জয়পুর, ২ আগস্ট: বিজেপি সাংসদ ড. কিরোরি লাল মীনাকে জয়পুর পুলিশ রবিবার আটক করে৷ এর পিছনে রয়েছে দুই সম্প্রদায়ের বিবাদের কাহিনি৷ তিনি মীনা সম্প্রদায় এবং হিন্দু গোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের কেন্দ্র হয়ে ওঠা আমাগড় দুর্গের একটি প্রান্তে মীনা সম্প্রদায়ের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন৷ তার গ্রেফতারিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠোর এবং অন্যান্য প্রবীণ নেতাদের কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে৷ তারা কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি করার অভিযোগ তোলেন।
বিবাদ কেন? জুন মাসে আমাগড় দুর্গে মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছিল। মীনা সম্প্রদায়ের সদস্যরা হিন্দু গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে, হিন্দুত্ববাদী আঙ্গিকে তাদের উপজাতীয় প্রতীক তৈরি করেছে তারা এবং অম্বা মাতার নাম পরিবর্তন করে অম্বিকা ভবানী করে। এতে মীনাদের আপত্তি৷ তবে দুর্গ নিয়ে দ্বন্দ্বের প্রথম ঘটনা ২০২১ সালের জুন মাসে সামনে আসে যখন দুর্গে একটি গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করা হয়৷ এসময় কয়েকটি মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়। ২৩ জুলাই রাজস্থানের মীনা সম্প্রদায়ের একদল লোক নির্দল বিধায়ক রামকেশ মীনার উপস্থিতিতে জয়পুরের আমাগড় দুর্গের উপরে উত্তোলিত গেরুয়া পতাকাটি নামিয়ে দেয়। তবে হিন্দু গোষ্ঠী মীনা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পতাকা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর রিপোর্ট অনুসারে, হিন্দু গোষ্ঠীর সদস্যরা যখন এটিকে নামিয়ে আনছিল তখন পতাকাটি দুর্ঘটনাক্রমে ছিঁড়ে যায়৷ একটি ব্রাহ্মণ গোষ্ঠীও এই বিতর্কে যোগ দিয়েছে৷ এর নেতারা বলছেন যে দুর্গের কাছের অম্বিকা ভবানী পুরোহিতদের পরিবারের, যারা প্রজন্ম ধরে এখানে আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন৷
এখন আমাগড় দুর্গের ইতিহাস কী বলছে? মীনা সম্প্রদায় নিজেদের উপজাতি হিসেবে পরিচয় দেয়। এই সম্প্রদায় আমাগড় দুর্গকে তাদের পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচনা করে এবং বলে যে রাজপুতরা জয়পুর শাসন করার আগে এটি এক মীনা শাসক নির্মাণ করেছিলেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্গটি নালা গোত্তার মিনা সর্দার নির্মাণ করেছিলেন৷ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে জয়পুরে রাজপুত শাসনের আগে মীনা সম্প্রদায় কাছাকাছি অঞ্চল শাসন করত এবং রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ তাদের দখলে ছিল। ইতিহাসবিদ রিমা হুজা বলেছেন যে এই অঞ্চলের মীনা সম্প্রদায়ের ইতিহাস মূলত মৌখিক প্রকৃতির।
বিধায়ক রামকেশ জানিয়েছেন যে, এই সম্প্রদায়ের লোকেরা দুর্গে অম্বা মাতা এবং অন্যান্য দেবতাদের পুজো করত, যা পরবর্তীতে অম্বিকা মাতা মন্দিরে রূপান্তরিত হয়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক এবং উপজাতীয় সংস্কৃতির পণ্ডিত ড. হীরা মীনা বলেন, উপজাতি গোষ্ঠীর মতো মীনারাও পূর্বপুরুষদের পূজা করে। অম্বা মাতা ছিলেন একজন পূর্বপুরুষ, জীবিত ব্যক্তি৷ তিনি ঈশ্বর নন। অম্বা মাতা অম্বিকা ভবানী বা দুর্গার সঙ্গে সম্পর্কিত নন। হিন্দু সংগঠনগুলি অম্বা মাতাকে অম্বিকা ভবানী হিসাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে৷ এইভাবেই আমাগড় দুর্গ এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে৷ দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে৷