অন্তর্তদন্ত রিপোর্ট: বেস-সংশ্লিষ্ট মুসলিম অধ্যাপকদের সমকামিতার পক্ষে কারা প্রেরণা জোগাচ্ছে?

- আপডেট : ১৭ মে ২০২৩, বুধবার
- / 10
আহমদ আবদুল্লাহ: ৩০ এপ্রিল পার্ক সার্কাসে যে ঈদ মিলন অনুষ্ঠানটি হয়, তাতে তিন সংগঠনের কর্মকর্তারা এখনও তেমন কোনও বিবৃতি দেননি, দুঃখ প্রকাশও করেননি। বরং ছলেবলেকৌশলে সমকামিতাকে সমর্থনই দিয়ে চলেছেন। মুসলিমদের মধ্যে বেশিরভাগই ঈদ সৌহার্দ্যরে বার্তাকে পবিত্র বলে মনে করেন। তাঁরা সব জাতি-ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তি ও ভালোবাসার পয়গাম ছড়িয়ে দিতে চান। ওইদিন সমকামিতার পয়গাম দিয়ে বেস ও অন্য দু’টি সংগঠন উপস্থিত মুসলিমদের মনে যে আঘাত দিয়েছে, সেই সম্পর্কে এই তিন সংগঠনের কর্মকর্তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই।
দ্বিতীয়ত, আর একটি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। যখন দেখা গেল সোশ্যাল মিডিয়ায় বেস ট্রাস্টের অপতৎপরতা সম্পর্কে মুসলিমরা ব্যাপক সমালোচনা করছেন, তখন তাঁরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে এদিক-সেদিক কখা বলে বিষয়টি ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যেমন, এক কর্মকর্তা তাঁর এক ভিডিয়ো বার্তায় বলেছেন, ওই মঞ্চে কে কি কবিতা পড়বে তা নাকি তাঁদের জানার কথা নয়। ‘কুয়ের মি’ কবিতার লেখিকা ও আবৃত্তিকার অনুরাধা দোসাদ বেশ কিছুদিন থেকেই বেস-এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কিছুদিন আগে সমকামিতার পক্ষেই বেস প্রকাশ্যেই এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। যা ইউটিউব এবং অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছে। অনুরাধা দোসাদ বেস-এর এই ওয়েবিনারে খোলাখুলি এলজিবিটিআইকিউ-এর পক্ষে বক্তব্য দিয়ে বহু বেস সদস্য ও সমর্থকের প্রশংসা অর্জন করেন।
এখানেই শেষ নয়, বেস ঈদকে সামনে রেখে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে। ট্রাস্টটির এই ম্যাগাজিন ৩০ এপ্রিল সায়েন্স কংগ্রেস হলে তারা নিয়ে এসেছিল। দেখা যায়, অনুরাধা দোসাদ-এর ‘কুয়ের মি’ কবিতাটি সেখানে খুব গুরুত্ব দিয়ে পৃষ্ঠাজুড়ে মুদ্রিত হয়েছে। এটা ভুল করে প্রকাশিত হয়েছে, এটা কিন্তু কেউ বলেনি। তাহলে ভেবে-চিন্তে সমকামিতার প্রচারে প্রথমে ওয়েবিনার, পরে ম্যাগাজিনে ‘আমি সমকামি’ কবিতাটির মুদ্রন এবং পরে বেস ও আরও দুই সংগঠনের ঈদ মিলন মঞ্চে ওই কবিয়ত্রীর নাম ঘোষণা করে তা পাঠ করতে দেওয়া– সবই হয়েছে পরিকল্পনা মাফিক। নিজেদের স্বার্থ ও উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নে। কাজেই এটা কোনও ভুলচুক বা হঠাৎ হয়ে যাওয়া ঘটনা নয়।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই তিন সংগঠন সমকামিতার প্রচার-প্রসারে এভাবে আদাজল খেয়ে লেগেছে? অনেকে বলছেন, এর উত্তর নিহিত রয়েছে যারা বেস চালান তাঁদের স্বার্থ ও তৎপরতার উপর। সমকামিতা যেমন বহু দেশে নিষিদ্ধ, কিছু দেশে এর শান্তি মৃত্যুদণ্ড। আবার পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশ সমকামিতার স্বীকৃতি ও প্রসারে খুবই সক্রিয়। তারা মিডিয়া সহায়তা থেকে শুরু করে অর্থ সবকিছু দিয়ে সমকামিতার প্রসার করতে চায়, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলিতে। পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলির মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানির মতো কিছু দেশ। সম্প্রতি রাশিয়া সমকামিতা নিষিদ্ধ করেছে। এই