বাদ হিজাব, ছাত্রীদের পরতে হবে স্কার্ট-হাফ শার্ট

- আপডেট : ১৩ অগাস্ট ২০২৩, রবিবার
- / 11
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: লাক্ষাদ্বীপ হচ্ছে আরব সাগরের তীরে সবুজের সমারোহে প্রবাল প্রাচীরে ঘেরা এক দ্বীপ। তথাকথিত আধুনিক সভ্যতার চাকচিক্য ও বড় বড় অট্টালিকা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে বিনষ্ট করতে পারেনি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই দ্বীপে বসবাসকারী মানুষেরা ইসলাম অনুসারি এবং সরল-সুখী জীবনে অভ্যস্ত। লাক্ষাদ্বীপকে কেরলের সঙ্গে সংযুক্ত না করে তাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে রাখা হয়েছে।
কর্নাটকের পর এবার কেন্দ্রশাসিত লাক্ষাদ্বীপে স্কুলের পোশাক নিয়ে নয়া বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কর্নাটকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেমন বিজেপি সরকার হিজাব নিষিদ্ধ করেছিল, ঠিক তেমনটাই হতে চলেছে এই দ্বীপপুঞ্জে। দ্বীপপুঞ্জের বিজেপি-ঘনিষ্ঠ প্রশাসক প্রফুল খোদা প্যাটেল ১০ আগস্ট একটি নির্দেশ জারি করেছে, যাতে বলা হয়েছে স্কুলের সবাইকে একই ধরনের ইউনিফর্ম পরে আসতে হবে। সেখানে হিজাব বা হেডস্কার্ফ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। এতে স্পষ্ট, ৯৮ শতাংশ মুসলিম-অধ্যুষিত লাক্ষাদ্বীপেও কর্নাটকের মতো হিজাব নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। এর ফলে সেখানেও মুসলিম মেয়েদের পড়াশোনার জগতকে রুদ্ধ করতে চাইছে উগ্র শক্তিশালী মহল।
নতুন যে পোশাকবিধি জারি করেছে দ্বীপপুঞ্জটির শিক্ষা দফতর, তাতে দেখা যাচ্ছে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বালকদের জন্য রয়েছে চেক হাফ প্যান্ট ও আকাশি-নীল হাফহাতা শার্ট। বালিকাদের জন্য স্কার্ট ও আকাশি-নীল হাফহাতা শার্ট! ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রদের নেভি ব্লু ফুল প্যান্ট ও আকাশি-নীল হাফহাতা জামা পরে আসতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে, মেয়েদের নেভি ব্লু স্কার্ট ও আকাশি-নীল হাফহাতা শার্ট পরে আসার ফরমান জারি করেছে সরকারি শিক্ষা দফতর। বেল্ট, টাই, জুতো, মোজা পরে আসার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সবাইকে।
মুসলিম মেয়েরা পা প্রদর্শনী করা স্কার্ট পরে স্কুলে যায় না। তারা বেশিরভাগই হিজাব ও শালোয়ারকামিজ বা শাড়ি পরে স্কুলে যায়। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের কিশোরী মেয়েরা হাফহাতা শার্ট ও স্কার্ট পরে স্কুলে যাবে, সেটা ভাবতেই পারছেন না লাক্ষাদ্বীপপুঞ্জের অভিভাবকরা। ছাত্রীরা নিজেরাও চিন্তিত এ নিয়ে। তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে যেকোনও মুহূর্তে। তারা এখন ক্লাস বয়কট করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গেরুয়া মতালম্বি প্রশাসক প্রফুল খোদা প্যাটেল পরিচালিত শিক্ষা দফতর জোরের সঙ্গে বলেছে, স্কুলে ‘ডিসিপ্লিন’ বজায় রাখার জন্য এই পোশাকবিধি যাতে সমস্ত ছাত্রছাত্রী মেনে চলে তার দিকে কড়া নজর রাখা হবে। অর্থাৎ, কোনওমতেই হিজাব পরে ক্লাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
পশ্চিমা দুনিয়ার অন্ধ অনুকরণ এবং মুসলিম ঐতিহ্য-সংস্কৃতির প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে দেশেও অশালীন পোশাক-সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে চাইছে শক্তিশালী এক গেরুয়া মহল। বিশেষ করে মুসলিমদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি-কালচার ধ্বংস করতে চাইছে তারা। এ নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন লাক্ষাদ্বীপের বর্তমান ও প্রাক্তন সাংসদ। লাক্ষাদ্বীপের এনসিপি সাংসদ মুহাম্মদ ফায়জাল জানাচ্ছেন, শিক্ষা দফতরের নয়া নির্দেশিকায় মেয়েদের হিজাব-স্কার্ফে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এটা সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। আমরা এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক এবং আইনি লড়াই শুরু করছি। তিনি এই নির্দেশকে ‘স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। পড়ুয়ারা তাদের শালীন পোশাক পরার অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত ক্লাস বয়কট করবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
লাক্ষাদ্বীপের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ হামদুল্লাহ সৈয়দ অভিযোগ তুলেছেন, বিজেপির কেন্দ্র সরকার ও লাক্ষাদ্বীপ প্রশাসন এখানকার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জনবিরোধী নীতি প্রয়োগ করছে এই শান্তিপূর্ণ দ্বীপে। আমরা থাকতে তা সহ্য করব না। এর বিরুদ্ধে কংগ্রেস গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ জানাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেখানে মদের দোকান খোলা নিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও তাঁরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, লাক্ষাদ্বীপে কোনও মদের দোকান কখনই ছিল না। এখানকার খাদ্যাভ্যাস, রীতিনীতি, ঐতিহ্য ও ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করার জন্যই বিজেপি-নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন এভাবে মদের দোকান খোলার জন্য বিল এনেছে বলে তিনি মনে করেন। ২০২১ সাল থেকেই দ্বীপপুঞ্জের সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন মোদি-ঘনিষ্ঠ প্রশাসক প্রফুল খোদা প্যাটেল। তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ দ্বীপপুঞ্জজুড়ে। দু’বছর আগে প্রশাসক হিসেবে এসেই প্রফুল উদ্যোগ নিয়েছিলেন, লাক্ষাদ্বীপে গরুর মাংস বা বিফ খাওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে। জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ যেখানে মুসলিম, সেই লাক্ষাদ্বীপে এখন মদ্যপান নিষিদ্ধ। কিন্তু বিজেপি সরকারের প্রশাসক চান লাক্ষাদ্বীপের নতুন করে গড়ে তোলা বিলাসবহুল হোটেল ও রিসর্টগুলো অ্যালকোহল পানীয় পরিবেশনের অনুমতি পাক। খোলা হোক মদের দোকান। সেটা নিয়ে একটি বিলের খসড়া প্রকাশ করেছে প্রশাসন। তা নিয়েও জনমনে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হল পোশাক-বিতর্ক।