২০ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অবৈধ নির্মানের তকমা, উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ৫টি মাজার

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার
  • / 112

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ফের অবৈধ নির্মানের তকমা দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হল পাঁচটি মাজার। উত্তরাখণ্ড সরকার উধম সিং নগর জেলার কাশীপুর শহরের কুণ্ডেশ্বরী এলাকায় পাঁচটি মাজার ভেঙে দিয়েছে। প্রশাসন দাবি করেছে, সেগুলি সরকারি জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল। যে। কারণেই বুলডোজার চালিয়ে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে প্রশাসনের এই পদক্ষেপে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় মুসলিমরা অভিযোগ করেছে, রাজ্য সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ছদ্মবেশে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। যদিও এসডিএম অভয় প্রতাপ সিং সাংবাদিকদের জানান, বারবার নোটিশ উপেক্ষা করার পরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। সিংয়ের কথায়, “আমরা কেয়ারটেকারদের ১৫ দিনের নোটিশ দিয়েছিলাম, তাদের মালিকানা বা অনুমতি প্রমাণের জন্য নথি দেখাতে বলেছি। তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাই আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার ভোরে ব্যাপক পুলিশ বাহিনী নিয়ে মাজারগুলি ভাঙার কাজ শুরু হয়। কোনওরকম আগাম নোটিশ বা সর্তক কোনোটিই করা হয়নি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মাজারগুলোর দেখাশোনা করে আসা স্থানীয়রা সরকারের এই পদক্ষেপে গভীর দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় মুসলিম সসম্প্রদায়ের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত সমাধিগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলার ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা দেশজুড়ে ক্ষোভ ও ভীতির সৃষ্টি করেছে।

কুণ্ডেশ্বরীর বাসিন্দা মোহাম্মদ রিজওয়ান বলেন, “এই মাজারগুলি কয়েক দশক ধরে এখানে রয়েছে। আমার দাদা এবং বাবা সেগুলির দেখভাল করতেন। তারা আমাদের পরিচয়ের অংশ। সরকার কেন আমাদের সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলল না বা সুযোগ দিল না? এটা ন্যায়বিচার নয়, এটা মুসলমান হওয়ার শাস্তি।” অনেকেই প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বৈষম্য করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। স্থানীয় সমাজসেবক পারভীন আহমেদ বলেন, “আমরা ফুটপাথে, জঙ্গলে, এমনকি নদীর তীরেও মন্দির তৈরি করতে দেখেছি। কিন্তু কেউ তাদের স্পর্শ করে না। সরকার শুধু আমাদের মাজার ও মাদ্রাসাগুলোকে অবৈধ মনে করে।”

আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল টিপু সুলতান স্মারক

তবে যেভাবে বুলডোজার চালানো হয়েছে তার আইনি যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কমিউনিটির নেতারা। কাশীপুরের জামা মসজিদের মৌলানা কাসিমের প্রশ্ন, “ওরা কি রাজ্যের প্রতিটি মন্দির বা তীর্থস্থানের কাছে নথি চায়বে? নাকি শুধুই মুসলিমদের? বেআইনি হিন্দু মন্দিরগুলির কোনও সমীক্ষা হয় না কেন? সরকার ন্যায়বিচার চায় না, ভোট খুঁজছে।”

আরও পড়ুন: অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে ইন্দোরের বেলেশ্বর মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বুলডোজার দিয়ে

অনেকেই মনে করছে, এই ধ্বংসযজ্ঞ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে উত্তরাখণ্ডে ৫৩৭টি ধর্মীয় কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে। যার বেশিরভাগই মুসলিমদের মাজার, দরগাহ এবং মাদ্রাসা। রাজ্য সরকার বলছে, তারা ধর্ম নির্বিশেষে সব ধরনের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

আরও পড়ুন:  বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বিজেপি কর্মীর বাড়ি, নেপথ্যে কোন ঘটনা

কিন্তু বাস্তব ঘটনা ভিন্ন কথা বলে। সরকারি জমিতে অননুমোদিত মন্দির বা হিন্দু ধর্মীয় স্থানগুলির বিরুদ্ধে কোনও বড় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হরিদ্বারের আইনজীবী আরশাদ ওয়ারসি বলেন, “দেরাদুনে এমন মন্দির রয়েছে যা প্রকাশ্যে বনভূমি ব্যবহার করে, বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু সেখানে প্রশাসন স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। বুলডোজার শুধু মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি সিলেক্টিভ টার্গেটিংয়ের একটি স্পষ্ট ঘটনা।” কুণ্ডেশ্বরীর দোকানদার বিলাল খান বলেন, “এই বুলডোজার শুধু একটি মেশিন নয়, আমাদের জীবন ধ্বংসকারী যন্ত্র। আমাদের যে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করা হবে, এগুলি তারই এক একটা সংকেত। আমরা আর নিরাপদ বোধ করছি না। আমাদের সন্তানরা প্রশ্ন করছে, কেন আমাদের জায়গা ধ্বংস করা হচ্ছে।”

মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এই অভিযানের পিছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে খোলামেলা মন্তব্য করেছেন। গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, “উত্তরাখণ্ড দেবভূমি- দেবতাদের ভূমি। আমরা ধর্মের নামে কাউকে অবৈধভাবে আমাদের পবিত্র ভূমি দখল করতে দেব না।” মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে জমি দখলের মাধ্যমে “জনবিন্যাস পরিবর্তন” করার যে কোনও প্রচেষ্টা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে ধামির এই মন্তব্যকে বিপজ্জনক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই ব্যাখ্যা করেছেন সমালোচকরা। দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সাবিহা ফারুকি বলেন, “উত্তরাখণ্ডকে দেবভূমি বলা ঠিক আছে, কিন্তু মুসলিম কাঠামোর ওপর হামলাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য এটাকে ব্যবহার করা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। সরকার তার সমর্থকদের একটি সংকেত দিচ্ছে যে মুসলমানদের এরাজ্যে রাখা হবে না। কাশীপুরে মুসলিমরা বলছেন, তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন যে তাদের স্থানীয় মাজার, মাদ্রাসা এবং এমনকি বাড়িগুলি পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।”

এদিকে নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি বলছে, সরকার যদি সত্যিকার অর্থে ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে, তাহলে তাদের উচিত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজা। মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী শায়েস্তা পারভীনের মতে, “যদি এই সমাধিগুলির অবস্থান নিয়ে কোনও সমস্যা হত, কর্তৃপক্ষ সম্প্রদায়টিকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারত। বুলডোজার চালিয়ে শাস্তি দেওয়া নয়, সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। বুলডোজার প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত নয়।”

মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে তাদের ধর্মীয় স্থান, মাদ্রাসা ও মাজারগুলি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া নিয়ে ধামি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের সচেতন মানুষরা। শিক্ষক বিনোদ তিওয়ারি বলেন, ‘আমি হিন্দু, কিন্তু অন্যায়কে সমর্থন করি না। এই দেশ সবার। যদি কিছু অবৈধ হয় তবে সেটি আইনত মোকাবেলা করুন। কিন্তু ধর্মকে টার্গেট করে বুলডোজার ব্যবহার করবেন না।”

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

অবৈধ নির্মানের তকমা, উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ৫টি মাজার

আপডেট : ৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ফের অবৈধ নির্মানের তকমা দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হল পাঁচটি মাজার। উত্তরাখণ্ড সরকার উধম সিং নগর জেলার কাশীপুর শহরের কুণ্ডেশ্বরী এলাকায় পাঁচটি মাজার ভেঙে দিয়েছে। প্রশাসন দাবি করেছে, সেগুলি সরকারি জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল। যে। কারণেই বুলডোজার চালিয়ে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে প্রশাসনের এই পদক্ষেপে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় মুসলিমরা অভিযোগ করেছে, রাজ্য সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ছদ্মবেশে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। যদিও এসডিএম অভয় প্রতাপ সিং সাংবাদিকদের জানান, বারবার নোটিশ উপেক্ষা করার পরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। সিংয়ের কথায়, “আমরা কেয়ারটেকারদের ১৫ দিনের নোটিশ দিয়েছিলাম, তাদের মালিকানা বা অনুমতি প্রমাণের জন্য নথি দেখাতে বলেছি। তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাই আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার ভোরে ব্যাপক পুলিশ বাহিনী নিয়ে মাজারগুলি ভাঙার কাজ শুরু হয়। কোনওরকম আগাম নোটিশ বা সর্তক কোনোটিই করা হয়নি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মাজারগুলোর দেখাশোনা করে আসা স্থানীয়রা সরকারের এই পদক্ষেপে গভীর দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় মুসলিম সসম্প্রদায়ের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত সমাধিগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলার ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা দেশজুড়ে ক্ষোভ ও ভীতির সৃষ্টি করেছে।

কুণ্ডেশ্বরীর বাসিন্দা মোহাম্মদ রিজওয়ান বলেন, “এই মাজারগুলি কয়েক দশক ধরে এখানে রয়েছে। আমার দাদা এবং বাবা সেগুলির দেখভাল করতেন। তারা আমাদের পরিচয়ের অংশ। সরকার কেন আমাদের সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলল না বা সুযোগ দিল না? এটা ন্যায়বিচার নয়, এটা মুসলমান হওয়ার শাস্তি।” অনেকেই প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বৈষম্য করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। স্থানীয় সমাজসেবক পারভীন আহমেদ বলেন, “আমরা ফুটপাথে, জঙ্গলে, এমনকি নদীর তীরেও মন্দির তৈরি করতে দেখেছি। কিন্তু কেউ তাদের স্পর্শ করে না। সরকার শুধু আমাদের মাজার ও মাদ্রাসাগুলোকে অবৈধ মনে করে।”

আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল টিপু সুলতান স্মারক

তবে যেভাবে বুলডোজার চালানো হয়েছে তার আইনি যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কমিউনিটির নেতারা। কাশীপুরের জামা মসজিদের মৌলানা কাসিমের প্রশ্ন, “ওরা কি রাজ্যের প্রতিটি মন্দির বা তীর্থস্থানের কাছে নথি চায়বে? নাকি শুধুই মুসলিমদের? বেআইনি হিন্দু মন্দিরগুলির কোনও সমীক্ষা হয় না কেন? সরকার ন্যায়বিচার চায় না, ভোট খুঁজছে।”

আরও পড়ুন: অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে ইন্দোরের বেলেশ্বর মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বুলডোজার দিয়ে

অনেকেই মনে করছে, এই ধ্বংসযজ্ঞ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে উত্তরাখণ্ডে ৫৩৭টি ধর্মীয় কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে। যার বেশিরভাগই মুসলিমদের মাজার, দরগাহ এবং মাদ্রাসা। রাজ্য সরকার বলছে, তারা ধর্ম নির্বিশেষে সব ধরনের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

আরও পড়ুন:  বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বিজেপি কর্মীর বাড়ি, নেপথ্যে কোন ঘটনা

কিন্তু বাস্তব ঘটনা ভিন্ন কথা বলে। সরকারি জমিতে অননুমোদিত মন্দির বা হিন্দু ধর্মীয় স্থানগুলির বিরুদ্ধে কোনও বড় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হরিদ্বারের আইনজীবী আরশাদ ওয়ারসি বলেন, “দেরাদুনে এমন মন্দির রয়েছে যা প্রকাশ্যে বনভূমি ব্যবহার করে, বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু সেখানে প্রশাসন স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। বুলডোজার শুধু মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি সিলেক্টিভ টার্গেটিংয়ের একটি স্পষ্ট ঘটনা।” কুণ্ডেশ্বরীর দোকানদার বিলাল খান বলেন, “এই বুলডোজার শুধু একটি মেশিন নয়, আমাদের জীবন ধ্বংসকারী যন্ত্র। আমাদের যে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করা হবে, এগুলি তারই এক একটা সংকেত। আমরা আর নিরাপদ বোধ করছি না। আমাদের সন্তানরা প্রশ্ন করছে, কেন আমাদের জায়গা ধ্বংস করা হচ্ছে।”

মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এই অভিযানের পিছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে খোলামেলা মন্তব্য করেছেন। গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, “উত্তরাখণ্ড দেবভূমি- দেবতাদের ভূমি। আমরা ধর্মের নামে কাউকে অবৈধভাবে আমাদের পবিত্র ভূমি দখল করতে দেব না।” মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে জমি দখলের মাধ্যমে “জনবিন্যাস পরিবর্তন” করার যে কোনও প্রচেষ্টা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে ধামির এই মন্তব্যকে বিপজ্জনক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই ব্যাখ্যা করেছেন সমালোচকরা। দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সাবিহা ফারুকি বলেন, “উত্তরাখণ্ডকে দেবভূমি বলা ঠিক আছে, কিন্তু মুসলিম কাঠামোর ওপর হামলাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য এটাকে ব্যবহার করা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। সরকার তার সমর্থকদের একটি সংকেত দিচ্ছে যে মুসলমানদের এরাজ্যে রাখা হবে না। কাশীপুরে মুসলিমরা বলছেন, তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন যে তাদের স্থানীয় মাজার, মাদ্রাসা এবং এমনকি বাড়িগুলি পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।”

এদিকে নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি বলছে, সরকার যদি সত্যিকার অর্থে ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে, তাহলে তাদের উচিত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজা। মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী শায়েস্তা পারভীনের মতে, “যদি এই সমাধিগুলির অবস্থান নিয়ে কোনও সমস্যা হত, কর্তৃপক্ষ সম্প্রদায়টিকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারত। বুলডোজার চালিয়ে শাস্তি দেওয়া নয়, সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। বুলডোজার প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত নয়।”

মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে তাদের ধর্মীয় স্থান, মাদ্রাসা ও মাজারগুলি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া নিয়ে ধামি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের সচেতন মানুষরা। শিক্ষক বিনোদ তিওয়ারি বলেন, ‘আমি হিন্দু, কিন্তু অন্যায়কে সমর্থন করি না। এই দেশ সবার। যদি কিছু অবৈধ হয় তবে সেটি আইনত মোকাবেলা করুন। কিন্তু ধর্মকে টার্গেট করে বুলডোজার ব্যবহার করবেন না।”