রাষ্ট্রগুলি কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে খুব বেশি উচ্চবাচ্য করছে না। তাদের এখন চিন্তা, কি করে আফ্রিকা ও এশিয়ার মুসলিম রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সমকামিতার প্রসার ঘটানো যায়। তারা এ জন্য বেশকিছু মুসলিম নামধারী সংস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে। নিশানা করছে কিছু মুসলিম শিক্ষক ও অধ্যাপকদের। উদ্দেশ্য হচ্ছে, সরলমতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও ধীরে ধীরে সমকামিতার সম্পর্কে নিজেদের মতবাদকে অনুপ্রবিষ্ট করা।

বেস-এর অন্যতম কর্মকর্তা হাসান ধাবকের একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তিনি মার্কিন কনসুলেটের অফিসে অবস্থান করছেন। ওই ছবিটি হাসান ধাবকের বন্ধুরা নিজেরাই শেয়ার করেছেন। না হলে বেস-এর মতো সংগঠন কেন সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক মানুষদের উন্নয়ন, বিকাশ ও সমস্যা দূরীকরণের মতো অসংখ্য ইস্যু থাকলেও তারা সমকামিতার রজ্জুকেই জড়িয়ে ধরেছে।
বেস-এর অন্যতম কর্মকর্তা হাসান ধাবকের একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তিনি মার্কিন কনসুলেটের অফিসে অবস্থান করছেন। ওই ছবিটি হাসান ধাবকের বন্ধুরা নিজেরাই শেয়ার করেছেন।
একটি অডিয়ো ক্লিপিং সামনে এসেছে, যাতে শোনা যাচ্ছে বেসকে দেওয়া মেম্বারশিপের টাকা ফেরত চাইছেন এক ব্যক্তি। তিনি কথা বলছেন বেস-এর আধিকারিক মঈনউদ্দীন মল্লিকের সঙ্গে। মঈনউদ্দীন মল্লিক তাঁর টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন এবং বলেন, সমকামিতা নিয়ে যে অনুষ্ঠান হয়েছে, তা ছয়-আট মাসের মধ্যেই লোকেরা ভুলে যাবে। কাজেই বিচলিত হয়ে বেস ছেড়ে দেওয়ার দরকার নেই। মঈনউদ্দীন আরও বলেন, বেস-এর সঙ্গে যারা আছেন তাঁরা সকলেই অধ্যাপক ও পিএইচডি। সমাজে তাঁদের ক্ষমতা অনেক। আর বেস যে অনুরাধা দোসাদকে নিয়ে সমকামিতা সম্পর্কে ওয়েবিনার করেছিল, সে সম্পর্কে মঈনউদ্দীন মল্লিকের বক্তব্য, ওটা তেমন কিছু না। ওটা ছিল কমিক্স-এ সমকামিতার প্রভাব নিয়ে আলোচনা। বেস-এর আর এক কর্মকর্তা কাজী শরিফেরও মতামত তুলে ধরে ওই ব্যক্তিকে প্রবোধ দেন মঈনউদ্দীন। কিন্তু একবারও মনে হয়নি যে, মঈনউদ্দীন বা বেস-এর কর্মকর্তারা সমকামিতার প্রচার-প্রসার থেকে সরে আসবেন।
বেস কিভাবে এবং কারা প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেই সম্পর্কেও আগামীতে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আলোচনা হবে ওই ট্রাস্টের ঘোষিত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে। বেস-এর বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সম্পর্কেও অনেকে জানতে চাইছেন।
শিক্ষক ও অধ্যাপকদের মধ্যে সমকামিতার নেটওয়ার্ক যে এভাবে গোপনে ছড়িয়ে পড়েছে, ওই অনুষ্ঠানের পর বিষয়টি ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে এসেছে। আর তা স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম সমাজকে ব্যাপক চিন্তায় ফেলেছে। তাঁরা মনে করছেন, এর উদ্দেশ্য দুটি।

এক, ইসলাম ও কুরআনের শিক্ষা থেকে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের ক্রমশ দূরে সরিয়ে দেওয়া। আর দ্বিতীয়ত, প্রগতিশীলতা ও মুক্তচিন্তার নামে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষিত সমাজের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা। বাংলায় এর আগেও অবশ্য এই ধরনের দু-চারটি গোষ্ঠীর জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু তা খুব বেশিদিন টিকতে পারেনি।
