০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মেটিয়াবুরুজ ও সংলগ্ন পোশাক হাবে ১ জানুয়ারির আতঙ্ক, GST-এর কোপে কয়েক লক্ষ জীবিকা

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার
  • / 20

আবদুল ওদুদঃ আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পোশাক শিল্পে ১২ শতাংশ জিএসটি চালু হলে বিপুল ক্ষতির মুখে ওস্তাগার এবং কারিগররা। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে হতাশ মেটিয়াবুরুজ মহেশতলা এবং হাওড়ার উনসানী– অঙ্কুরহাটি– বাকড়ার পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার ব্যবসায়ীরা। ১২ শতাংশ জিএসটি কার্যকর করায় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা।

 

১২ শতাংশ জিএসটি কার্যকর প্রসঙ্গে লালি গারমেন্টসের কর্ণধার সেখ গিয়াসউদ্দিন বলেন– পাইকারি ব্যবসায়ীরা পোশাক তৈরি করে ১২ শতাংশ আয় করতে পারেন না। অথচ দেখা যাচ্ছে– সরকারকেই ১২ শতাংশ জিএসটি দিতে হবে। এই ১২ শতাংশ জিএসটি প্রদান করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা নিজেদের পুঁজি শেষ করে ফেলছেন। এই ১২ শতাংশ জিএসটি প্রদান করতে গিয়ে অনেককেই পথে বসতে হবে। পোশাক বিক্রি করে ১২ শতাংশ আয় নেই– অথচ ১২ শতাংশ জিএসটি এবার সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হবে।

 

আর এক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন গাজি বলেন– যাঁরা হোলসেল বা পাইকারি ব্যবসা করেন তাঁরা ১২ শতাংশ জিএসটি দিতে গিয়ে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। জিএসটি দিতে গিয়ে পোশাকের দাম বাড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। পোশাক উৎপাদন করার পরও আগের মতো বিক্রি হচ্ছে না। বিক্রিবাট্টা না হওয়ার কারণে মেটিয়াবুরুজ এলাকায় বহু ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে।

 

জাকির হোসেন গাজি আরও বলেন–  আমরা সাধারণত বলে থাকি করোনা আবহে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে— এই ধারণাটি সঠিক নয়– পোশাক শিল্পের উপর কালো মেঘের ছায়া নেমে এসেছে নোটবন্দির পর থেকেই। নোটবন্দির কয়েক মাস পরেই আবার কেন্দ্রীয় সরকার চালু করে জিএসটি। একে তো নোটবন্দি তার উপর আবার জিএসটি। এই দুই ধাক্কায় বেসামাল পুরো পোশাক শিল্প।

 

মেটিয়াবুরুজের আরও এক ওস্তাগার নুরুদ্দিন গাজি বলেন– পোশাক শিল্পে যখন ভ্যাট চালু ছিল– তখন এতটা ক্ষতি হয়নি। ব্যবসায়ীরা সরকারকে ভ্যাট দিলেও ব্যবসা ছিল স্বাভাবিক। জিএসটির থেকে ভ্যাট প্রদান অনেক ভালো ছিল। ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিয়েও এতটা ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি।

 

হাজী আনসার আল খান মনে করেন– পোশাক শিল্পের সঙ্গে রাজ্যজুড়ে প্রায় ২০ লক্ষের বেশি মানুষ জড়িত। মেটিয়াবুরুজ– বজবজ– মহেশতলা– ডায়মন্ড হারবার– জয়নগর আবার হাওড়ার অঙ্কুরহাটি– বাকড়া– উনসানী– আমতা প্রভৃতি এলাকায় এখন পোশাক শিল্প ছড়িয়ে পড়েছে। এই সমস্ত এলাকায় হাজার হাজার মানুষ জড়িত পোশাক শিল্পের সঙ্গে। ১২ শতাংশ জিএসটি কার্যকর করায় এই সমস্ত এলাকার হাজার হাজার ওস্তাগারও ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছেন। সব মিলিয়ে বাংলায় প্রায় ২০ লক্ষের মতো মানুষের জীবন বিপন্নের পথে।

 

পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত শুধু ওস্তাগার নয়– এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কাটিং মাস্টার– দর্জি– আয়রন ম্যান– প্যাকিংম্যান– ঠেলাওয়ালাও। ১২ শতাংশ জিএসটি কার্যকর করায় তারাও আজ কাজ হারাতে চলেছে। পোশাক শিল্প থেকে পুরোপুরি জিএসটি তুলে নেওয়ার দাবি জানান তিনি। এই ব্যবসার সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়িত। আর যারা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তারা উচ্চশিক্ষিত নয়– সবাই সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ। তাদের কথা বিবেচনা করে জিএসটি প্রত্যাহারের দাবি তুলছেন তাঁরা। আর জানুয়ারি মাস থেকে ১২ শতাংশ জিএসটি কার্যকর হলে পোশাক ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে বলে প্রস্তুতকারক ও কারিগরদের বক্তব্য।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মেটিয়াবুরুজ ও সংলগ্ন পোশাক হাবে ১ জানুয়ারির আতঙ্ক, GST-এর কোপে কয়েক লক্ষ জীবিকা

