১৩ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আবার আদালতের দারস্থ সুন্দরবনের বাঘে আক্রমনে মৃত চারটি পরিবার

মারুফা খাতুন
  • আপডেট : ১৩ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার
  • / 20

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,কুলতলি : আবার আদালতের দ্বারস্থ হতে হলো সুন্দরবনে বাঘের আক্রমনে মৃত চার মৎস্যজীবির পরিবারকে। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে বাঘের আক্রমণে মৃত চার মৎস্যজীবীর পরিবার ক্ষতি পূরণের জন্য মামলা দায়ের করে।বন দপ্তরের উদাসীনতা ও অনিচ্ছার কারনে বাঘে আক্রান্ত পরিবারগুলিকে আবারও হাইকোর্টের দারস্থ হতে হলো।গত কয়েক দশক বাঘে আক্রান্ত মৎস্যজীবি পরিবারদেরকে বনদপ্তর ক্ষতিপূরণ, চাকরি কোন কিছুই দেয় নি বলে অভিযোগ।

আইন ও সরকারি অর্ডার থাকা সত্বেও। আর দীর্ঘ দিন ধরে এইসব মানুষদের পাশে থেকে কাজ করে চলেছে এপিডিআর নামে একটি গন সংগঠন।আর তাদের উদ্যোগে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে কুলতলির শান্তি বালা দেবী বন দফতরের নামে মামলা দায়ের করেন।এই মামলায় সেই সময় বিচারক সব্যসাচী ভট্টাচার্য রায় দেন, কোর বা বাফার এরিয়া নয় বাঘে আক্রান্ত মৃতের পরিবারের সরকারি ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে।তার পর থেকে এখনো পর্যন্ত ৮ টি মামলায় বনদপ্তর পরাজিত হয়েছে আদালতের রায়ে।এবং বন দফতরকে তাদের ক্ষতি পূরনের টাকা দিতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিশ্বের বদ্বীপ সুন্দরবনের ভূমিক্ষয়

গত কয়েক দশকের কয়েক’শ পরিবার দরখাস্ত জমা দিলেও বনদপ্তরের মানবিক মুখ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করলো এপিডিআর।এই সংগঠনের জেলার সহ সম্পাদক মিঠুন মন্ডল বলেন, বাঘের আক্রমনে মৃত মৎস্যজীবিদের পরিবারগুলি প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।তাই তাদের অধিকার ছিনিয়ে আনতে আমাদের সহায়তায় কুলতলির চারটি পরিবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করলেন।

আরও পড়ুন: হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো ক্যানিং-জয়নগর সংযোগকারী পিয়ালি নদীর বাঁশের সাঁকো

মৎস্যজীবিদের হয়ে মামলা লড়বেন সিনিয়র এডভোকেট কৌশিক গুপ্তা ও এডভোকেট শ্রীময়ী মুখার্জি। মৈপিঠ কোস্টাল থানার পূর্ব গুড়গুড়িয়া গ্রামের মামলাকারী বন্দনা মাইতি বলেন,২০১০ সালে তার স্বামী রনজিৎ মাইতি বাঘের আক্রমণ নিহত হয়। তারপর থেকে বিডিও, বনদপ্তর ও নেতাদের কাছে বারেবারে গিয়ে ও কোন সুরাহা হয়নি।তাই অবশেষে আদালতের দারস্থ হলাম।

আরও পড়ুন: মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার বিএলসি পাস এখনো না পাওয়ায় ক্ষোভ সুন্দরবনের মৎস্যজীবিদের মধ্যে

মৈপিঠ কোস্টাল থানার কিশোরীমোহনপুরের আরেক মামলাকারী দুর্গা রানী মন্ডল বলেন, তার স্বামী ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে মারা গেলেও বন দপ্তরে গিয়ে কোন লাভ হয়নি। একরাশ হতাশ নিয়ে বারেবারে ফিরে এসেছেন তিনি। সামান্য বিধবা ভাতা দিয়ে সংসার চলে না। ছেলেটার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। কুলতলির গোপালগঞ্জের মামলাকারী ভগবতী হালদারের স্বামী শ্রীদাম হালদার ২০২৪ মারা গেছেন বাঘের আক্রমনে। চার মেয়ে নাবালিকা তার মধ্যে দুইজন মেয়ে প্রতিবন্ধী। ভগবতী হালদার নিজে প্রতিবন্ধী, একটি চোখে দেখতে পান না। শরীরে জটিল রোগ বাসা বেধেছে। বিধবা ভাতা ১০০০ টাকা এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ১০০০ টাকা করে পাঠায়। তাতেই সংসার চালায়।ভবিষ্যতে কী হবে শিশুদের তা নিয়ে চিন্তায় তারা।

