ভাঙল ৩০০ বছরের নিষেধাজ্ঞা, শিবমন্দিরে প্রবেশাধিকার পেলেন দাসপাড়ার দলিতরা

- আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার
- / 269
সফিকুল ইসলাম (দুলাল), বর্ধমান: উত্তরপ্রদেশ বা বিহার নয়, এ রাজ্যের বহু জায়গায় নিম্ন বর্ণের মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই করতে হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় মুচি সম্প্রদায়ের মানুষদের মন্দিরে না ঢুকতে দেওয়ার খবর গোটা রাজ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অনেক লড়াইয়ের পর প্রায় ৩০০ বছরের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে অবশেষে মিলল মন্দিরে প্রবেশাধিকার। কাটোয়ার গিধগ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দারা পেলেন শিবমন্দিরে পুজোর অনুমতি। প্রথমবার মন্দিরে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তাঁরা। প্রশাসনের উপস্থিতিতে বুধবার গিধেশ্বর শিবমন্দিরে পুজো দিলেন ষষ্ঠী দাস, সান্ত্বনা দাস-সহ দাসপাড়ার বাসিন্দারা।
কাটোয়া-১ ব্লকের গিধগ্রামের গিধেশ্বর শিবমন্দির প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরোনো। এই মন্দিরে নিত্যসেবা হয় এবং শিবরাত্রি, গাজনের সময় প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটে। তবে এতদিন মন্দিরে চর্মকার বা চামার সম্প্রদায়ের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। স্থানীয় দাসপাড়ার প্রায় ১০০টি পরিবার কখনও এই মন্দিরে পুজো দেওয়ার অনুমতি পাননি কিংবা তাঁরা সাহসও করতে পারেননি। এমনই ছিল উচ্চবর্ণের সমাজপতিদের তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষদের অস্পৃশ্য করে রাখার প্রবণতা। এই অলিখিত বিধিনিষেধ এতদিন দাসপাড়ার বাসিন্দারা মেনে নিলেও এবার তারা প্রতিবাদে সরব হন। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিবরাত্রির দু-তিন দিন আগে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান যে, তাদের শুধুমাত্র জাতি বৈষম্যের জন্য মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: আজ Abhishek Banerjee-র মহাবৈঠক, যোগ দেবেন ৪,৫০০ নেতা
কয়েক দিন ধরে এই বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়। দিন চারেক আগে দাসপাড়ার কিছু বাসিন্দা পুজো দিতে গেলে বাধার সম্মুখীন হন। এরপর মঙ্গলবার মহকুমা শাসকের দফতরে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়।
বৈঠকের পর মন্দিরের সেবায়েতরা সম্মত হন যে, দাসপাড়ার বাসিন্দাদের পুজো দেওয়ার অধিকারকে মেনে নেওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুধবার সকালে পাঁচজন দাসপাড়ার বাসিন্দা প্রথমবার মন্দিরে পুজো দিতে যান। তাদের মধ্যে ছিলেন সান্ত্বনা দাস, যিনি বিয়ের পর বহু বছর কাটিয়েছেন, কিন্তু এই প্রথমবার মন্দিরে প্রবেশের সুযোগ পেলেন। আবেগে আপ্লুত সান্ত্বনা বলেন, ‘এতদিনের অপেক্ষা শেষ হল। এত ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। আজ আমরা নিজের হাতে জল ঢাললাম শিবলিঙ্গে, পূজা দিলাম।’ অন্যান্য ভক্তদের মতোই তারা পুজো দিতে পারেন, এটাই তাদের কাছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। মন্দিরের সেবায়েত বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় ও জগন্নাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘যেভাবে অন্যান্য ভক্তরা পুজো দেন, সেভাবেই দাসপাড়ার লোকজনও আজ পুজো দিলেন। এতে মন্দিরের শুদ্ধতা নষ্ট হয়নি, বরং এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হল।’