০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আর্সেনিক মিশ্রিত জল খেয়ে বাড়ছে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা, বিহারে মৃত্যুর মুখে বহু মানুষ

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, সোমবার
  • / 18

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: আর্সেনিক মৌলটির নাম শুনলেই এখন অনেকের আতঙ্ক হয়। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহারের পাশাপাশি বাংলাদেশের নানান জায়গায় ভূগর্ভস্থ জলে সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক রয়েছে এমনটাই এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। বিশেষত গঙ্গা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র এই তিনটি নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে যে বিপুল জনবসতি রয়েছে, সেখানে ভূগর্ভস্ত জলস্তরে আর্সেনিকের প্রভাব সব চেয়ে বেশি বলেই জানা গেছে। যার ফলস্বরূপ এই অঞ্চলের বহু মানুষ আজ ক্যানসারের মতো মারণরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া এক সমীক্ষা অনুসারে, বিহারে গঙ্গার তীরে অবস্থিত গ্রাম গুলিতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা। যত দিন যাচ্ছে সেই সংখ্যা আরও বেড়ে চলেছে। শুধু মাত্র গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে নয়, সমগ্র রাজ্য জুড়ে চিত্রটি একই।

বিহারে প্রতি ৫ থেকে ৮ মিনিট অন্তর একজন করে ক্যানসার আক্রান্তের মৃত্যু হচ্ছে। ক্যানসারে আক্রান্তের ক্ষেত্রে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম রাজ্য বিহার। আর্সেনিক জল পান করার পরই এই মারণরোগে আক্রান্ত হচ্ছে বিহারের বাসিন্দারা, এমনটাই সমীক্ষায় জানা গেছে।ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দেশের যে রাজ্য গুলিতে সবচেয়ে বেশি সেগুলি হল উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ।

এই সকল রাজ্য গুলোতে বার্ষিক ১ লক্ষেরও বেশি মানুষের নানা রকম ক্যানসার ধরা পড়ে। তবে আক্রান্তের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্যানসারে মৃতের সংখ্যাও। ২০২২ সালে উপরোক্ত রাজ্য গুলির মধ্যে ক্যানসারে মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে বিহারের স্থান ছিল চতুর্থ স্থানে। গঙ্গার নিকটবর্তী এলাকাগুলিতে আর্সেনিকযুক্ত জল পানের ফলেই বিহার জুড়ে ত্রাস চালাচ্ছে মারণ রোগ ক্যানসার এমনটাই অভিযোগ।এমনকি বিহারের রাজধানী পাটনার সংলগ্ন মানের পঞ্চায়েত এলাকায় গত ১০ বছরে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ এই মারণ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

ভয়াবহ এই রোগে গ্রামের বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সব কিছু জানা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে আর্সেনিক যুক্ত জল পান করতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামের একাংশ, এমনটাই সমীক্ষাতে উঠে এসেছে। এই প্রসঙ্গে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, গ্রামের প্রতিটি ঘরে প্রায় একজন করে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকারি তরফে কোন পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে না বলেই অভিযোগ। তিনি আরও জানান, জলের কোনও উৎস না থাকায় বাধ্য হয়ে আর্সেনিক মিশ্রিত জল খেতে হয়। তাঁদের কাছে যে জল সরবরাহ হয় তা কখনও লাল কখনও হলুদ রং-এর হয় বলেও জানান তিনি। এই প্রসঙ্গে গ্রাম প্রধান শৈলেশ কুমার জানিয়েছেন, তাঁর বাবা-মারও মৃত্যু হয়েছে এই মরন রোগে। এই বিষয়ে ওই এলাকার এসডিএম প্রদীপ সিং-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এমন খবর তিনি জেনেছেন সংবাদপত্র থেকে।