মৈপিঠ কোস্টালের কিশোরীমোহনপুরের ৫২ বছরের সুলতা জানা ২০১১ সালে স্বামী মারা গেলেও বিধবা ভাতা সম্বল করে জীবন যাপন করছে।তবে শেষমেশ সরকার ও প্রশাসনের উপর ভরসা হারিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। মিঠুন মন্ডল এও বলেন,মূখ্যমন্ত্রীর ২০১৮ সালের ঘোষণার পর ও হাতেগোনা কয়েকজন ফরেস্ট ভলেন্টিয়ারের চাকরি পেলেও শতশত পরিবার এখন ও চাকরি পাচ্ছে না। অথচ মৎস্যজীবীদের নদী জঙ্গল থেকে উৎখাত করতেই বদ্ধপরিকর হয়ে পড়েছে বন দফতর। আমরা দেখছি প্রতি বছর গড়ে কুড়ির অধিক মৎস্যজীবি বাঘের আক্রমণ আহত ও নিহত হচ্ছে।

২০২৫ সালেই এখনো পর্যন্ত ৯ জনের ওপর বাঘের আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে। তাদের একজনও এখনও সরকার বা বনদপ্তর এর কাছ থেকে ক্ষতি পূরন পাইনি। বনদপ্তরের তৈরি করা ৩৩ জনের টাইগার রেসকিউ টিমের গনেশ শ্যমল ৫০০ টাকা রোজে গ্রামে বাঘ রেসকিউ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণ দৃষ্টিশক্তি হারালো। এখন পর্যন্ত সরকারি দুই লক্ষ টাকা ক্ষতি পূরন দেওয়া পেল না। সরকার ও বনদপ্তরের এই আচরণে আমরা মনে করি রাস্তার আন্দোলন ও আদালতের মধ্যে দিয়ে লড়াই জারি রাখতে হবে।

আমরা চাই, বাঘে আক্রান্ত পরিবারের একজনের সরকারি চাকরি ও ক্ষতি পূরনের ৫ লক্ষ টাকা ঘটনা ঘটার সাতদিনের মধ্যেই দিতে হবে।আলাদা করে বাঘে আক্রান্ত পরিবারের দশ হাজার টাকা করে পারিবারিক পেনশন চালু করতে হবে।তাদের বাচ্চাদের পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে বনদপ্তর মানবিক মুখ দেখাতে হবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আবার আদালতের দারস্থ সুন্দরবনের বাঘে আক্রমনে মৃত চারটি পরিবার

আপডেট : ১৩ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,কুলতলি : আবার আদালতের দ্বারস্থ হতে হলো সুন্দরবনে বাঘের আক্রমনে মৃত চার মৎস্যজীবির পরিবারকে। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে বাঘের আক্রমণে মৃত চার মৎস্যজীবীর পরিবার ক্ষতি পূরণের জন্য মামলা দায়ের করে।বন দপ্তরের উদাসীনতা ও অনিচ্ছার কারনে বাঘে আক্রান্ত পরিবারগুলিকে আবারও হাইকোর্টের দারস্থ হতে হলো।গত কয়েক দশক বাঘে আক্রান্ত মৎস্যজীবি পরিবারদেরকে বনদপ্তর ক্ষতিপূরণ, চাকরি কোন কিছুই দেয় নি বলে অভিযোগ।

আইন ও সরকারি অর্ডার থাকা সত্বেও। আর দীর্ঘ দিন ধরে এইসব মানুষদের পাশে থেকে কাজ করে চলেছে এপিডিআর নামে একটি গন সংগঠন।আর তাদের উদ্যোগে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে কুলতলির শান্তি বালা দেবী বন দফতরের নামে মামলা দায়ের করেন।এই মামলায় সেই সময় বিচারক সব্যসাচী ভট্টাচার্য রায় দেন, কোর বা বাফার এরিয়া নয় বাঘে আক্রান্ত মৃতের পরিবারের সরকারি ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে।তার পর থেকে এখনো পর্যন্ত ৮ টি মামলায় বনদপ্তর পরাজিত হয়েছে আদালতের রায়ে।এবং বন দফতরকে তাদের ক্ষতি পূরনের টাকা দিতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিশ্বের বদ্বীপ সুন্দরবনের ভূমিক্ষয়

গত কয়েক দশকের কয়েক’শ পরিবার দরখাস্ত জমা দিলেও বনদপ্তরের মানবিক মুখ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করলো এপিডিআর।এই সংগঠনের জেলার সহ সম্পাদক মিঠুন মন্ডল বলেন, বাঘের আক্রমনে মৃত মৎস্যজীবিদের পরিবারগুলি প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।তাই তাদের অধিকার ছিনিয়ে আনতে আমাদের সহায়তায় কুলতলির চারটি পরিবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করলেন।

