২৫ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৎ সাংবাদিকতা চাই, সংবাদপত্রকে মানুষ এখনও বিশ্বাস করে: প্রধান বিচারপতি

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২২, বৃহস্পতিবার
  • / 51

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  একটি বিশেষ অ্যাজেন্ডাকে সামনে রেখে বিতর্ক অনুষ্ঠান চালিয়ে বিকল্প ও সমান্তরাল আদালত বা ক্যাঙারু কোর্ট বসাচ্ছে দেশের মিডিয়া যা গণতন্ত্রে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। দু’দিন আগেই এই মন্তব্য করেছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা। মঙ্গলবার ফের সংবাদমাধ্যমের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড হল স্বাধীনচেতা সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতাকে বাণিজ্যিক প্রসারের স্বার্থে ব্যবহার না করে সৎ সাংবাদিকতা করাই সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব। এমন এক সময় যখন দেশে ভুয়ো খবর ছড়ানোকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বাধছে।

তখন প্রধান বিচারপতি মনে করেন মানুষের কাছে এখনও প্রিন্ট মিডিয়ার কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। মানুষ মনে করে ছাপার অক্ষরে যে খবরগুলি বেরোয়, সেগুলি সত্য। যে মিডিয়া হাউসগুলির কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থ ছিল না তারাই এমারজেন্সির অন্ধকার দিনগুলিতে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে পেরেছে। সময়ে সময়ে মিডিয়া হাউসগুলির কর্মপদ্ধতির সমীক্ষা হওয়া উচিত যাতে কঠিন সময়গুলোতে তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব। প্রধান বিচারপতি তাঁর পেশাদারি জীবনের প্রথম দিকে নিজে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি তাঁর সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে তখনই আপস করা হয় যখন মিডিয়া হাউসগুলির ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকে। তখন বাইরের চাপে মাথা নোয়াতে হয় মিডিয়া হাউসগুলিকে।

আরও পড়ুন: শ্রীনগর সফরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি

এই ব্যবসায়িক স্বার্থই স্বাধীন সাংবাদিকতাকে গ্রাস করে নেয়। এরফলে গণতন্ত্রের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটতে শুরু করে মিডিয়া হাউসগুলি। প্রধান বিচারপতি বলেন, মানুষের চোখ এবং কান হলেন সাংবাদিকরা। বিচারপতি রামানা এ দিন গুলাব চন্দ কোঠারির ‘গীতা, বিজ্ঞান, উপনিষদ’ শীর্ষক বইয়ের উন্মোচন অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্য রাখছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লাও।

আরও পড়ুন: হিন্দুদের ট্রাস্টে মুসলিমদের জায়গা দেবেন? ওয়াকফ মামলায় কেন্দ্রকে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

সাম্প্রতিককালে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে প্রধান বিচারপতি রামানার মন্তব্যগুলি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারণ নূপুর শর্মার পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ সা.-র বিরুদ্ধে অপমাননাকর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল বিজেপির প্রাক্তন এই মুখপাত্রকে। তার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের তীব্র এবং জঘন্য সমালোচনা শুরু হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাই বারবার সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি সাংবাদিকতার স্তর নীচে নেমে যাওয়ার জন্য শুধু সাংবাদিকদের দোষী করেননি। তিনি বলেন,  কোনও সাংবাদিক একটি ভালো স্টোরি ফাইল করলেন, সেই স্টোরিকে ডেস্কেই মেরে ফেলা হয়। এতে সাংবাদিকরা হতাশায় ভোগেন। দেশে সৎ এবং নির্ভীক সাংবাদিকতার জন্য পুলিৎজার পুরস্কারের আদলে একটি পুরস্কার চালু করা উচিত যাতে সাংবাদিকরা উৎসাহিত বোধ করতে পারেন।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে জয়ীদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে এই মামলার রায়দানে:  প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ

গত সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি মিডিয়ার ‘সমান্তরাল আদালত’ বা ‘ক্যাঙারু কোট’ চালানোর উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেছিলেন মিডিয়া ট্রায়াল কোনও মামলার রায়দানকে প্রভাবিত করতে পারে না। পরে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন মিডিয়ার নিজের সীমাবদ্ধতা বোঝা উচিত। প্রধান বিচারপতির ‘ক্যাঙারু আদালত’ চালানোর অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কারণ বিষয়টা গুরুতর। আমাদের দেখতে হবে, খবর প্রচার করতে গিয়ে মিডিয়া কি নিজেদের সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে? যদি তাই হয়, তাহলে বিষয়টাকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

