২১ জুন ২০২৫, শনিবার, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মার্শাল আর্টে নিজেকে আরও উন্নত করতে চায় হুগলির মেধাবী ছাত্রী জিনাত সুলতানা

সুস্মিতা
  • আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 42

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কথায় বলে কিশোর বয়স মানসিক বিকাশের অন্যতম সেরা পর্যায়। আর সেই পর্যায়কে যদি নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় দিয়ে ধরে রাখা যায়, তাহলে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে নেওয়ার একটা সেরা প্ল্যাটফর্ম বোধহয় এই বয়সটাই। আর সেই বয়সকে হাতিয়ার করে মানসিক একাগ্রতা, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের এক অনবদ্য মেলবন্ধন ঘটিয়ে এই মুহূর্তে নিজেকে মেলে ধরছে হুগলির শ্যামপুরের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী জিনাত সুলতানা। একদম ছোট থেকেই জিনাতের স্বপ্ন ছিল পড়াশোনোর পাশাপাশি ভালো মার্শাল আর্টিস্ট হবে। পাশাপাশি চারপাশের মুশকিল পরিস্থিতি থেকে আত্মরক্ষা করার কৌশল শেখার একটা অদম্য নেশা পেয়ে বসে জিনাতের মধ্যে। ভর্তি হয়ে যায় ক্যারাটে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। রহমতুল্লাহ মোল্লার কাছে ক্যারাটের হাতেখড়ি ছোট্ট জিনাতের।
অনেক অভিভাবকই যেখানে এই বয়সে ছেলেমেয়েদের হঠাৎ করেই মার্শাল আর্টের মতো একটি বডি কনট্যাক্ট গেমে পাঠাতে একটু ভয় পান, সেখানে ছোট্ট জিনাতের ক্ষেত্রে কিন্তু এই সমস্যা হয়নি। জিনাতের মায়ের কথায়, ‘আমি নিজে ভালো অ্যাথলেট ছিলাম। জেলা পর্যায় পর্যন্ত জিমন্যাস্টিক করেছি। তাই মেয়ে যখন আমার কাছে মার্শাল আর্ট শেখার জন্য আবদার করে, আমি তার এক কথাতে রাজি হয়ে যাই। কারণ একজন সফল জিমন্যাস্ট হিসেবে আমি এটা অনুভব করতে পারি, যে এই ধরনের গেমে শরীরের নমনীয়তা কিংবা শক্তি কতটা বাড়ে। তাই আমি কোনও নিশ্চিন্ত মনে জিনাতকে ছেড়ে দিয়েছিলাম ক্যারাটে শেখার জন্য।’
শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী জিনাত এখন ক্যারাটের সপ্তম ডান। নিজের ক্যারাটে কেরিয়ার শুরুর প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে জিনাত জানায়, ‘রহমতুল্লাহ স্যার ছোটবেলা থেকেই মাঠে মার্শাল আর্ট শেখাতে আসতেন, তখন থেকে আমি নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, ভয় পেয়ে যাতে পিছু না হটতে হয়, সেই সাহস অর্জন করার জন্যই আমি ক্যারাটেকে বেছে নিয়েছিলাম। মার্শাল আর্ট শেখার ফলে পড়াশোনোটাও ভালো করে করতে পারি।’ সাবজুনিয়র, জেলা, রাজ্য পর্যায় পেরিয়ে ইতিমধ্যেই জাতীয় স্তরও অতিক্রম করে সে এখন এক আন্তর্জাতিক প্লেয়ার। বাবা সামান্য বস্ত্র ব্যবসায়ী। বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার দূরে গিয়ে কোচ রহমতুল্লাহ মোল্লার তত্ত্বাবধানে পুরশুড়া মিক্সড মার্শাল আর্ট অ্যাকাডেমিতে নিয়মিত ভিত্তিতে ক্যারাটে অনুশীলন করে যাচ্ছে জিনাত। জাতীয় পর্যায়ে তার সাফল্য দারুণ। বিশাখাপত্তনমে ২ বার আন্তর্জাতিক ক্যারাটেতে অংশ নিয়েছে। গতবার সাফল্য খুব একটা না এলেও এবার ভাইজ্যাগে অষ্টম ইন্টারন্যাশনাল ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে জিনাত ও তাঁর দল দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছে। গোটা দেশের চারশো প্রতিযোগীর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছিল মোট ৬০ জন। এর মধ্যে পুরশুড়া মিক্সড মার্শাল আর্ট অ্যাকাডেমির ছাত্রছাত্রীরা ৯টি সোনা, ১২টি রুপো ও ৮টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। তার মধ্যে কাতা ও কুমিতে রুপো জেতে জিনাত। শুধু মার্শাল আর্ট নয়, ফুটবল, ক্রিকেটটাও দারুণ খেলে জিনাত। সঙ্গে নাচ তো আছেই। মা-ই তার অনুপ্রেরণা। তবে মেয়ের ক্যারাটে শেখায় বাবা সওকত আলির ভূমিকাও কম নয়। নিজের হেড পাওয়ার বাড়ানো, কিক, পাঞ্চের মধ্যে অন্য এক আত্মবিশ্বাস খুঁজে পায় জিনাত। শুধু ক্যারাটেতেই অবশ্য সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না জিনাত। পড়াশোনোর পাশাপাশি মার্শাল আর্টের আরও উন্নত পর্যায়েও অংশ নিতে বদ্ধপরিকর হুগলির এই ছোট্ট মেয়েটি।