‘জলজীবন হরিয়ালির’ মতো প্রকল্পগুলির রূপায়ন সঠিকভাবে হয়নি। আমরা এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এই ধরনের মামলার মনিটরিং জেলা পর্যায়ে করা হয়। যদি কেউ এসে অভিযোগ করে, তাহলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করব,’ বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে, রাজ্যের ডেপুটি সিএম এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব বলেছেন, “আমাদের সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। এমনকি আমরা টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের সঙ্গে ক্যানসারের চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছি। আমরা রাজ্যের ছয়টি মেডিকেল কলেজে এই পরিষেবা দিচ্ছি।

এমনকি রাজ্যের ৩৮ টি জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের জন্য ক্যানসার ড্রাগ মরফিন এবং পরীক্ষার সুবিধা প্রদান করতে চলেছি।” হোমি জে ভাবা ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অফিসার ইন-চার্জ ডাঃ রবি কান্ত বলেছেন প্রতি বছর বিহারে প্রায় ১.৫ লক্ষ ক্যানসার রোগী পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এর সবচেয়ে বড় কারণ হল তামাক।বিহারে আর্সেনিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুরো বিহারের কথা বলতে পারব না, কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

বিহার ছাড়াও বাংলায় আর্সেনিকের কারণে ক্যানসারের রোগী পাওয়া গেছে। মুজাফফরপুর, বক্সার, বেত্তিয়ায় এই ধরনের ঘটনা সব থেকে বেশি। তবে সমগ্র বিহারে আর্সেনিকের প্রভাবের ক্ষেত্রে আমাদের একটি ডাটা তৈরি করতে হবে। তারপরেই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে সমগ্র বিহারে আর্সেনিক সংক্রমের প্রকৃত অবস্থা কেমন। আর্সেনিক দূষণ ভয়াবহ মাত্রায় হওয়ার আগেই আমাদের সকলকে সতর্ক হতে হবে। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারকেই এ বিষয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের পরামর্শ নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজনে আর্সেনিক কবলিত অঞ্চলগুলিকে ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে চিহ্ণিত করে খাদ্যদ্রব্য আনায় বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আর্সেনিক মিশ্রিত জল খেয়ে বাড়ছে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা, বিহারে মৃত্যুর মুখে বহু মানুষ

আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, সোমবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: আর্সেনিক মৌলটির নাম শুনলেই এখন অনেকের আতঙ্ক হয়। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহারের পাশাপাশি বাংলাদেশের নানান জায়গায় ভূগর্ভস্থ জলে সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক রয়েছে এমনটাই এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। বিশেষত গঙ্গা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র এই তিনটি নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে যে বিপুল জনবসতি রয়েছে, সেখানে ভূগর্ভস্ত জলস্তরে আর্সেনিকের প্রভাব সব চেয়ে বেশি বলেই জানা গেছে। যার ফলস্বরূপ এই অঞ্চলের বহু মানুষ আজ ক্যানসারের মতো মারণরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া এক সমীক্ষা অনুসারে, বিহারে গঙ্গার তীরে অবস্থিত গ্রাম গুলিতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা। যত দিন যাচ্ছে সেই সংখ্যা আরও বেড়ে চলেছে। শুধু মাত্র গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে নয়, সমগ্র রাজ্য জুড়ে চিত্রটি একই।

বিহারে প্রতি ৫ থেকে ৮ মিনিট অন্তর একজন করে ক্যানসার আক্রান্তের মৃত্যু হচ্ছে। ক্যানসারে আক্রান্তের ক্ষেত্রে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম রাজ্য বিহার। আর্সেনিক জল পান করার পরই এই মারণরোগে আক্রান্ত হচ্ছে বিহারের বাসিন্দারা, এমনটাই সমীক্ষায় জানা গেছে।ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দেশের যে রাজ্য গুলিতে সবচেয়ে বেশি সেগুলি হল উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ।

