উদয়পুরের ঘটনায় ধিক্কার ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অব্যাহত

- আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার
- / 12
পূবের কলম ওয়েবডেস্কঃ উদয়পুরে ঘটেছে একটি মর্মন্তুদ ঘটনা। কানাহাইয়া লাল নামে একজন দর্জিকে নির্দয়ভাবে খুন করে দুই ব্যক্তি রিয়াজ আখতারি এবং গাউস মুহাম্মদ। শুধু তাই নয়, তারা ওই খুনের ঘটনার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করে।
সংবাদ সূত্র অনুযায়ী, ওই দুই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও হুমকি প্রদান করেছে। জানা গেছে, নিহত ব্যক্তি কানাহাইয়া লালকে পুলিশ এর আগে অবমাননাকর পোস্ট করার জন্য গ্রেফতার করেছিল এবং সতর্কও করেছিল। কিন্তু সে বিরত হয়নি। তবে যাই হোক, যে কাজ ওই দুই ব্যক্তি করেছে বোঝা যায় তাদের উদ্দেশ্য ছিল ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া। নইলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই নৃশংস ঘটনার ছবি পোস্ট করার আর কি লক্ষ্য থাকতে পারে।
বোঝা যায়, আমাদের দেশে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক। কুৎসাকর পোস্ট আর তার পাল্টা পোস্ট, ভড়কাও ভাষণে শুধু খুন নয়, গণহত্যার ডাক, শত শত বছর ধরে যে স্থানের নামে মুসলিম সংযোগ রয়েছে, তা পরিবর্তিত করে দেওয়া, সিএএ জাতীয় আইন, বুলডোজার দিয়ে শুধুমাত্র সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া, এই ধরনের নানা পদক্ষেপে দেশের আবহাওয়া যে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে তাতে সন্দেহ নেই। এই পরিস্থিতি দেশকে এক অশান্তি ও বিদ্বেষমূলক অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। উপরন্তু ধর্মীয় মহাপুরুষদের বিরুদ্ধে কুৎসা করার প্রচেষ্টা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত ও জটিল করে তুলেছে। দেশ জুড়ে এই ধরনের অবস্থা আগে কখনই দেখা যায়নি।
বেশ বোঝা যায়, পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের এক অবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে, যা শুধু ঘৃণা- বিদ্বেষেরই জন্ম দেয়। মানবিকতা, সহযোগিতা, পারস্পরিক সৌহার্দ এই কথাগুলি দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই উদয়পুরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার নিন্দা সকলেই জানিয়েছেন। বিশেষ করে জানিয়েছে, মুসলিম ধর্মীয় সংগঠনগুলি। তারা শুধু নিন্দা নয়, এই ঘটনাকে প্রবলভাবে ধিক্কারও জানিয়েছে।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এবং পুলিশের বড় কর্তারা সকলকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছেন। অশোক গেহলট একথাও বলেছেন, বর্তমানে ভারতে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে প্রধানমন্ত্রী মোদির উচিত দেশবাসীর উদ্দেশে শান্তি ও সংহতির আবেদন করা। রাজস্থান পুলিশ সহিংসতা রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। সারা রাজ্যে ইন্টারনেট বন্ধ, উদয়পুর শহরে বেশকিছু থানা এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে, সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হত্যাকারী রিয়াজ আখতারি ও গাউস মুহাম্মদ-সহ আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনআইএ-র হাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই ঘটনার তদন্তভার তুলে দিয়েছে।
জমিয়তে উলেমা হিন্দ ও জামায়াতে ইসলামী এই ঘৃণিত হত্যাকাণ্ডকে তীব্র ধিক্কার জানিয়ে বলেছে, এই নৃশংস ঘটনার যৌক্তিকতা কোনওভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। এই কাজ ইসলামের সম্পূর্ণ বিরোধী। জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাকিমউদ্দীন কাসমী এই বর্বর ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, নবী মুহাম্মদ সা.-র অবমাননাকে অজুহাত করে এই ধরনের কাজ আইন বিরুদ্ধ তো বটেই, সেইসঙ্গে ইসলাম ধর্মেরও সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। তিনি নাগরিকদের কাছে এই আবেদনও করেছেন, তাঁরা যেন সকলেই সংযত আচরণ করেন এবং দেশে শান্তি বজায় রাখেন।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট আরও বলেছেন, অপরাধীদের কোনও মতেই রেয়াত করা হবে না। এই ঘটনায় মানুষ যে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত তা সকলেই উপলব্ধি করছেন। কিন্তু দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনাটি রাজস্থানের হিন্দু, মুসলিম সকলকেই আহত করেছে।