শিরায় রক্ত নয়, গরম সিঁদুর বইছে: মোদি
- আপডেট : ২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 197
পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলোচনই নয়, যদি কথা বলতেই হয় তাহলে সেটা হবে শুধুমাত্র পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে। আরও একবার সাফ জানিয়ে দিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে পাকিস্তানকে নিশানা করে তিনি বলেন, ওদের ঘরে ঢুকে মেরেছিলাম এবার বুকে মেরেছি। সিঁদুর যখন বারুদে পরিণত হয়, তার পরিণতি কি হয়ে তা গোটা বিশ্ব দেখেছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ছিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার একমাস। সেই আবহে প্রধানমন্ত্রীর এভাবে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বৃহস্পতিবার রাজস্থানের বিকানেরে পাকিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন দেশনোকি এলাকায় জনাসভা করেন প্রধানমন্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই সীমান্ত এলাকাতেই পাকিস্তান ড্রোন হামলা চালিয়েছিল, যা প্রতিহত করেছিল ভারতীয় সেনা। পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিতে সেই এলাকাকেই বেছে নেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাষণের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসাও নয়, আলোচনাও নয়। যদি কথা বলতেই হয় তা হবে শুধু পাকি অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই। পহেলগাঁওয়ে ব্যুলেট চলেছিল। কিন্তু, আমাদের ১৪০ কোটি ভারতীয় সেই যন্ত্রণা অনুভব করেছে। প্রত্যেক নাগরিক চেয়েছিল জঙ্গিদের যেন অবশ্যই শাস্তি হয়। আমাদের সেনা তাদের সেই আকাঙ্খা পূর্ণ করেছে।
২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলার জবাবে আমরা ২২ মিনিটের মধ্যে আমরা পাকিস্তানের ৯টি বড় জঙ্গিঘাঁটি ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অপারেশন সিঁদুর তিনটি ফর্মুলা চূড়ান্ত করেছিল। এক, ভারতে যদি কোনও জঙ্গি হামলা হয়, তাহলে তাদের উপযুক্ত প্রত্যুত্তোর দেওয়া হবে। আমাদের সেনা বাহিনী সময়-রূপরেখা-পরিস্থিতি স্থির করবে। দুই, পরমাণু বোমার হুমকিতে ভারত ভয় পায় না। তৃতীয়, আমারা কোনও পার্থক করব না সন্ত্রাসবাদী ও তাদের উপর নির্ভর করে থাকা সরকারের মধ্যে। যারা সিঁদুর মুছতে বেরিয়েছিল তাদের মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি। যারা ভারতের রক্ত ঝরিয়েছিল, তাদের হিসাব চুকিয়ে দিয়েছি। যারা ভেবেছিল ভারত চুপ থাকবে, তারা আজ তাদের ঘরে লুকিয়ে পড়েছে।
যারা তাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ নিয়ে গর্ব করত তাদের আজ ধ্বংসস্তূপে চাপা দেওয়া হয়েছে। ভারত মায়ের সেবায় বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। শরীরে রক্ত নয়, আমার শিরায় গরম সিঁদুর বইছে। এটা কোনও প্রতিশোধের খেলা নয়, এটা ন্যায়ের নতুন রূপ—যার নাম অপারেশন সিঁদুর। পাকিস্তানের রহিম ইয়ার খান বায়ুসেনা ঘাঁটি এখন আইসিইউতে চলে গিয়েছে। কবে ঠিক হবে কেউ জানে না। নিজেদের দেশকে কোনওভাবে নত হতে দেব না। প্রথমে ঘরে ঢুকে মেরেছিলাম। এবার সরাসরি ওদের বুকে মেরেছি।’’
এদিন, প্রথমে করণী মাতার মন্দিরে পুজো দিতে যান প্রধানমন্ত্রী। তারপর দেশনোক স্টেশন উদ্বোধন করেন। করণী মাতার মন্দিরের নিকটবর্তী এই স্টেশন মন্দিরের স্থাপত্যের আদলেই গড়া হয়েছে। দেশনোক থেকে বিকানেরের জনসভায় পৌঁছোন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকেই দেশের মোট ১০৩টি অমৃত স্টেশনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নাকি জানিয়েছেন, তাঁরা ভারতের সঙ্গে ৪টি বিষয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। আর সেই চার ইস্যু হল—কাশ্মীর, জল, বাণিজ্য এবং সন্ত্রাসবাদ। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে শাহবাজ নাকি বলেছেন, ভারত শুধু সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা চাইলেও, তাঁরা এই চারটি বিষয় নিয়ে কথা বলার দাবিতে অনড় থাকবেন।
মনে করা হচ্ছে, জল বলতে শাহবাজ সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন। ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চিনে হতে পারে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে শাহবাজ বলেন, ভারত এতে রাজি হবে না। সেক্ষেত্রে সউদি আরবে এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হতে পারে।