০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাজেটে সংখ্যালঘু খাতে বরাদ্দ বেড়ে ৫, ১৬৬.৯৯ কোটি টাকা

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, বুধবার
  • / 12

আবদুল ওদুদঃ সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর এই পঞ্চায়েতকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করলেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংখ্যালঘু বাজেট বরাদ্দের হার প্রতি বছরই বাড়িয়েছে। এবছরও সেই ধারা অব্যাহত রাখল। বিধানসভায় বাজেট ঘোষণায় সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য গত বাজেটের থেকে এবারও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

গত বারের তুলনায় এবছর বাজেটে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বেড়েছে ১৬২.৯৪ কোটি টাকা। গত ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে সংখ্যালঘুদের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৫,০০৪.০৫ কোটি টাকা। এবছর বাজেট বৃদ্ধি করে তা হয়েছে ৫,১৬৬.৯৯ কোটি টাকা।

বাজেট পেশ করতে গিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্য সরকার ২০১৯-২০ সালে ‘ঐক্যশ্রী’ মেধা বৃত্তি প্রকল্প চালু করে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য। আর এই প্রকল্পের ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে আবেদন জমা পড়েছে ৪৫ লক্ষেরও বেশি। তার মধ্যে ইতিমধ্যেই ৬৬ হাজার জনের মেধা বৃত্তি চালু করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেধাবি পড়ুয়ারা এবং দেশের বাইরে পড়াশোনা করছেন যারা তাঁদের জন্য শিক্ষা ঋণ দেওয়া সুনিশ্চিত করা হয়েছে। কারিগরি, প্রযুক্তি, কর্মপোযোগী বিভিন্ন কোর্সে এই পর্যন্ত  ১, ৫৫২ জন ছাত্র ছাত্রীর জন্য ২০.৭৪ কোটি টাকা শিক্ষা ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে বিভিন্ন মেয়াদি ঋণ, ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বউদ্যোগ মূলক ও স্বনিযুক্তি মূলক কর্ম প্রকল্পে উৎসাহ দিতেই এই ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫২৪৬ জন সুবিধা প্রাপককে মেয়াদি ঋণ, ৫৮৮৩৯টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যকে ক্ষুদ্র ঋণ বাবদ ১৬৮.১৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

বিধানসভায় বাজেট পেশ করতে গিয়ে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আরও বলেন, রাজ্য সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও অত্যাধুনিক ও সময়োপযোগী করে তুলতে পাঠ্যসূচি মূল্যায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ৭টি নতুন পাঠ্য বই, ৮৪টি সংশোধিত পাঠ্য বই  পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ প্রকাশ করেছে। টাটা ইন্সিটিউট অফ স্যোসাল সায়েন্সের সহযোগিতায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য ৬ সপ্তাহের একটি ট্রেনিং শুরু হয়েছে। যার উপর সার্টিফিকেট কোর্স অনলাইন চালু করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ জন মাদ্রাসা শিক্ষক এই কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পিছিয়ে পড়া মালদহ জেলায় ৪০ টি মাদ্রাসা ইউনিসেফ এবং বিক্রমশিলা এডুকেশন রিসোর্স সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে বিশেষ ডিজিট্যাল প্রশিক্ষণের প্যাকেজ প্রকল্প চালু হয়েছে। এর দ্বারা ছাত্রছাত্রীরা তাঁরা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্প, ইন্টিগ্রেটেট মাইনোরিটি ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং মাইগ্রেন ডোমেস্টিক ওয়াকারের উদ্যোগে তিনটি বৃহৎ প্রকল্প শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে সং’্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নোয়নের কাজ শুরু হয়েছে। (এমএসডিপি) প্রকল্পে ২৯৫.৪৭ কোটি টাকা চলতি অর্থবর্ষে সংখ্যালঘু উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে। এছাড়াও (আইএমডিপি) স্কিমে ১৪টি জেলার ৩২টি ব্লকে পরিকাঠামোর রূপায়নে ৩০.৩০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। একইভাবে ২৩ টি জেলার বিভিন্ন ব্লকে এমডিডব্লিউ স্কিমে ৯০.৭৮ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।

চন্দ্রিমা আরও বলেন,সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য স্কুল ও কলেজে ৬০৪টি হস্টেল তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৪২৪টি চালু হয়ে গিয়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় ৩০৫টি কর্মতীর্থ তৈরি করা হয়েছে। এখানে সংখ্যালঘু মানুষজন তাঁদের কৃষি উৎপন্ন, লোকশিল্প, স্বনির্ভরগোষ্ঠীর স্বনিযুক্ত সদস্যরা নিজেদের পণ্য বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছেন। সংখ্যালঘুদের ডব্লুবিসিএস অফিসার তৈরি করতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম, ডিএমই,  রাজ্য হজ কমিটি এবং উর্দু অ্যাকাডেমির যৌথ প্রচেষ্টায় হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে কোচিং এবং কাউন্সেলিং সহ কেরিয়ার গাইডেন্স দেওয়া হচ্ছে।

এবারের বাজেট ভাষণে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ উল্লে’ করে বলা হয় এখানে ২৩টি বিভিন্ন বিভাগে ৪৯টি বিভিন্ন শিক্ষামুলক বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। চলতি বছরই ১২২ জন পড়ুয়া নেট, সেট, গেট ইত্যাদি বিভিন্ন পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০জন মেধাবি ছাত্র পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছে। প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১১ জন পড়ুয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরিতে নিযুক্ত হয়েছেন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বাজেটে সংখ্যালঘু খাতে বরাদ্দ বেড়ে ৫, ১৬৬.৯৯ কোটি টাকা