আরও পড়ুন: রাতেও হুগলি নদীতে চলবে পণ্যবাহী জাহাজ, শুরু নাইট নেভিগেশন

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মার্শাল আর্টে নিজেকে আরও উন্নত করতে চায় হুগলির মেধাবী ছাত্রী জিনাত সুলতানা

আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কথায় বলে কিশোর বয়স মানসিক বিকাশের অন্যতম সেরা পর্যায়। আর সেই পর্যায়কে যদি নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় দিয়ে ধরে রাখা যায়, তাহলে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে নেওয়ার একটা সেরা প্ল্যাটফর্ম বোধহয় এই বয়সটাই। আর সেই বয়সকে হাতিয়ার করে মানসিক একাগ্রতা, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের এক অনবদ্য মেলবন্ধন ঘটিয়ে এই মুহূর্তে নিজেকে মেলে ধরছে হুগলির শ্যামপুরের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী জিনাত সুলতানা। একদম ছোট থেকেই জিনাতের স্বপ্ন ছিল পড়াশোনোর পাশাপাশি ভালো মার্শাল আর্টিস্ট হবে। পাশাপাশি চারপাশের মুশকিল পরিস্থিতি থেকে আত্মরক্ষা করার কৌশল শেখার একটা অদম্য নেশা পেয়ে বসে জিনাতের মধ্যে। ভর্তি হয়ে যায় ক্যারাটে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। রহমতুল্লাহ মোল্লার কাছে ক্যারাটের হাতেখড়ি ছোট্ট জিনাতের।
অনেক অভিভাবকই যেখানে এই বয়সে ছেলেমেয়েদের হঠাৎ করেই মার্শাল আর্টের মতো একটি বডি কনট্যাক্ট গেমে পাঠাতে একটু ভয় পান, সেখানে ছোট্ট জিনাতের ক্ষেত্রে কিন্তু এই সমস্যা হয়নি। জিনাতের মায়ের কথায়, ‘আমি নিজে ভালো অ্যাথলেট ছিলাম। জেলা পর্যায় পর্যন্ত জিমন্যাস্টিক করেছি। তাই মেয়ে যখন আমার কাছে মার্শাল আর্ট শেখার জন্য আবদার করে, আমি তার এক কথাতে রাজি হয়ে যাই। কারণ একজন সফল জিমন্যাস্ট হিসেবে আমি এটা অনুভব করতে পারি, যে এই ধরনের গেমে শরীরের নমনীয়তা কিংবা শক্তি কতটা বাড়ে। তাই আমি কোনও নিশ্চিন্ত মনে জিনাতকে ছেড়ে দিয়েছিলাম ক্যারাটে শেখার জন্য।’
শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী জিনাত এখন ক্যারাটের সপ্তম ডান। নিজের ক্যারাটে কেরিয়ার শুরুর প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে জিনাত জানায়, ‘রহমতুল্লাহ স্যার ছোটবেলা থেকেই মাঠে মার্শাল আর্ট শেখাতে আসতেন, তখন থেকে আমি নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, ভয় পেয়ে যাতে পিছু না হটতে হয়, সেই সাহস অর্জন করার জন্যই আমি ক্যারাটেকে বেছে নিয়েছিলাম। মার্শাল আর্ট শেখার ফলে পড়াশোনোটাও ভালো করে করতে পারি।’ সাবজুনিয়র, জেলা, রাজ্য পর্যায় পেরিয়ে ইতিমধ্যেই জাতীয় স্তরও অতিক্রম করে সে এখন এক আন্তর্জাতিক প্লেয়ার। বাবা সামান্য বস্ত্র ব্যবসায়ী। বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার দূরে গিয়ে কোচ রহমতুল্লাহ মোল্লার তত্ত্বাবধানে পুরশুড়া মিক্সড মার্শাল আর্ট অ্যাকাডেমিতে নিয়মিত ভিত্তিতে ক্যারাটে অনুশীলন করে যাচ্ছে জিনাত। জাতীয় পর্যায়ে তার সাফল্য দারুণ। বিশাখাপত্তনমে ২ বার আন্তর্জাতিক ক্যারাটেতে অংশ নিয়েছে। গতবার সাফল্য খুব একটা না এলেও এবার ভাইজ্যাগে অষ্টম ইন্টারন্যাশনাল ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে জিনাত ও তাঁর দল দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছে। গোটা দেশের চারশো প্রতিযোগীর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছিল মোট ৬০ জন। এর মধ্যে পুরশুড়া মিক্সড মার্শাল আর্ট অ্যাকাডেমির ছাত্রছাত্রীরা ৯টি সোনা, ১২টি রুপো ও ৮টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। তার মধ্যে কাতা ও কুমিতে রুপো জেতে জিনাত। শুধু মার্শাল আর্ট নয়, ফুটবল, ক্রিকেটটাও দারুণ খেলে জিনাত। সঙ্গে নাচ তো আছেই। মা-ই তার অনুপ্রেরণা। তবে মেয়ের ক্যারাটে শেখায় বাবা সওকত আলির ভূমিকাও কম নয়। নিজের হেড পাওয়ার বাড়ানো, কিক, পাঞ্চের মধ্যে অন্য এক আত্মবিশ্বাস খুঁজে পায় জিনাত। শুধু ক্যারাটেতেই অবশ্য সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না জিনাত। পড়াশোনোর পাশাপাশি মার্শাল আর্টের আরও উন্নত পর্যায়েও অংশ নিতে বদ্ধপরিকর হুগলির এই ছোট্ট মেয়েটি।

আরও পড়ুন: রাতেও হুগলি নদীতে চলবে পণ্যবাহী জাহাজ, শুরু নাইট নেভিগেশন