১৫ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
কোমর বেঁধে নামলেন প্রশাসনিক কর্তারা

কলার ভেলা যখন অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতে জল যন্ত্রণায় বাদুড়িয়ার গ্রাম

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার
  • / 202

ইনামুল হক, বসিরহাট: অতিবৃষ্টির জলের গেরোয় এবার অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছতে অভিনব অ্যাম্বুলেন্স কলার ভেলা। এছাড়া উপায় নেই। জলের তলায় রাস্তা। সব যোগাযোগ ব্যবস্থা যখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তখন মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচাতে বিকল্প হিসেবে বেছে নিলেন কলা গাছের তৈরি ভেলা। কোমর সমান জল ভেঙে বাধা দড়ির টানে এগিয়ে চলেছে রোগীর কলার ভেলার এম্বুলেন্স।

পরিবারের লোকজন কেউ টানছে ভেলা। কেউবা ধরে রেখেছে রোগীর স্যালাইনের বোতল। আর এভাবেই তাদের কয়েক কিলোমিটার রাস্তা ভেঙে যানবাহনের সহযোগিতা নিতে হবে। তারপর পৌছবে কলকাতার হাসপাতালে। মানুষের জীবন মরণ এই অসম প্রতিযোগিতায় জিততে যেন বদ্ধপরিকর। সোশ্যাল মিডিয়া পুবের কলম ডিজিটালে এই ছবি ভাইরাল হতে শুক্রবার জলমগ্ন গ্রামগুলিতে পৌঁছলেন বাদুড়িয়া ও স্বরূপনগরের বিডিও প্রশাসনিক কর্তারা।

আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহ আনতে গিয়ে দুর্ঘটনা, হত ২

অসুস্থ রুগীকে কলার ভেলায় করে নিয়ে যেতে হচ্ছে হাসপাতালে। গ্রামে জল জমে এতটাই দুরবস্থা, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত জমে রয়েছে জল। চাষের জমি, বাড়িঘর, রাস্তা সব জলের তলায়, জনজীবন একপ্রকার স্তব্ধ।উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়ার ব্লকের চাতরা পঞ্চায়েতের হালুয়া, পাপিলা, কোটালবেড় , রসুই, পোতাপাড়া, সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘটনা।

লাগাতার কয়েক দিনের বৃষ্টিতে প্রতিবছরের মতন এ বছরেও বাদুড়িয়ার চাতরাপঞ্চায়েতের এইসব গ্রামে জমে রয়েছে জল। চাষের জমিতে ফসল নষ্ট, অন্যদিকে গ্রামের বাড়িঘর সব এক প্রকার জলের তলায় । বাড়ি থেকে বেরোনো দুষ্কর হয়ে পড়েছে মানুষের । বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না । বাচ্চাদের কাঁধে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে স্কুলে বা অন্যত্র । খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বেরোচ্ছে না বাড়ির বাইরে । কাজ কর্ম একপ্রকার বন্ধু হতে বসেছে । চাষবাস সব শেষ । সাপ পোকামাকড় উঠে যাচ্ছে ঘরে।

এলাকার মানুষের দাবি ইছামতি নদী সংস্কারের কাজ শুরুর দরকার। দরকার পদ্মা এবং যমুনা সংস্কারের। একাধিক জায়গা পরিদর্শন করেন বিডিও জনপ্রতিনিধিরা। স্বরূপনগরের বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, বনগাঁ, বাগদা, স্বরুপনগর, বাদুড়িয়ার একাধিক ব্লকে একটু বৃষ্টি হলেই সমস্যা হয়। দীর্ঘদিন নদীর সংস্কার হচ্ছে না‌ আমরা ইছামতি নদীর সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। এরপরে যমুনা পদ্মা সংস্কার করা হবে।

সলুয়া গ্রামে রোগীকে কলার ভেলায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল সেই ছবি রীতিমতো ব্লক ও জেলা প্রশাসনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছে জেলা প্রশাসন। দ্রুত জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং এলাকায় জলবায়ু রোগ প্রতিরোধ করতে স্বাস্থ্য কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সচেতনতার বার্তা দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণের পানীয় জল ওষুধ সরবরাহের সবরকম আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কোমর বেঁধে নামলেন প্রশাসনিক কর্তারা

