযোগিতা করেছে। এর সঙ্গ আরও হাজারের বেশি কোম্পানির একটি ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে।  যারা পরোক্ষভাবে বা লভ্যাংশের মাধ্যমে এই নিধনযজ্ঞ থেকে মুনাফা করেছে।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল: মার্কিন রিপোর্ট

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “গাজা আজ বিশ্বে অস্ত্র কোম্পানি ও বিগ টেকের এক নির্মম পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে।  যেখানে প্রচুর লাভ হয় কিন্তু কোনও জবাবদিহিতা নেই।”

আরও পড়ুন: ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদ, গাজায় নিরীহদের হত্যা করা হচ্ছে দাবি ৮০০ সরকারি কর্মকর্তার

প্রতিবেদনে যে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, আইবিএম এবং গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট। এসব কোম্পানির প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ইসরাইলি বাহিনীকে বায়োমেট্রিক নজরদারি, ডেটা সংরক্ষণ এবং ফিলিস্তিনিদের গতিবিধি অনুসরণে সাহায্য করেছে।

সামরিক সহযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন, ইতালির লিওনার্দো এসপিএ, জাপানের ফ্যানুক ও ইসরায়েলের এলবিট সিস্টেমস। গাজায় ড্রোন হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও ডিভাইস সরবরাহে তারা যুক্ত।

অবৈধ বসতিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও পরিবহন সরবরাহ করেছে ক্যাটারপিলার, ভলভো, এইচডি হুন্দাই, এবং রাডা ইলেকট্রনিক। এছাড়া, বুকিংকম ও এয়ারবিএনবি এসব বসতির হোটেল রুম ও রিসর্ট তালিকাভুক্ত করে বাণিজ্যিক লাভ করেছে।

জ্বালানি ও কৃষিক্ষেত্রে সেভরন, পিবি, চিনের ব্রাইট ডেইরির মালিকানাধীন নোভা এবং মেক্সিকোর নেটাফিম-এর অবদান উল্লেখযোগ্য। যারা এসব দখলকৃত এলাকায় পানি ও কৃষি পরিকাঠামো স্থাপনে সহায়তা করেছে।

সবচেয়ে চমকপ্রদভাবে, এই সহায়তায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বের একাধিক খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়। MIT (Massachusetts Institute of Technology)-এর গবেষণাগুলো ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অর্থায়নে নজরদারি প্রযুক্তি ও অস্ত্র উন্নয়নে সাহায্য করেছে।

জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখ ও যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপীয় কমিশনের Horizon Europe প্রোগ্রামের আওতায় ইসরাইলি অংশীদারদের সঙ্গে গবেষণায় অংশ নিয়েছে।

২০১৪ সাল থেকে ইইউ-এর পক্ষ থেকে ইসরাইলি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ২.২২ বিলিয়ন ইউরো অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনটি জানায়।

প্রতিবেদনের মাধ্যমে রাষ্ট্রসংঘের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংস্থা ও সরকারগুলিকে এসব কোম্পানির কার্যক্রম পর্যালোচনা ও আইনানুগ জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠনগুলো এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এই  কোম্পানিগুলোকে বয়কটের ডাক দিয়েছে।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গাজায় গণহত্যার সহায়তায় অভিযুক্ত ৪৮টি কোম্পানির নাম প্রকাশ করল রাষ্ট্রসংঘ

আপডেট : ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি দখলদারী ও ধারাবাহিক গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৮টি আন্তর্জাতিক কোম্পানির নাম প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ফিলিস্তিনে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সিস্কা আলবানিজ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই তালিকা প্রকাশ করেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, এই কোম্পানিগুলো গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতা, নজরদারি, সামরিক হামলা এবং অবৈধ বসতি নির্মাণে সরাসরি সহযোগিতা করেছে। এর সঙ্গ আরও হাজারের বেশি কোম্পানির একটি ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে।  যারা পরোক্ষভাবে বা লভ্যাংশের মাধ্যমে এই নিধনযজ্ঞ থেকে মুনাফা করেছে।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল: মার্কিন রিপোর্ট

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “গাজা আজ বিশ্বে অস্ত্র কোম্পানি ও বিগ টেকের এক নির্মম পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে।  যেখানে প্রচুর লাভ হয় কিন্তু কোনও জবাবদিহিতা নেই।”

আরও পড়ুন: ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদ, গাজায় নিরীহদের হত্যা করা হচ্ছে দাবি ৮০০ সরকারি কর্মকর্তার

প্রতিবেদনে যে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, আইবিএম এবং গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট। এসব কোম্পানির প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ইসরাইলি বাহিনীকে বায়োমেট্রিক নজরদারি, ডেটা সংরক্ষণ এবং ফিলিস্তিনিদের গতিবিধি অনুসরণে সাহায্য করেছে।

সামরিক সহযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন, ইতালির লিওনার্দো এসপিএ, জাপানের ফ্যানুক ও ইসরায়েলের এলবিট সিস্টেমস। গাজায় ড্রোন হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও ডিভাইস সরবরাহে তারা যুক্ত।

অবৈধ বসতিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও পরিবহন সরবরাহ করেছে ক্যাটারপিলার, ভলভো, এইচডি হুন্দাই, এবং রাডা ইলেকট্রনিক। এছাড়া, বুকিংকম ও এয়ারবিএনবি এসব বসতির হোটেল রুম ও রিসর্ট তালিকাভুক্ত করে বাণিজ্যিক লাভ করেছে।

জ্বালানি ও কৃষিক্ষেত্রে সেভরন, পিবি, চিনের ব্রাইট ডেইরির মালিকানাধীন নোভা এবং মেক্সিকোর নেটাফিম-এর অবদান উল্লেখযোগ্য। যারা এসব দখলকৃত এলাকায় পানি ও কৃষি পরিকাঠামো স্থাপনে সহায়তা করেছে।

সবচেয়ে চমকপ্রদভাবে, এই সহায়তায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বের একাধিক খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়। MIT (Massachusetts Institute of Technology)-এর গবেষণাগুলো ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অর্থায়নে নজরদারি প্রযুক্তি ও অস্ত্র উন্নয়নে সাহায্য করেছে।

জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখ ও যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপীয় কমিশনের Horizon Europe প্রোগ্রামের আওতায় ইসরাইলি অংশীদারদের সঙ্গে গবেষণায় অংশ নিয়েছে।

২০১৪ সাল থেকে ইইউ-এর পক্ষ থেকে ইসরাইলি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ২.২২ বিলিয়ন ইউরো অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনটি জানায়।

প্রতিবেদনের মাধ্যমে রাষ্ট্রসংঘের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংস্থা ও সরকারগুলিকে এসব কোম্পানির কার্যক্রম পর্যালোচনা ও আইনানুগ জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠনগুলো এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এই  কোম্পানিগুলোকে বয়কটের ডাক দিয়েছে।