বাংলার হারিয়ে যাওয়া পুতুল নাচ মন কাড়লো সুন্দরবনের মানুষের

- আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার
- / 132
ইনামুল হক, বসিরহাট: বাংলার লুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির অন্যতম বিনোদন পুতুল নাচ। যা আজকের প্রজন্মের কাছে এক অজানা বিষয় বলা যায়। তাই মোবাইল ফোনে ইউটিউব-ফেসবুকে বুঁদ হয়ে থাকা এই প্রজন্ম পুতুল নাচের অভিনবত্বের ছোঁয়া পেয়ে মোহিত হলো। এক সময় পুতুল নাচ গ্রাম বাংলার মানুষের বিনোদনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আধুনিক সভ্যতার মাঝে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে বাংলার এই প্রাচীন সংস্কৃতি। তাই জগদ্ধাত্রী পুজোকে সামনে রেখে গ্রামে আসর বসলো পুতুল নাচের। বসিরহাটের সুন্দরবনের সন্দেশখালি ১নং ব্লকের সরবেড়িয়া-আগারহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ নলকরা গ্রামে জগদ্ধাত্রী পূজার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বসলো পুতুল নাচের আসর। যেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কচিকাঁচা থেকে শুরু করে সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষরা এই পুতুল নাচ উপভোগ করে।
উদ্যোক্তা দীব্যেন্দু পাত্র জানালেন, ‘আধুনিকতার নামে এখন গ্রাম বাংলাতেও যে ডিজে সংস্কৃতি চলছে তা একপ্রকার বাংলার লোকো জীবনকে দূষিত করে তুলেছে। তাই সেই দূষিত পরিবেশের মধ্যে খানিকটা বিশুদ্ধ বিনোদন তুলে ধরার জন্য বিশেষ করে শিশু কিশোর মনে ডিজিটাল একঘেয়েমি থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য এই ‘পুতুল নাচ’ পরিবেশনের উদ্যোগ।’
সুন্দরবন স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে নবদ্বীপের গিরিধারী পুতুল নাচ সংস্থার ‘রাজা হরিশচন্দ্র’, ‘সাবিত্রী সত্যবান’, ‘বেহুলা লখিন্দর’, ‘রূপভান কন্যা’র মতো পালা এখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যার মাধ্যমে বাংলার লোকো গাঁথা গুলিকে তুলে ধরা হচ্ছে। আর এই উপলক্ষে গ্রামে মেলা বসেছে। অনেক বছর পর ছোটবেলাকে ফিরে পেয়ে খুশি এলাকার বয়স্করাও। রংবেরঙের পুতুলের নাচ, নেপথ্যে অভিনেতা নারী পুরুষের সংলাপ উচ্চারণ, সেইসঙ্গে নানান বাদ্যযন্ত্রের শব্দ ও রংবেরঙের আলোর ঝলকানিতে নলকরা গ্রাম হয়ে উঠেছে পুতুল নাচের কেন্দ্রবিন্দু। আর তা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপের মানুষজন। আসর হয়ে উঠছে জমজমাট।
ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অভিনব পুতুল নাচ দেখে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। মৌসুমী বর, দেবায়ন মণ্ডলরা জানাচ্ছে, আমরা এর আগে কখনো এই ধরনের পুতুল নাচ দেখিনি। আধুনিক সভ্যতায় সোশ্যাল মিডিয়া গিলে খাচ্ছে বাচ্চাদের। তাই চোখের সামনে পুতুল নাচ দু’চোখ ভরে উপভোগ করছে ৮ থেকে ৮০। নতুন প্রজন্মের কাছে পুতুল নাচ একেবারে অভিনব। উত্তর ২৪ পরগনা যুক্তিবাদী বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক প্রদীপ্ত সরকার বলেন, “এখনো শিল্পীরা জীবন-জীবিকা ও রুজি-রোজগারের টানে এই শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমরা চাই গ্রামবাংলায় পুতুল নাচ আগের মতো ফিরে আসুক। মানুষের মননে শিশু মনের বিকাশ ঘটাতে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”
একদিকে সামাজিক শিক্ষা অন্যদিকে শিশু মনের বিকাশ ঘটাতে পুতুল নাচ অনবদ্য ভূমিকা পালন করলো সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের মননে। বাংলার হারিয়ে যেতেে বসা এই লোকসংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংস্কৃতিমনস্ক সচেতন নাগরিকদের কাছে আবেদন জানাচ্ছে পুতুল নাচিয়েরাও। নবদ্বীপ থেকে আসা পুতুল নাচের কর্মকর্তাদের মতে, বাংলার এই শিল্পকে লোকশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাঁচিয়ে রাখার উপায় বার করতে পারে সরকার। বিনোদন ছাড়াও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সরকারি বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারের মাধ্যম হিসেবে পুতুল নাচকে ব্যবহার করতে পারে।