কলার ভেলা যখন অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতে জল যন্ত্রণায় বাদুড়িয়ার গ্রাম

আপডেট : ২ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার

ইনামুল হক, বসিরহাট: অতিবৃষ্টির জলের গেরোয় এবার অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছতে অভিনব অ্যাম্বুলেন্স কলার ভেলা। এছাড়া উপায় নেই। জলের তলায় রাস্তা। সব যোগাযোগ ব্যবস্থা যখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তখন মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচাতে বিকল্প হিসেবে বেছে নিলেন কলা গাছের তৈরি ভেলা। কোমর সমান জল ভেঙে বাধা দড়ির টানে এগিয়ে চলেছে রোগীর কলার ভেলার এম্বুলেন্স।

পরিবারের লোকজন কেউ টানছে ভেলা। কেউবা ধরে রেখেছে রোগীর স্যালাইনের বোতল। আর এভাবেই তাদের কয়েক কিলোমিটার রাস্তা ভেঙে যানবাহনের সহযোগিতা নিতে হবে। তারপর পৌছবে কলকাতার হাসপাতালে। মানুষের জীবন মরণ এই অসম প্রতিযোগিতায় জিততে যেন বদ্ধপরিকর। সোশ্যাল মিডিয়া পুবের কলম ডিজিটালে এই ছবি ভাইরাল হতে শুক্রবার জলমগ্ন গ্রামগুলিতে পৌঁছলেন বাদুড়িয়া ও স্বরূপনগরের বিডিও প্রশাসনিক কর্তারা।

আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহ আনতে গিয়ে দুর্ঘটনা, হত ২

অসুস্থ রুগীকে কলার ভেলায় করে নিয়ে যেতে হচ্ছে হাসপাতালে। গ্রামে জল জমে এতটাই দুরবস্থা, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত জমে রয়েছে জল। চাষের জমি, বাড়িঘর, রাস্তা সব জলের তলায়, জনজীবন একপ্রকার স্তব্ধ।উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়ার ব্লকের চাতরা পঞ্চায়েতের হালুয়া, পাপিলা, কোটালবেড় , রসুই, পোতাপাড়া, সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘটনা।

লাগাতার কয়েক দিনের বৃষ্টিতে প্রতিবছরের মতন এ বছরেও বাদুড়িয়ার চাতরাপঞ্চায়েতের এইসব গ্রামে জমে রয়েছে জল। চাষের জমিতে ফসল নষ্ট, অন্যদিকে গ্রামের বাড়িঘর সব এক প্রকার জলের তলায় । বাড়ি থেকে বেরোনো দুষ্কর হয়ে পড়েছে মানুষের । বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না । বাচ্চাদের কাঁধে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে স্কুলে বা অন্যত্র । খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বেরোচ্ছে না বাড়ির বাইরে । কাজ কর্ম একপ্রকার বন্ধু হতে বসেছে । চাষবাস সব শেষ । সাপ পোকামাকড় উঠে যাচ্ছে ঘরে।

এলাকার মানুষের দাবি ইছামতি নদী সংস্কারের কাজ শুরুর দরকার। দরকার পদ্মা এবং যমুনা সংস্কারের। একাধিক জায়গা পরিদর্শন করেন বিডিও জনপ্রতিনিধিরা। স্বরূপনগরের বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, বনগাঁ, বাগদা, স্বরুপনগর, বাদুড়িয়ার একাধিক ব্লকে একটু বৃষ্টি হলেই সমস্যা হয়। দীর্ঘদিন নদীর সংস্কার হচ্ছে না‌ আমরা ইছামতি নদীর সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। এরপরে যমুনা পদ্মা সংস্কার করা হবে।

সলুয়া গ্রামে রোগীকে কলার ভেলায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল সেই ছবি রীতিমতো ব্লক ও জেলা প্রশাসনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছে জেলা প্রশাসন। দ্রুত জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং এলাকায় জলবায়ু রোগ প্রতিরোধ করতে স্বাস্থ্য কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সচেতনতার বার্তা দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণের পানীয় জল ওষুধ সরবরাহের সবরকম আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।