‘৬০০ মাদ্রাসা বন্ধ করেছি, বাকিগুলোও বন্ধ করব’, কর্নাটকে সদর্পে ঘোষণা হিমন্ত বিশ্ব শর্মার

- আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৩, শনিবার
- / 12
বিশেষ প্রতিবেদক: বাল্যবিবাহ দমনের নামে ধরপাকড়ের পর এবার হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নিশানায় অসমের বেসরকারি তথা কওমি মাদ্রাসাগুলি। কর্নাটকের বেলাগাভিতে বিজেপির বিজয় সংকল্প যাত্রায় ভাষণ দেওয়ার সময় হিমন্ত বলেন, আধুনিক ভারতে মাদ্রাসা শিক্ষার কোনও প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের।
কর্নাটকের ভোট প্রচারে গিয়ে শুক্রবার অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঠিক এই ভাষায় বিভাজনের রাজনীতি উসকে দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার বিরোধিতা করলেন।
তিনি সদর্পে জানান, নিজ রাজ্যে সব সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করেছেন। এবার বাকি মাদ্রাসাগুলোও বন্ধ করা হবে। অসমে আর কোনও মাদ্রাসাই অবশিষ্ট রাখা হবে না।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে এসে অসমের ৬০০ সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করে দিয়েছি। আগামী দিনে বাকি মাদ্রাসাগুলিও ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেব। কর্ণাটকে বিজেপির সমাবেশে হিমন্ত অভিযোগ তোলেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা অসমের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নষ্ট করছে।
ধর্ম নিরপেক্ষতার স্বার্থে কোনও ধর্মীয় শিক্ষার জন্য সরকারি অর্থ খরচ হওয়া উচিত নয়। এই যুক্তিতে অসমে সমস্ত সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার।
২০২০ সালে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অসম সরকার জানিয়েছিল, যে স্কুলগুলিকে মাদ্রাসা শিক্ষা দেওয়া হয়, সেগুলির অনেকটা খরচ সরকার বহন করে। সরকার আর কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা করে সুবিধা করিয়ে দিতে এই খরচ বহন করবে না।
এরপরই অসম মাদ্রাসা বোর্ড তুলে দিয়ে সেই বোর্ডের অধীনে থাকা ছয় শতাধিক মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে থাকা কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে মাদ্রাসা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে গৌহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
যদিও হাইকোর্ট আবেদন খারিজ করে সরকার সিদ্ধান্তকেই বহাল রাখে।
গৌহাটি হাইকোর্টের সেই রায়কে স্থগিত রাখার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে অসমের মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি।
সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীরা জানান, হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার মাদ্রাসা বন্ধ করতে যে যুক্তি দেখাচ্ছে তা ভারতীয় সংবিধানের মাদ্রাসা সংক্রান্ত দুটি আইনের বিরোধী। এমনকী সংবিধানের ২৮(১) ধারাও বিরোধী।
ওই ধারায় বলা আছে, সম্পূর্ণ সরকারি ব্যয়ে চলে না যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি, তাদের উপর কোনও সরকারি নিয়ন্ত্রণ চাপানো যাবে না। তাছাড়া, নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পরিচালনা করার সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া আছে মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন-সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলিকে।
সংবিধান বা আইনকে তোয়াক্কা না করে ২০২০ সালে অসমের বিজেপি সরকার একটি বিতর্কিত আইন চালু করে। সেই আইন অনুসারে সরকার চালিত মাদ্রাসাগুলিকে স্কুলে পরিণত করা হয়। এরপরও রাজ্যজুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে সে রাজ্যে ৩ হাজার মাদ্রাসার একটি তালিকা তৈরি করে অসম পুলিশ।
মাদ্রাসাগুলি যে কওমি বা বেসরকারি মাদ্রাসা তা জানা সত্ত্বেও কর্ণাটকে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরাই মাদ্রাসাগুলি ব্যবহার করে দেশের সংস্কৃতি কলুষিত করছে।
তিনি কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের ‘মুঘলপন্থী’ বলেও কটাক্ষ করেন।
হিমন্তের কথায়, কংগ্রেস এবং কমিউনিস্টরা দেখিয়েছিল ভারতের ইতিহাস বাবর, শাহজাহান, আওরঙ্গজেবদের নিয়ে। আমি বলতে চাই, ভারতের ইতিহাস তাদের নিয়ে না, বরং ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ, গুরু গোবিন্দ সিং, স্বামী বিবেকানন্দদের দিয়ে।
মেরুকরণে আরও খোলামেলা উস্কানি দিয়ে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ভারতে অনেক মানুষ গর্ব করে বলে, যে তারা মুসলিম এবং খ্রিস্টান। এতে আমার কোনও সমস্যা নেই। তবে আমাদের এমন ব্যক্তির প্রয়োজন যে গর্ব করে বলতে পারে, আমি একজন হিন্দু। ভারতে আজ এমন ব্যক্তির প্রয়োজন।
কর্নাটকে আগামী মে-জুন মাসে বিধানসভা ভোট। দক্ষিণের একমাত্র শাসন ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকার বহুবিধ দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ণ। ইতিমধ্যে সে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদলে ফেলেছে বিজেপি। তারপরও কমেনি দুর্নীতির অভিযোগ, রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দুর্নীতির অভিযোগ ঢাকতে শেষবেলায় কট্টর হিন্দুত্বের পথে হাঁটতে চাইছে বিজেপি। আর সেই কাজে তাদের ট্রাম্প কার্ড হিসাবে উঠে এসেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
নিজ রাজ্যে মাদ্রাসা বন্ধ করে, হাজার হাজার মুসলিম পরিবারকে জমি থেকে উচ্ছেদ করে, জিহাদি তকমা লাগিয়ে মাদ্রাসায় বুলডোজার চালিয়ে, বাল্যবিবাহের দোহাই দিয়ে নির্বিচারে মুসলিমদের আটক করে এবং সর্বোপরি সামান্য অভিযোগে এনকাউন্টারে মুসলিম তরুণদের হত্যা করে হিন্দুত্বের পোস্টারবয় হিসাবে যোগী আদিত্যনাথকে টেক্কা দিয়েছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এবার সেই হিমন্তকে কর্ণাটকে ভোট প্রচারের অন্যতম মুখ করা হয়েছে।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও লাগাতার কর্ণাটকের জনসভাগুলিতে হিন্দুত্বকেই ইস্যু করে তুলছেন। সেই ধারায় এবার সংযোজন হল মাদ্রাসা শিক্ষার বিরোধিতা করা। সেখানেই ঝুলির বিড়াল বের করে দিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, রাজ্যের সব মাদ্রাসাকে বন্ধ করে দেওয়া হবে।