শুক্রবারের ইডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে টি২০ সিরিজ জয় ভারতের
- আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২, শনিবার
- / 66
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কলকাতা তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ। গত বুধবার প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মারা। আজ শুক্রবার ইডেনে টি২০ স্পেশালিস্ট কায়রন পোলার্ডদের শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৮ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে গোটা সিরিজ জিতে নিল টিম ইন্ডিয়া।
রাতের দিকে ইডেনে দ্বিতীয় ইনিংসে ফিল্ডিং করা যে কোনও দলকে ‘ডিউ ফ্যাক্টর’ সমস্যায় ফেলে, সেটা আগের ম্যাচে দারুণভাবে টের পেয়েছেন টিম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেটা মাথায় রেখে শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় টি ২০ ম্যাচে টসে জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক কায়রন পোলার্ড। একই সঙ্গে ইডেনের সন্ধেবেলার শুরুর পিচের অ্যাডভান্টেজও নিতে চেয়েছিলেন তারা। সেই অনুযায়ী ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে ফর্মে থাকা ভারতীয় ওপেনার ঈশান কিষানকে মাত্র ২ রানে প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখিয়ে দেন কটরেল।
শুরুতে ঈশান কিষান ফিরলেও, ক্রিজে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা শুরু করেন রোহিত বিরাট জুটি। পাওয়ার প্লে’তে বিরাট ও রোহিত শর্মা ক্যারিবিয়ান বোলারদের রীতিমতো খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিতে থাকেন। ভারতের প্রাক্তন ও বর্তমান অধিনায়কের মধ্যে যেন চার ছয়ের বন্যা বইয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এ ম্যাচে অবশ্য বিরাট ও রোহিত দু’জনের সামনে ছিল বিশ্বরেকর্ড গড়ার সুযোগ। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের মালিক নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গুপ্তিল (৩২৯৯ রান)। গুপ্তিলকে পিছনে ফেলে সর্বোচ্চ রেকর্ডের মালিক হতে ব্যাট করতে নামার আগে কোহলির প্রয়োজন ছিল ৫৬। এবং রোহিতের প্রয়োজন ছিল ৬৩ রান।
ক্যারিবিয়ান স্পিনার রস্টোন চেজের বল রোহিতের ব্যাটের কানায় লেগে ওপরে উঠে আসে। সেটা জমা পড়ে ব্রেন্ডনের হাতে। আর এতে রোহিতকে সাজঘরে ফিরতে হয় মাত্র ১৯ রান করে। একই সঙ্গে তার গুপ্তিলকে পিছনে ফেলে শীর্ষে উঠে আসার সুযোগ অন্তত এ ম্যাচের জন্য মাঠে ছেড়ে আসতে হল। বিশ্বরেকর্ড গড়া থেকে ৪৪ রানে দূরে থাকলেন রোহিত। আর তখনই আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের মালিক হওয়ার সুযোগ চলে এককভাবে চলে আসে কোহলির সামনে। দীর্ঘ সময় অফ ফর্মে থাকার পর যেভাবে তার ব্যাট থেকে রানের ফুলঝুরি ঝরছিল, তাতে কোহলি ভক্তরা ইডেনে ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় ছিলেন।
ব্যাটে রানখরা কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর রানে ফিরলেন কোহলি। তাও আবার পয়া ইডেনে। যেখানে তিনি ২০১৯ সালে এই ইডেনে শেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে গোলাপি বলের টেস্টে। এদিনও কোহলিকে হতাশ করল না ক্রিকেটের নন্দন কানন। হাফ সেঞ্চুরি পেলেন কোহলি। এটি ইডেনে তার টি২০ ক্রিকেটের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩০তম। ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইতিহাস গড়ার দিকে। কারণ, আর মাত্র ৬ রান করলেই ইতিহাস গড়ে ফেলতেন তিনি। কিন্তু এদিন সেই চেজের বলে বোল্ড হয়ে ৫২ রানের মাথায় ফিরে ইতিহাস গড়া থেকে চার ধাপ দূর থেকে গেলেন।
এ ম্যাচে বিরাট ক্রিজে ফেরার আগে অবশ্য গত ম্যাচে ভারতকে জয় এনে দেওয়ার অন্যতম কারিগর সূর্যকুমার যাদব (৮) কট অ্যান্ড বোল্ড হন সেই রস্টোন চেজের বলে। ইডেনে আগের ম্যাচে মাত্র ৮ রান করে ফেরা ঋষভ পন্থ কিন্তু এদিন ব্যাট হাতে ক্রিজে জমে যান। নাইট রাইডার্সের ঘরের ছেলে ভেঙ্কাটেশ আইয়ারের সঙ্গে জুটিতে স্কোর বোর্ডে রীতিমতো ঝড় তুলতে থাকেন পন্থ।১৯.৩ ওভারে মাত্র ১৮ বলে ঝোড়ো ৩৩ রান করে সেইফার্টের শিকার হলেন ভেঙ্কাটেশ। তবে পন্থকে থামানো যায়নি। তিনিও হাঁকালেন হাফ সেঞ্চুরি। ৫২ রানের একটি চমকপ্রদ ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত ভারতের স্কোর বোর্ডে ১৮৭ রান জমা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করলেন।
১৮৮ রানের জয়ে লক্ষ্যমাত্রা মাথায় নেমে ব্যাট করতে নেমে ক্রিজে ক্রমে থিতু হয়ে বসেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটাররা। চাহালের বলে ৯ রান করে কাইলি মায়ার্স কট অ্যান্ড বোল্ড হলেও, দলের আর এক ওপেনার ব্রেন্ডন কিং লম্বা রানের জুটি বাঁধেন আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ ৬১ রান করা নিকোলাস পুরান। এরপর ব্রেন্ডন কিংকে (২২) আউট করেন গত ম্যাচে ভারতের টি২০ দলের জার্সিতে অভিষেক হওয়া রবি বিষনোই। বাকি ম্যাচে ভারতীয় দলের এই দুই স্পিনার ক্যারিবিয়ান দলের বাল্লেবাজদের ওপর চেপে বসতে পারলেন না।
এদিন ম্যাচে ভারতীয় দলের তিন পেসারকে অবশ্য বিশেষ পাত্তা দিলেন না পাওয়েল ও পুরানের মতো ব্যাটার। তার মধ্যে ১৫ ওভার ৫ বলে ৩৮ রানের মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা রভম্যান পাওয়েলের নিশ্চিত ক্যাচ ছেড়ে চাপে পড়লেন ভুবনেশ্বর কুমার। এতে পরের ম্যাচে মুহাম্মদ সিরাজ ও অভেস খানকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে পারেন নির্বাচকরা। এর মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের দুই ব্যাটার পাওয়েল ও পুরান হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসলেন। যদিও শেষ মুহূর্তে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে চালিয়ে খেলতে গিয়ে ৬২ রানে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে বিষনোইয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন পুরান। এরপর ক্রিজে শততম টি২০ ম্যাচ খেলতে নেমে পড়েন কায়রন পোলার্ড। কিন্তু নিজের শততম টি২০ স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না পোলার্ড। ক্রিজের অন্য প্রান্তে ঝোড়ো ৬৮ রানের ইনিংস খেললেও, দলকে জেতাতে পারলেন না রভম্যান পাওয়েল।





