আরও পড়ুন: হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো ক্যানিং-জয়নগর সংযোগকারী পিয়ালি নদীর বাঁশের সাঁকো

মৎস্যজীবিদের হয়ে মামলা লড়বেন সিনিয়র এডভোকেট কৌশিক গুপ্তা ও এডভোকেট শ্রীময়ী মুখার্জি। মৈপিঠ কোস্টাল থানার পূর্ব গুড়গুড়িয়া গ্রামের মামলাকারী বন্দনা মাইতি বলেন,২০১০ সালে তার স্বামী রনজিৎ মাইতি বাঘের আক্রমণ নিহত হয়। তারপর থেকে বিডিও, বনদপ্তর ও নেতাদের কাছে বারেবারে গিয়ে ও কোন সুরাহা হয়নি।তাই অবশেষে আদালতের দারস্থ হলাম।

আরও পড়ুন: মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার বিএলসি পাস এখনো না পাওয়ায় ক্ষোভ সুন্দরবনের মৎস্যজীবিদের মধ্যে

মৈপিঠ কোস্টাল থানার কিশোরীমোহনপুরের আরেক মামলাকারী দুর্গা রানী মন্ডল বলেন, তার স্বামী ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে মারা গেলেও বন দপ্তরে গিয়ে কোন লাভ হয়নি। একরাশ হতাশ নিয়ে বারেবারে ফিরে এসেছেন তিনি। সামান্য বিধবা ভাতা দিয়ে সংসার চলে না। ছেলেটার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। কুলতলির গোপালগঞ্জের মামলাকারী ভগবতী হালদারের স্বামী শ্রীদাম হালদার ২০২৪ মারা গেছেন বাঘের আক্রমনে। চার মেয়ে নাবালিকা তার মধ্যে দুইজন মেয়ে প্রতিবন্ধী। ভগবতী হালদার নিজে প্রতিবন্ধী, একটি চোখে দেখতে পান না। শরীরে জটিল রোগ বাসা বেধেছে। বিধবা ভাতা ১০০০ টাকা এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ১০০০ টাকা করে পাঠায়। তাতেই সংসার চালায়।ভবিষ্যতে কী হবে শিশুদের তা নিয়ে চিন্তায় তারা।

মৈপিঠ কোস্টালের কিশোরীমোহনপুরের ৫২ বছরের সুলতা জানা ২০১১ সালে স্বামী মারা গেলেও বিধবা ভাতা সম্বল করে জীবন যাপন করছে।তবে শেষমেশ সরকার ও প্রশাসনের উপর ভরসা হারিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। মিঠুন মন্ডল এও বলেন,মূখ্যমন্ত্রীর ২০১৮ সালের ঘোষণার পর ও হাতেগোনা কয়েকজন ফরেস্ট ভলেন্টিয়ারের চাকরি পেলেও শতশত পরিবার এখন ও চাকরি পাচ্ছে না। অথচ মৎস্যজীবীদের নদী জঙ্গল থেকে উৎখাত করতেই বদ্ধপরিকর হয়ে পড়েছে বন দফতর। আমরা দেখছি প্রতি বছর গড়ে কুড়ির অধিক মৎস্যজীবি বাঘের আক্রমণ আহত ও নিহত হচ্ছে।

২০২৫ সালেই এখনো পর্যন্ত ৯ জনের ওপর বাঘের আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে। তাদের একজনও এখনও সরকার বা বনদপ্তর এর কাছ থেকে ক্ষতি পূরন পাইনি। বনদপ্তরের তৈরি করা ৩৩ জনের টাইগার রেসকিউ টিমের গনেশ শ্যমল ৫০০ টাকা রোজে গ্রামে বাঘ রেসকিউ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণ দৃষ্টিশক্তি হারালো। এখন পর্যন্ত সরকারি দুই লক্ষ টাকা ক্ষতি পূরন দেওয়া পেল না। সরকার ও বনদপ্তরের এই আচরণে আমরা মনে করি রাস্তার আন্দোলন ও আদালতের মধ্যে দিয়ে লড়াই জারি রাখতে হবে।

আমরা চাই, বাঘে আক্রান্ত পরিবারের একজনের সরকারি চাকরি ও ক্ষতি পূরনের ৫ লক্ষ টাকা ঘটনা ঘটার সাতদিনের মধ্যেই দিতে হবে।আলাদা করে বাঘে আক্রান্ত পরিবারের দশ হাজার টাকা করে পারিবারিক পেনশন চালু করতে হবে।তাদের বাচ্চাদের পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে বনদপ্তর মানবিক মুখ দেখাতে হবে।