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, বুধবার

আবদুল ওদুদঃ সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর এই পঞ্চায়েতকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করলেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংখ্যালঘু বাজেট বরাদ্দের হার প্রতি বছরই বাড়িয়েছে। এবছরও সেই ধারা অব্যাহত রাখল। বিধানসভায় বাজেট ঘোষণায় সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য গত বাজেটের থেকে এবারও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

গত বারের তুলনায় এবছর বাজেটে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বেড়েছে ১৬২.৯৪ কোটি টাকা। গত ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে সংখ্যালঘুদের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৫,০০৪.০৫ কোটি টাকা। এবছর বাজেট বৃদ্ধি করে তা হয়েছে ৫,১৬৬.৯৯ কোটি টাকা।

বাজেট পেশ করতে গিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্য সরকার ২০১৯-২০ সালে ‘ঐক্যশ্রী’ মেধা বৃত্তি প্রকল্প চালু করে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য। আর এই প্রকল্পের ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে আবেদন জমা পড়েছে ৪৫ লক্ষেরও বেশি। তার মধ্যে ইতিমধ্যেই ৬৬ হাজার জনের মেধা বৃত্তি চালু করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেধাবি পড়ুয়ারা এবং দেশের বাইরে পড়াশোনা করছেন যারা তাঁদের জন্য শিক্ষা ঋণ দেওয়া সুনিশ্চিত করা হয়েছে। কারিগরি, প্রযুক্তি, কর্মপোযোগী বিভিন্ন কোর্সে এই পর্যন্ত  ১, ৫৫২ জন ছাত্র ছাত্রীর জন্য ২০.৭৪ কোটি টাকা শিক্ষা ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে বিভিন্ন মেয়াদি ঋণ, ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বউদ্যোগ মূলক ও স্বনিযুক্তি মূলক কর্ম প্রকল্পে উৎসাহ দিতেই এই ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫২৪৬ জন সুবিধা প্রাপককে মেয়াদি ঋণ, ৫৮৮৩৯টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যকে ক্ষুদ্র ঋণ বাবদ ১৬৮.১৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

বিধানসভায় বাজেট পেশ করতে গিয়ে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আরও বলেন, রাজ্য সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও অত্যাধুনিক ও সময়োপযোগী করে তুলতে পাঠ্যসূচি মূল্যায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ৭টি নতুন পাঠ্য বই, ৮৪টি সংশোধিত পাঠ্য বই  পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ প্রকাশ করেছে। টাটা ইন্সিটিউট অফ স্যোসাল সায়েন্সের সহযোগিতায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য ৬ সপ্তাহের একটি ট্রেনিং শুরু হয়েছে। যার উপর সার্টিফিকেট কোর্স অনলাইন চালু করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ জন মাদ্রাসা শিক্ষক এই কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পিছিয়ে পড়া মালদহ জেলায় ৪০ টি মাদ্রাসা ইউনিসেফ এবং বিক্রমশিলা এডুকেশন রিসোর্স সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে বিশেষ ডিজিট্যাল প্রশিক্ষণের প্যাকেজ প্রকল্প চালু হয়েছে। এর দ্বারা ছাত্রছাত্রীরা তাঁরা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্প, ইন্টিগ্রেটেট মাইনোরিটি ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং মাইগ্রেন ডোমেস্টিক ওয়াকারের উদ্যোগে তিনটি বৃহৎ প্রকল্প শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে সং’্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নোয়নের কাজ শুরু হয়েছে। (এমএসডিপি) প্রকল্পে ২৯৫.৪৭ কোটি টাকা চলতি অর্থবর্ষে সংখ্যালঘু উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে। এছাড়াও (আইএমডিপি) স্কিমে ১৪টি জেলার ৩২টি ব্লকে পরিকাঠামোর রূপায়নে ৩০.৩০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। একইভাবে ২৩ টি জেলার বিভিন্ন ব্লকে এমডিডব্লিউ স্কিমে ৯০.৭৮ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।

চন্দ্রিমা আরও বলেন,সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য স্কুল ও কলেজে ৬০৪টি হস্টেল তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৪২৪টি চালু হয়ে গিয়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় ৩০৫টি কর্মতীর্থ তৈরি করা হয়েছে। এখানে সংখ্যালঘু মানুষজন তাঁদের কৃষি উৎপন্ন, লোকশিল্প, স্বনির্ভরগোষ্ঠীর স্বনিযুক্ত সদস্যরা নিজেদের পণ্য বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছেন। সংখ্যালঘুদের ডব্লুবিসিএস অফিসার তৈরি করতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম, ডিএমই,  রাজ্য হজ কমিটি এবং উর্দু অ্যাকাডেমির যৌথ প্রচেষ্টায় হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে কোচিং এবং কাউন্সেলিং সহ কেরিয়ার গাইডেন্স দেওয়া হচ্ছে।

এবারের বাজেট ভাষণে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ উল্লে’ করে বলা হয় এখানে ২৩টি বিভিন্ন বিভাগে ৪৯টি বিভিন্ন শিক্ষামুলক বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। চলতি বছরই ১২২ জন পড়ুয়া নেট, সেট, গেট ইত্যাদি বিভিন্ন পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০জন মেধাবি ছাত্র পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছে। প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১১ জন পড়ুয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরিতে নিযুক্ত হয়েছেন।