এই সকল রাজ্য গুলোতে বার্ষিক ১ লক্ষেরও বেশি মানুষের নানা রকম ক্যানসার ধরা পড়ে। তবে আক্রান্তের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্যানসারে মৃতের সংখ্যাও। ২০২২ সালে উপরোক্ত রাজ্য গুলির মধ্যে ক্যানসারে মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে বিহারের স্থান ছিল চতুর্থ স্থানে। গঙ্গার নিকটবর্তী এলাকাগুলিতে আর্সেনিকযুক্ত জল পানের ফলেই বিহার জুড়ে ত্রাস চালাচ্ছে মারণ রোগ ক্যানসার এমনটাই অভিযোগ।এমনকি বিহারের রাজধানী পাটনার সংলগ্ন মানের পঞ্চায়েত এলাকায় গত ১০ বছরে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ এই মারণ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

ভয়াবহ এই রোগে গ্রামের বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সব কিছু জানা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে আর্সেনিক যুক্ত জল পান করতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামের একাংশ, এমনটাই সমীক্ষাতে উঠে এসেছে। এই প্রসঙ্গে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, গ্রামের প্রতিটি ঘরে প্রায় একজন করে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকারি তরফে কোন পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে না বলেই অভিযোগ। তিনি আরও জানান, জলের কোনও উৎস না থাকায় বাধ্য হয়ে আর্সেনিক মিশ্রিত জল খেতে হয়। তাঁদের কাছে যে জল সরবরাহ হয় তা কখনও লাল কখনও হলুদ রং-এর হয় বলেও জানান তিনি। এই প্রসঙ্গে গ্রাম প্রধান শৈলেশ কুমার জানিয়েছেন, তাঁর বাবা-মারও মৃত্যু হয়েছে এই মরন রোগে। এই বিষয়ে ওই এলাকার এসডিএম প্রদীপ সিং-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এমন খবর তিনি জেনেছেন সংবাদপত্র থেকে।

‘জলজীবন হরিয়ালির’ মতো প্রকল্পগুলির রূপায়ন সঠিকভাবে হয়নি। আমরা এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এই ধরনের মামলার মনিটরিং জেলা পর্যায়ে করা হয়। যদি কেউ এসে অভিযোগ করে, তাহলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করব,’ বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে, রাজ্যের ডেপুটি সিএম এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব বলেছেন, “আমাদের সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। এমনকি আমরা টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের সঙ্গে ক্যানসারের চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছি। আমরা রাজ্যের ছয়টি মেডিকেল কলেজে এই পরিষেবা দিচ্ছি।

এমনকি রাজ্যের ৩৮ টি জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের জন্য ক্যানসার ড্রাগ মরফিন এবং পরীক্ষার সুবিধা প্রদান করতে চলেছি।” হোমি জে ভাবা ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অফিসার ইন-চার্জ ডাঃ রবি কান্ত বলেছেন প্রতি বছর বিহারে প্রায় ১.৫ লক্ষ ক্যানসার রোগী পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এর সবচেয়ে বড় কারণ হল তামাক।বিহারে আর্সেনিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুরো বিহারের কথা বলতে পারব না, কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

বিহার ছাড়াও বাংলায় আর্সেনিকের কারণে ক্যানসারের রোগী পাওয়া গেছে। মুজাফফরপুর, বক্সার, বেত্তিয়ায় এই ধরনের ঘটনা সব থেকে বেশি। তবে সমগ্র বিহারে আর্সেনিকের প্রভাবের ক্ষেত্রে আমাদের একটি ডাটা তৈরি করতে হবে। তারপরেই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে সমগ্র বিহারে আর্সেনিক সংক্রমের প্রকৃত অবস্থা কেমন। আর্সেনিক দূষণ ভয়াবহ মাত্রায় হওয়ার আগেই আমাদের সকলকে সতর্ক হতে হবে। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারকেই এ বিষয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের পরামর্শ নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজনে আর্সেনিক কবলিত অঞ্চলগুলিকে ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে চিহ্ণিত করে খাদ্যদ্রব্য আনায় বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে।