নতুন রাজধানী তৈরির ঘোষণা ইরানের

- আপডেট : ৯ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 394
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে দেশের দক্ষিণে স্থানান্তরের প্রস্তাব নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। তেহরান বর্তমানে চরম জল সংকট, অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং ভূমি ডেবে যাওয়ার মতো সমস্যায় জর্জরিত। এই পরিস্থিতিতে রাজধানী স্থানান্তরকে তিনি ‘বাধ্যতামূলক’ বলে অভিহিত করেছেন।
পেজেশকিয়ান বলেন, তেহরান ইরানের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জল ব্যবহার করে, যা অত্যন্ত অস্থিতিশীল। দক্ষিণে রাজধানী সরিয়ে নিলে তেহরান, কারাজ এবং কাজভিনের মতো শহরগুলিতে জলের ওপর চাপ কমবে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, সামুদ্রিক অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক, সঠিক এবং দেশীয় মানচিত্র তৈরি করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। রাজধানী স্থানান্তর বিতর্কিত হলেও, পেজেশকিয়ান মনে করেন, দেশের সম্পদের ওপর প্রভাব বিবেচনা না করে উন্নয়ন করলে তা কেবল ধ্বংসই নিয়ে আসবে। তাই এই পদক্ষেপ ইরানের ভবিষ্যতের জন্য একটি অপরিহার্য পরিবর্তন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরানের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক মাকরান অঞ্চলকে নতুন রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করা এক সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ হতে পারে। মাকরান অঞ্চল ওমান উপসাগরের তীরে বিস্তৃত, যেখানে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর চাবাহার অবস্থিত। এটি ইরানের একমাত্র মহাসাগরীয় বন্দর, যার মাধ্যমে সরাসরি ভারত মহাসাগরে প্রবেশ সম্ভব। ফলে এ অঞ্চল ইরানের বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চাবাহার বন্দর ইতিমধ্যেই ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক বাণিজ্য করিডরের অংশ, যা পাকিস্তানকে বাইপাস করে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানী মাকরানে সরিয়ে নিলে ইরান শুধু ভূমিকম্পপ্রবণ তেহরান থেকে নিরাপদ দূরত্বেই যাবে না, বরং উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশেও নতুন গতি আসবে। চাবাহারের মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল ইতিমধ্যেই oুত বিকাশমান এবং এখানে শিল্প, বন্দর ও পর্যটন খাতে বিনিয়োগের সুযোগও ব্যাপক। এ অঞ্চলের ভৌগোলিক সুবিধা হল; এটি পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালির সীমাবদ্ধতার বাইরে অবস্থিত, ফলে আন্তর্জাতিক জলপথে সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হয়। মাকরানকে রাজধানী করলে ইরান ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে।
যদিও অঞ্চলটি বর্তমানে তুলনামূলক অনুন্নত, সরকার যদি পরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো ও জলসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ করে, তবে মাকরান হতে পারে ইরানের নতুন অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক হৃদপিণ্ড। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘দীর্ঘমেয়াদে এটি শুধু রাজধানী স্থানান্তর নয়, বরং এক নতুন অর্থনৈতিক দিগন্তের সূচনা।’