গাজা যুদ্ধ, ইরান হামলা: ইসরাইলের পাশে ছিল ৬ আরব দেশ

- আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার
- / 59
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ও ইরানে ইসরাইলি সামরিক অভিযানের প্রকাশ্যে নিন্দা জানালেও, ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ আরব রাষ্ট্র গোপনে ইসরাইলের সাথে সামরিক সহযোগিতা বাড়িয়েছে। ফাঁস হওয়া মার্কিন সামরিক নথি এবং ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস-এর পর্যালোচনা করা তথ্যের ভিত্তিতে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ এই চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করেছে। ফাঁস হওয়া মার্কিন সামরিক নথিতে জানা গিয়েছে, গাজা যুদ্ধের মধ্যেই ইসরাইল এবং ছয়টি মূল আরব দেশের (কাতার, বাহরাইন, মিশর, জর্ডান, সউদি আরব, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত) মধ্যে একটি গোপন সামরিক জোট গঠন করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) নেতৃত্বে ২০২২ সালে এই জোটটি গঠিত হয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের ‘হুমকি’ মোকাবিলা করা। দলিলগুলো ইরানকে ‘এক্সিস অফ এভিল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই জোটের মূল ভিত্তি ছিল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন মোকাবিলা করার জন্য একটি সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ২০২৪ সালের মধ্যে ‘সেন্টকম’ এই দেশগুলোকে তাদের নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করে, যার ফলে তারা রাডার ও সেন্সরের ডেটা বিনিময় করতে পারত। গোপন বৈঠক ও যৌথ সামরিক মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ইরান এবং হামাসের মতো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ যুদ্ধ মোকাবিলার উপর মনোযোগ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শুধু পশ্চিম এশিয়াতেই নয়, ফোর্ট ক্যাম্পবেল, কেনটাকিসহ মার্কিন সামরিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়, যা ইসরাইল ও আরব দেশগুলোর মিলিত সামরিক কার্যক্রমে ওয়াশিংটনের ভূমিকা স্পষ্ট করে।
ফাঁস হওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরানকে ফিলিস্তিনিদের রক্ষক হিসেবে উপস্থাপনের প্রচারকে রুখে দিতে এবং ‘আঞ্চলিক সমৃদ্ধি ও সহযোগিতার’ বার্তা প্রচারের জন্য ‘সেন্টকম’ তথ্যমূলক অভিযান পরিচালনারও পরিকল্পনা করেছে। এছাড়াও গাজায় যুদ্ধবিরতির পর আরব দেশগুলোর অংশগ্রহণে একটি নিরাপত্তা কাঠামো প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও নথিতে উঠে এসেছে।
তবে, এই গোপন সামরিক সম্পর্কের ভঙ্গুরতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন ৯ সেপ্টেম্বরে কাতারে ইসরাইলি হামলায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোনও কার্যকর সতর্কবার্তা দিতে পারেনি। এমনকি মার্কিন রাডার সিস্টেমও ব্যর্থ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কাতারের কাছে ক্ষমা চান, যা এই গোপন জোটের দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আরব নেতারা একদিকে ইসরাইলকে ভয় পান, অন্যদিকে নিরাপত্তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। এই দ্বৈত অবস্থানের কারণেই তারা গাজাবাসীর সঙ্গে কার্যত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।