কওম দরদি বিধায়ক আইনজীবী নাসিরুদ্দিন আহমেদের ইন্তেকাল, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
- আপডেট : ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার
- / 111
রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া
শফিকুল ইসলাম : ইন্তেকাল করেছেন নদিয়ার কালীগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন )। শনিবার কৃষ্ণনগরে এক মিটিং সেরে, সন্ধ্যায় নদিয়ার কালিগঞ্জ ব্লকের ছোট কুলবেড়িয়ায় এক ইসলামিক জলসায় তিনি গিয়েছিলেন,বাড়ি ফিরে খাওয়া-দাওয়া করেন। রাত ১১-১৫ মিনিট নাগাদ আচমকাই অসুস্থতা বোধ করেন তিনি। তাঁকে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় পলাশীর মীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। । সেখানে তিনি মারা যান। নাসিরুদ্দিনের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি তৃণমূলের জন্মলগ্নের সৈনিক ছিলেন। রাজ্য রাজনীতিতে তিনি ‘লাল’ নামেই বেশি পরিচিত। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
২০১১ সালে রাজ্যজুড়ে যখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছিল সেই সময়ে প্রথমবার তৃণমূলের বিধায়ক হন নাসিরুদ্দিন। তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত থাকার পাশাপাশি বিশিষ্ট আইনজীবীও ছিলেন। নদিয়ার রাজনীতিতে তাঁর দাপট বাম জমানা থেকেই। কিন্তু ২০১৬ সালে কংগ্রেস এবং সিপিএম জোটের প্রার্থী শেখ হাসানুজ্জামানের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। যদিও সেই হাসানুজ্জামানও পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে দলের পুরনো সৈনিক নাসিরুদ্দিনের উপরেই ভরসা করেছিল তৃণমূল। তিনি ওই নির্বাচনে জয়ীও হন তিনি। পরিবার সূত্রে খবর, তিনি শনিবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পলাশির মীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ তাঁর অনুরাগীরা। নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘আমার সহকর্মী নাসিরুদ্দিন আহমেদ (লাল)-এর মৃত্যুতে শোকাহত। জনগণের কর্মী ছিলেন তিনি। আমাদের বিশ্বাসযোগ্য কর্মীও ছিলেন। লাল একজন আইনজীবী এবং সুদক্ষ সমাজকর্মী, আমার কাছে ওঁর অনেক গুরুত্ব ছিল। ওঁর পরিবার, বন্ধু এবং অনুগামীদের আমার সমবেদনা।’ এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া রাজ্যের রাজনৈতিক- সামাজিক মহলেও।
রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান তথা ‘পুবের কলম’ পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান বিধায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন,তার মৃত্যুতে কওমের বিশেষ ক্ষতি হল। সমাজ সচেতন এই মানুষটির হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়া বেদনাদায়ক। গত ১৫ জানুয়ারি কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে ইমাম মুয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশনের এক সভায় তার সঙ্গে শেষ দেখা। পাশাপাশি বসে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় হয় । সংখ্যালঘুদের কল্যাণে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, দেশ ও রাজ্যের নানা সমস্যা, গ্রাম গঞ্জে সংখ্যালঘুদের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা নিয়ে তিনি তথ্যপূর্ণ ভাষণ দিলেন। সমাজ উন্নয়নে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভূমিকাও তিনি আলোকপাত করেন। খুব নরম মনের অথচ সাহসী এই মানুষটিকে আমরা হারালাম। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন।নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ বলেন, “বিকেলেই লালের সঙ্গে কথা হল ফোনে। তখনও তো ওঁর শরীর ভাল ছিল বলে জানতাম । কিন্তু এখন শুনলাম সব শেষ হয়ে গিয়েছে। বিশ্বাস করতে পারছি না যে লাল আর নেই। ওঁর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আর রাজনৈতিক পথ চলা হবে না।”
ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেন, খুব হতাশা জনক। শিক্ষিত, ভদ্র এবং মার্জিত মানুষ নাসির উদ্দিন আহমেদ । কৃষ্ণনগর রবীন্দ্র ভবনে মিটিং করলাম ১৫ জানুয়ারি , একসঙ্গে ড. আবুল হোসেন বিশ্বাস সাহেবের বাড়িতে লাঞ্চ করলাম। অসুস্থতা তেমন কিছু মনে হয়নি। ২০২১ সালে বিধানসভা প্রচারে আমাকে দল থেকে প্রচারে তার কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল, উনার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আমাকে খুব আদর যত্ন করেছিলেন। আমাকে খুব ভালবাসতেন। বিধানসভার লবিতে আমার সঙ্গে দেখা হলেই জড়িয়ে ধরতেন। আমার কাছে থেকে ওবিসি ম্যাটারে তথ্য নিয়েছিলেন, পরামর্শ করেছিলেন । আমাদের সমাজের জন্য কিছু একটা করুন, আমার প্রতি এই ছিল তাঁর শেষ কথা। আমি বলেছিলাম, অপেক্ষা করুন, ধৈর্য ধরুন একটু ভাল সময় আসুক। ওইদিন আমি চলে গেলাম মুর্শিদাবাদে।
গতকাল আবার গেলাম চাপড়া , কৃষ্ণনগরে, কিন্তু দেখা হল না। শেষ ইচ্ছটা রয়ে গেল মনে। খুব যেন তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। উনাকে
জন্নতবাসি করুন আল্লাহতায়ালা ।’ নদিয়ার মানুষের কাছে আপনজন ছিলেন। মানুষের সবসময় উপকার করতেন তিনি। বলা হয়, তিনি খালি হাতে কাউকে ফেরাতেন না। সাহায্য সহযোগিতা করতেন,পরামর্শ দিতেন।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। মিটিং মিছিল করলে জানাতেন। পুবের কলম পত্রিকা নিয়মিত পড়তেন। দু’বার পত্রিকা দপ্তরে এসে সম্পাদক সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
২০২৬ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন আছে। আর তার একবছর আগেই কালীগঞ্জ বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ প্রয়াত হলেন। তার মৃত্যুর দলের কাছে একটা বিরাট আঘাত বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে।তিনি দলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক করেছেন জেলা ইমাম হাজী লুৎফর রহমান। তিনি বলেন এই সহৃদয় মানুষটির কথা আমরা কখনো ভুলতে পারবো না। নদিয়া জেলার ইমাম-মুয়াজ্জিনদের তিনি অভিভাবক ছিলেন বলা যায়। বিভিন্ন বিষয়ে আমরা তার সহযোগিতা পেয়েছি। তার মৃত্যুতে আমরা অভিভাবক হারা হলাম। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন। তাঁর মৃত্যুতে কালীগঞ্জ আসন ফাঁকা হয়ে গেল। ফলে এই আসনে উপনির্বাচন করাতে হবে। যদিও আগামী বছরই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মাস ছয়েকর জন্য নতুন বিধায়ক পাবে কালীগঞ্জ।