 

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সৎ সাংবাদিকতা চাই, সংবাদপত্রকে মানুষ এখনও বিশ্বাস করে: প্রধান বিচারপতি

আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২২, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  একটি বিশেষ অ্যাজেন্ডাকে সামনে রেখে বিতর্ক অনুষ্ঠান চালিয়ে বিকল্প ও সমান্তরাল আদালত বা ক্যাঙারু কোর্ট বসাচ্ছে দেশের মিডিয়া যা গণতন্ত্রে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। দু’দিন আগেই এই মন্তব্য করেছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা। মঙ্গলবার ফের সংবাদমাধ্যমের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড হল স্বাধীনচেতা সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতাকে বাণিজ্যিক প্রসারের স্বার্থে ব্যবহার না করে সৎ সাংবাদিকতা করাই সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব। এমন এক সময় যখন দেশে ভুয়ো খবর ছড়ানোকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বাধছে।

তখন প্রধান বিচারপতি মনে করেন মানুষের কাছে এখনও প্রিন্ট মিডিয়ার কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। মানুষ মনে করে ছাপার অক্ষরে যে খবরগুলি বেরোয়, সেগুলি সত্য। যে মিডিয়া হাউসগুলির কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থ ছিল না তারাই এমারজেন্সির অন্ধকার দিনগুলিতে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে পেরেছে। সময়ে সময়ে মিডিয়া হাউসগুলির কর্মপদ্ধতির সমীক্ষা হওয়া উচিত যাতে কঠিন সময়গুলোতে তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব। প্রধান বিচারপতি তাঁর পেশাদারি জীবনের প্রথম দিকে নিজে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি তাঁর সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে তখনই আপস করা হয় যখন মিডিয়া হাউসগুলির ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকে। তখন বাইরের চাপে মাথা নোয়াতে হয় মিডিয়া হাউসগুলিকে।

আরও পড়ুন: শ্রীনগর সফরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি

এই ব্যবসায়িক স্বার্থই স্বাধীন সাংবাদিকতাকে গ্রাস করে নেয়। এরফলে গণতন্ত্রের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটতে শুরু করে মিডিয়া হাউসগুলি। প্রধান বিচারপতি বলেন, মানুষের চোখ এবং কান হলেন সাংবাদিকরা। বিচারপতি রামানা এ দিন গুলাব চন্দ কোঠারির ‘গীতা, বিজ্ঞান, উপনিষদ’ শীর্ষক বইয়ের উন্মোচন অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্য রাখছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লাও।

আরও পড়ুন: হিন্দুদের ট্রাস্টে মুসলিমদের জায়গা দেবেন? ওয়াকফ মামলায় কেন্দ্রকে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

সাম্প্রতিককালে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে প্রধান বিচারপতি রামানার মন্তব্যগুলি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারণ নূপুর শর্মার পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ সা.-র বিরুদ্ধে অপমাননাকর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল বিজেপির প্রাক্তন এই মুখপাত্রকে। তার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের তীব্র এবং জঘন্য সমালোচনা শুরু হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাই বারবার সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি সাংবাদিকতার স্তর নীচে নেমে যাওয়ার জন্য শুধু সাংবাদিকদের দোষী করেননি। তিনি বলেন,  কোনও সাংবাদিক একটি ভালো স্টোরি ফাইল করলেন, সেই স্টোরিকে ডেস্কেই মেরে ফেলা হয়। এতে সাংবাদিকরা হতাশায় ভোগেন। দেশে সৎ এবং নির্ভীক সাংবাদিকতার জন্য পুলিৎজার পুরস্কারের আদলে একটি পুরস্কার চালু করা উচিত যাতে সাংবাদিকরা উৎসাহিত বোধ করতে পারেন।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে জয়ীদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে এই মামলার রায়দানে:  প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ

গত সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি মিডিয়ার ‘সমান্তরাল আদালত’ বা ‘ক্যাঙারু কোট’ চালানোর উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেছিলেন মিডিয়া ট্রায়াল কোনও মামলার রায়দানকে প্রভাবিত করতে পারে না। পরে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন মিডিয়ার নিজের সীমাবদ্ধতা বোঝা উচিত। প্রধান বিচারপতির ‘ক্যাঙারু আদালত’ চালানোর অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কারণ বিষয়টা গুরুতর। আমাদের দেখতে হবে, খবর প্রচার করতে গিয়ে মিডিয়া কি নিজেদের সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে? যদি তাই হয়, তাহলে বিষয়টাকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।