শিক্ষক ও অধ্যাপকদের মধ্যে সমকামি নেটওয়ার্কের প্রসার সম্পর্কে আমরা আগেও দু-একজনের নাম করেছিলাম। তার মধ্যে একজন হচ্ছেন অধ্যাপিকা নাসিমা ইসলাম। তাঁর বাড়ি বীরভূমের ……। এলাকার লোকেরা আশা করেছিল,শিক্ষাগ্রহণ করার পর তিনি হয়তো স্থানীয় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠবেন। কিন্তু নাসিমা যে ভাবে এবং যে ভাষায় সমকামিতর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, তা কখনই সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয়। এখানে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হবে। দ্বিতীয় নজিরটি হচ্ছে, গৌড় কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুরশেদ আলমের। কলেজটি মালদার মঙ্গলবাড়ি এলাকার। বেস-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মুরশেদ আলম সমকামিতার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার তো চালানই, সেইসঙ্গে তিনি রীতিমতো ফেসবুকে একটি হ্যাশট্যাগ খুলে ফেলেছেন। যার নাম ‘বেঙ্গলি মুসলিম ফর হোমসেক্সচুয়ালস’।
হ্যাশট্যাগের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আরও বহু ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষিত মানুষদের সমকামিতার পক্ষে নিয়ে আসা। ধন্যবাদ, তিনি কোনও রাকঢাক রাখেননি। মালদার মঙ্গলবাড়িতে বসে তিনি বুক ফুলিয়ে তাঁর কার্যকলাপ চালাচ্ছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মতিন তাঁর বন্ধু। আবদুল মতিন বেস-এর অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা। তিনি বেস-এর কোষাধ্যক্ষ।
সংখ্যালঘুদের জন্য বহু চেষ্টা ও সংগ্রামের পর প্রতিষ্ঠা হয়েছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে জার্নালিজম ও মাসকমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক হচ্ছেন মুহাম্মদ রিয়াজ। তিনিও সমকামিদের একজন সমর্থক এবং তাদের সপক্ষে জনমত তৈরির কাজে লিপ্ত। বেশ কিছুদিন আগে তিনি সমকামিদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং তাদের সপক্ষে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মুসলিমদের সমকামিদের বিশেষভাবে সমর্থন করা উচিত। কারণ, মুসলিমরা হচ্ছে সংখ্যালঘু। তাই তাদের অন্য সংখ্যালঘু এলজিবিটিআইকিউ-দের সমর্থন জানানো উচিত ইত্যাদি।
পুবের কলম থেকে তাঁকে ফোন করা হলে তিনি স্বীকার করেন যে তিনি ওই ধরনের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তবে মুহাম্মদ রিয়াজ বলেন, আমি মনে করি না সমকামিতা মুসলিম সমাজের জন্য বিরাট কোনও ইস্যু। মুসলিম সমাজের অনেক সমস্যা রয়েছে, সেগুলিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
কথা হচ্ছে, ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরাও অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের শ্রদ্ধা করেন। তাঁদের দ্বারা অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত হন। যদি দেখা যায়, এই অধ্যাপকরাই সমকামিতাকে সমর্থন করে বক্তব্য রাখছেন, তাহলে তার নতিজা কোন দিকে যেতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। বিশেষ করে মুহাম্মদ রিয়াজ একটি সংখ্যালঘু চরিত্রসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তবে মুহাম্মদ রিয়াজ পুবের কলম-এর সাংবাদিককে বলেন, আমি কখনও শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের সামনে সমকামিতার পক্ষে কোনও বক্তব্য দিইনি।