২২ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিরিয়ার সুয়েইদা থেকে বেদুইন পরিবারদের উদ্ধার, নাজুক যুদ্ধবিরতির মাঝে শান্তির প্রচেষ্টা

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৫, সোমবার
  • / 50

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সুয়েইদা শহর থেকে শত শত বেদুইন পরিবারকে উদ্ধার করছে সরকার, যেখানে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলটিতে এক সপ্তাহব্যাপী দ্রুজ এবং বেদুইন যোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর একটি নাজুক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

সিরিয়ার সুয়েইদা থেকে বেদুইন পরিবারদের উদ্ধার, নাজুক যুদ্ধবিরতির মাঝে শান্তির প্রচেষ্টা

সোমবার সকালে প্রথম দফায় বেশ কিছু বেদুইন পরিবার বাস ও ট্রাকে করে নিরাপদে বেরিয়ে যান। তাদের সঙ্গে ছিল সিরিয়ান অ্যারাব রেড ক্রিসেন্ট-এর গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স। এই পরিবারগুলোকে পার্শ্ববর্তী দারায় স্থানান্তর করা হয়েছে। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রায় ১,৫০০ জনকে সরানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদক মোহাম্মদ ভাল সোমবার (09:00 GMT) জানান, ইতিমধ্যেই ১০টি বাসে করে অন্তত ৫০০ জন সুয়েইদা ছেড়েছেন এবং আরও পরিবার পরবর্তী ঘণ্টাগুলিতে এলাকা ত্যাগ করবেন বলে আশা।

আরও পড়ুন: গাজা শিশু ও ক্ষুধার্তদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে: রাষ্ট্র সংঘ সংস্থার প্রধানের অভিযোগ

গত ১৩ জুলাই শুরু হওয়া দ্রুজ এবং আরব বেদুইনদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, এই সহিংসতায় ১,২৮,৫৭১ জন মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন।

আরও পড়ুন: ইউরেনিয়াম মজুতের কোনো প্রমাণ নেই, তবু ফের ইরানে হামলার হুমকি ইসরাইলের

উল্লেখযোগ্যভাবে, সংঘর্ষ চলাকালীন ইসরাইল সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দফতরে এবং সুয়েইদা প্রদেশে সিরীয় বাহিনীর উপর বিমান হানার অভিযোগ ওঠে। তারা দাবী করেছে, তারা ‘ভাই’ দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে এই হামলা চালিয়েছে। যদিও, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রোববার রাতে তারা কোনও অভিযান চালায়নি বলে তাদের জানা নেই।

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুর সফরের প্রতিবাদে ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ

আল জাজিরার রিপোর্ট অনুযায়ী, সুয়েইদার সাতটি জেলা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বেদুইন অধ্যুষিত, এবং সেখানকার অনেক পরিবার নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করায় স্বেচ্ছায় প্রদেশ ছাড়ছেন।

সিরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ আল-দালাতি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম SANA-কে জানান, এই উদ্ধার কার্যক্রম সুয়েইদা থেকে বাস্তুচ্যুত দ্রুজ বাসিন্দাদেরও ঘরে ফিরতে সহায়তা করবে। “সুয়েইদার চারপাশে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে যাতে সহিংসতা বন্ধ থাকে এবং পুনর্মিলনের পথে এগোনো যায়,” বলেন তিনি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, শনিবারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী বেদুইন যোদ্ধাদের প্রদেশ ছাড়তে হবে এবং তারা যে দ্রুজ নারীদের বন্দি করে রেখেছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে।

তবে রোববার রাতে বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা ভেঙে পড়ার পর আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু মানবাধিকার সংস্থা ও পর্যবেক্ষক সংস্থা দাবি করে, ওই রাতেই ইসরায়েলি হেলিকপ্টার ও বিমান হামলার শব্দ শোনা গেছে সুয়েইদার কিছু গ্রামে, যেখানে ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়েছিল।

এদিকে, জাতিসংঘ ও সিরিয়ান রেড ক্রিসেন্ট যৌথভাবে প্রথম ত্রাণবাহী কনভয় সুয়েইদায় পাঠিয়েছে রবিবার, যাতে খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জ্বালানি ছিল।

অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ একদিকে দ্রুজ সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন, অন্যদিকে আক্রমণ চালানোদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কটাক্ষ করেছেন প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা শেখ হিকমত আল-হিজরি-র অনুগামী দলগুলোকে, যারা সংঘর্ষে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে।

২০১১ সাল থেকে চলা সিরিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে, গত ডিসেম্বরে আল-আসাদ পরিবারের পতনে অধিকাংশ দ্রুজ নাগরিক আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। তবে, আল-হিজরি, যিনি এক সময় বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করেছিলেন, বর্তমানে প্রেসিডেন্ট আল-শারাআর প্রতি বৈরী মনোভাব নিচ্ছেন, যা বাকি দ্রুজ নেতাদের মধ্যে বিরল।

এই উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটে বেদুইনদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা, সিরিয়ার শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সিরিয়ার সুয়েইদা থেকে বেদুইন পরিবারদের উদ্ধার, নাজুক যুদ্ধবিরতির মাঝে শান্তির প্রচেষ্টা

আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সুয়েইদা শহর থেকে শত শত বেদুইন পরিবারকে উদ্ধার করছে সরকার, যেখানে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলটিতে এক সপ্তাহব্যাপী দ্রুজ এবং বেদুইন যোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর একটি নাজুক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

সিরিয়ার সুয়েইদা থেকে বেদুইন পরিবারদের উদ্ধার, নাজুক যুদ্ধবিরতির মাঝে শান্তির প্রচেষ্টা

সোমবার সকালে প্রথম দফায় বেশ কিছু বেদুইন পরিবার বাস ও ট্রাকে করে নিরাপদে বেরিয়ে যান। তাদের সঙ্গে ছিল সিরিয়ান অ্যারাব রেড ক্রিসেন্ট-এর গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স। এই পরিবারগুলোকে পার্শ্ববর্তী দারায় স্থানান্তর করা হয়েছে। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রায় ১,৫০০ জনকে সরানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদক মোহাম্মদ ভাল সোমবার (09:00 GMT) জানান, ইতিমধ্যেই ১০টি বাসে করে অন্তত ৫০০ জন সুয়েইদা ছেড়েছেন এবং আরও পরিবার পরবর্তী ঘণ্টাগুলিতে এলাকা ত্যাগ করবেন বলে আশা।

আরও পড়ুন: গাজা শিশু ও ক্ষুধার্তদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে: রাষ্ট্র সংঘ সংস্থার প্রধানের অভিযোগ

গত ১৩ জুলাই শুরু হওয়া দ্রুজ এবং আরব বেদুইনদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, এই সহিংসতায় ১,২৮,৫৭১ জন মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন।

আরও পড়ুন: ইউরেনিয়াম মজুতের কোনো প্রমাণ নেই, তবু ফের ইরানে হামলার হুমকি ইসরাইলের

উল্লেখযোগ্যভাবে, সংঘর্ষ চলাকালীন ইসরাইল সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দফতরে এবং সুয়েইদা প্রদেশে সিরীয় বাহিনীর উপর বিমান হানার অভিযোগ ওঠে। তারা দাবী করেছে, তারা ‘ভাই’ দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে এই হামলা চালিয়েছে। যদিও, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রোববার রাতে তারা কোনও অভিযান চালায়নি বলে তাদের জানা নেই।

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুর সফরের প্রতিবাদে ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ

আল জাজিরার রিপোর্ট অনুযায়ী, সুয়েইদার সাতটি জেলা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বেদুইন অধ্যুষিত, এবং সেখানকার অনেক পরিবার নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করায় স্বেচ্ছায় প্রদেশ ছাড়ছেন।

সিরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ আল-দালাতি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম SANA-কে জানান, এই উদ্ধার কার্যক্রম সুয়েইদা থেকে বাস্তুচ্যুত দ্রুজ বাসিন্দাদেরও ঘরে ফিরতে সহায়তা করবে। “সুয়েইদার চারপাশে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে যাতে সহিংসতা বন্ধ থাকে এবং পুনর্মিলনের পথে এগোনো যায়,” বলেন তিনি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, শনিবারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী বেদুইন যোদ্ধাদের প্রদেশ ছাড়তে হবে এবং তারা যে দ্রুজ নারীদের বন্দি করে রেখেছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে।

তবে রোববার রাতে বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা ভেঙে পড়ার পর আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু মানবাধিকার সংস্থা ও পর্যবেক্ষক সংস্থা দাবি করে, ওই রাতেই ইসরায়েলি হেলিকপ্টার ও বিমান হামলার শব্দ শোনা গেছে সুয়েইদার কিছু গ্রামে, যেখানে ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়েছিল।

এদিকে, জাতিসংঘ ও সিরিয়ান রেড ক্রিসেন্ট যৌথভাবে প্রথম ত্রাণবাহী কনভয় সুয়েইদায় পাঠিয়েছে রবিবার, যাতে খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জ্বালানি ছিল।

অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ একদিকে দ্রুজ সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন, অন্যদিকে আক্রমণ চালানোদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কটাক্ষ করেছেন প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা শেখ হিকমত আল-হিজরি-র অনুগামী দলগুলোকে, যারা সংঘর্ষে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে।

২০১১ সাল থেকে চলা সিরিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে, গত ডিসেম্বরে আল-আসাদ পরিবারের পতনে অধিকাংশ দ্রুজ নাগরিক আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। তবে, আল-হিজরি, যিনি এক সময় বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করেছিলেন, বর্তমানে প্রেসিডেন্ট আল-শারাআর প্রতি বৈরী মনোভাব নিচ্ছেন, যা বাকি দ্রুজ নেতাদের মধ্যে বিরল।

এই উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটে বেদুইনদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা, সিরিয়ার শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।