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার

আবদুল ওদুদঃ আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পোশাক শিল্পে ১২ শতাংশ জিএসটি চালু হলে বিপুল ক্ষতির মুখে ওস্তাগার এবং কারিগররা। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে হতাশ মেটিয়াবুরুজ মহেশতলা এবং হাওড়ার উনসানী– অঙ্কুরহাটি– বাকড়ার পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার ব্যবসায়ীরা। ১২ শতাংশ জিএসটি কার্যকর করায় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা।

 

১২ শতাংশ জিএসটি কার্যকর প্রসঙ্গে লালি গারমেন্টসের কর্ণধার সেখ গিয়াসউদ্দিন বলেন– পাইকারি ব্যবসায়ীরা পোশাক তৈরি করে ১২ শতাংশ আয় করতে পারেন না। অথচ দেখা যাচ্ছে– সরকারকেই ১২ শতাংশ জিএসটি দিতে হবে। এই ১২ শতাংশ জিএসটি প্রদান করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা নিজেদের পুঁজি শেষ করে ফেলছেন। এই ১২ শতাংশ জিএসটি প্রদান করতে গিয়ে অনেককেই পথে বসতে হবে। পোশাক বিক্রি করে ১২ শতাংশ আয় নেই– অথচ ১২ শতাংশ জিএসটি এবার সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হবে।

 

আর এক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন গাজি বলেন– যাঁরা হোলসেল বা পাইকারি ব্যবসা করেন তাঁরা ১২ শতাংশ জিএসটি দিতে গিয়ে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। জিএসটি দিতে গিয়ে পোশাকের দাম বাড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। পোশাক উৎপাদন করার পরও আগের মতো বিক্রি হচ্ছে না। বিক্রিবাট্টা না হওয়ার কারণে মেটিয়াবুরুজ এলাকায় বহু ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে।

 

জাকির হোসেন গাজি আরও বলেন–  আমরা সাধারণত বলে থাকি করোনা আবহে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে— এই ধারণাটি সঠিক নয়– পোশাক শিল্পের উপর কালো মেঘের ছায়া নেমে এসেছে নোটবন্দির পর থেকেই। নোটবন্দির কয়েক মাস পরেই আবার কেন্দ্রীয় সরকার চালু করে জিএসটি। একে তো নোটবন্দি তার উপর আবার জিএসটি। এই দুই ধাক্কায় বেসামাল পুরো পোশাক শিল্প।

 

মেটিয়াবুরুজের আরও এক ওস্তাগার নুরুদ্দিন গাজি বলেন– পোশাক শিল্পে যখন ভ্যাট চালু ছিল– তখন এতটা ক্ষতি হয়নি। ব্যবসায়ীরা সরকারকে ভ্যাট দিলেও ব্যবসা ছিল স্বাভাবিক। জিএসটির থেকে ভ্যাট প্রদান অনেক ভালো ছিল। ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিয়েও এতটা ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি।

 

হাজী আনসার আল খান মনে করেন– পোশাক শিল্পের সঙ্গে রাজ্যজুড়ে প্রায় ২০ লক্ষের বেশি মানুষ জড়িত। মেটিয়াবুরুজ– বজবজ– মহেশতলা– ডায়মন্ড হারবার– জয়নগর আবার হাওড়ার অঙ্কুরহাটি– বাকড়া– উনসানী– আমতা প্রভৃতি এলাকায় এখন পোশাক শিল্প ছড়িয়ে পড়েছে। এই সমস্ত এলাকায় হাজার হাজার মানুষ জড়িত পোশাক শিল্পের সঙ্গে। ১২ শতাংশ জিএসটি কার্যকর করায় এই সমস্ত এলাকার হাজার হাজার ওস্তাগারও ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছেন। সব মিলিয়ে বাংলায় প্রায় ২০ লক্ষের মতো মানুষের জীবন বিপন্নের পথে।

 

পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত শুধু ওস্তাগার নয়– এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কাটিং মাস্টার– দর্জি– আয়রন ম্যান– প্যাকিংম্যান– ঠেলাওয়ালাও। ১২ শতাংশ জিএসটি কার্যকর করায় তারাও আজ কাজ হারাতে চলেছে। পোশাক শিল্প থেকে পুরোপুরি জিএসটি তুলে নেওয়ার দাবি জানান তিনি। এই ব্যবসার সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়িত। আর যারা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তারা উচ্চশিক্ষিত নয়– সবাই সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ। তাদের কথা বিবেচনা করে জিএসটি প্রত্যাহারের দাবি তুলছেন তাঁরা। আর জানুয়ারি মাস থেকে ১২ শতাংশ জিএসটি কার্যকর হলে পোশাক ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে বলে প্রস্তুতকারক ও কারিগরদের বক্তব্য।