২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় ত্রাণ বর্ষণ শুরু ইসরাইলের, তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সাময়িক সামরিক বিরতি

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার
  • / 21

 পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: তীব্র আন্তর্জাতিক সমালোচনার মধ্যে অবশেষে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে ইসরাইল। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলেই মনে করছে ত্রাণ সহায়তা সংস্থাগুলি। শনিবার রাত থেকে গাজ়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আকাশপথে খাবার ও ত্রাণসামগ্রী ফেলা শুরু করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী (IDF)। ক্ষুধার্ত মানুষেরা সেই খাবারের বস্তা লুঠ করতে গিয়ে জখমও হয়েছেন বহুজন।গাজার উত্তর বেইট লাহিয়া অঞ্চলে এক খাবারের বস্তা পড়ে ১১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।

 

শনিবার এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সেনা জানায়, তারা সাতটি বস্তায় ময়দা, চিনি ও ক্যানজাত খাবার গাজায় ফেলে। কিন্তু গাজার বাসিন্দারা পেয়েছেন মাত্র পাঁচটি বস্তা। বাকি দু’টি এমন স্থানে পড়েছে যেখানে সাধারণ মানুষ পৌঁছতে পারে না। সমালোচকদের মতে, একটি ট্রাকেও এই পরিমাণের চেয়ে বেশি ত্রাণসামগ্রী বহন করা সম্ভব। তাই একে “ক্ষুধার সিন্ধুতে বিন্দু বর্ষণ” বলেই অভিহিত করছেন পর্যবেক্ষকরা।

আরও পড়ুন: গাজায় একদিনেই ৭১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলা ও অনাহারে ভয়াবহ মানবিক সংকট

 

আরও পড়ুন: হামাসকে খুঁজে বার করা হবে: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

রবিবার থেকে গাজার নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার সামরিক বিরতির কথা ঘোষণা করেছে ইসরাইল। আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ্ এবং গাজা শহরে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংঘর্ষ স্থগিত রাখবে সেনাবাহিনী, যাতে ত্রাণ কার্য নির্বিঘ্নে চলতে পারে। পাশাপাশি ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ রুট খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের মর্যাদা ফ্রান্সের!

 

তবে ইসরাইল পরিষ্কার করে দিয়েছে, সামরিক অভিযান পুরোপুরি বন্ধ করা হবে না। শুধুমাত্র জনবহুল এলাকায় আংশিক বিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গাজার একমাত্র জল বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টটিতে গত মার্চ থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনীর দাবি, রবিবার থেকে সেই প্ল্যান্টে ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।

 

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা সংস্থা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তীব্র সমালোচনা করেছে ত্রাণের পরিমাণ নিয়ে। তাদের অভিযোগ, ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবেই গাজায় দুর্ভিক্ষ তৈরি করছে। বহু শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে এবং খিদের কারণে প্রাণ হারাচ্ছে। গাজার বহু পরিবার দিনের পর দিন না খেয়ে কাটাচ্ছে।

 

এ দিকে, সম্প্রতি এক ইসরাইলি সেনা আধিকারিক স্বীকার করে নেন যে গাজায় খাদ্য নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। তবে তিনি ‘দুর্ভিক্ষ’ শব্দটি ব্যবহার করতে রাজি হননি। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এখনও তাঁর অবস্থানে অনড়। তাঁর যুক্তি, রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পাঠানো ত্রাণসামগ্রী হামাসের হাতে চলে যাচ্ছে। সেই কারণেই ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে বিশ্বজুড়ে। ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স-সহ বহু দেশে গাজার সমর্থনে পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ় প্রকাশ্যে নিন্দা করেছেন ইসরাইলের এই নীতি। আন্তর্জাতিক চাপে পড়েই গাজায় খাদ্য বর্ষণের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় আইডিএফ, এমনটাই মত কূটনৈতিক মহলের।

 

তবে এখনো পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তার মাত্রা একান্তই সীমিত। গাজার মানুষের কাছে যা কার্যত অচল— বলছে ত্রাণ সংস্থাগুলি। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন না হলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হতে পারে বলেই আশঙ্কা।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গাজায় ত্রাণ বর্ষণ শুরু ইসরাইলের, তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সাময়িক সামরিক বিরতি

আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার

 পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: তীব্র আন্তর্জাতিক সমালোচনার মধ্যে অবশেষে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে ইসরাইল। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলেই মনে করছে ত্রাণ সহায়তা সংস্থাগুলি। শনিবার রাত থেকে গাজ়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আকাশপথে খাবার ও ত্রাণসামগ্রী ফেলা শুরু করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী (IDF)। ক্ষুধার্ত মানুষেরা সেই খাবারের বস্তা লুঠ করতে গিয়ে জখমও হয়েছেন বহুজন।গাজার উত্তর বেইট লাহিয়া অঞ্চলে এক খাবারের বস্তা পড়ে ১১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।

 

শনিবার এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সেনা জানায়, তারা সাতটি বস্তায় ময়দা, চিনি ও ক্যানজাত খাবার গাজায় ফেলে। কিন্তু গাজার বাসিন্দারা পেয়েছেন মাত্র পাঁচটি বস্তা। বাকি দু’টি এমন স্থানে পড়েছে যেখানে সাধারণ মানুষ পৌঁছতে পারে না। সমালোচকদের মতে, একটি ট্রাকেও এই পরিমাণের চেয়ে বেশি ত্রাণসামগ্রী বহন করা সম্ভব। তাই একে “ক্ষুধার সিন্ধুতে বিন্দু বর্ষণ” বলেই অভিহিত করছেন পর্যবেক্ষকরা।

আরও পড়ুন: গাজায় একদিনেই ৭১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু: ইসরায়েলি হামলা ও অনাহারে ভয়াবহ মানবিক সংকট

 

আরও পড়ুন: হামাসকে খুঁজে বার করা হবে: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

রবিবার থেকে গাজার নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার সামরিক বিরতির কথা ঘোষণা করেছে ইসরাইল। আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ্ এবং গাজা শহরে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংঘর্ষ স্থগিত রাখবে সেনাবাহিনী, যাতে ত্রাণ কার্য নির্বিঘ্নে চলতে পারে। পাশাপাশি ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ রুট খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের মর্যাদা ফ্রান্সের!

 

তবে ইসরাইল পরিষ্কার করে দিয়েছে, সামরিক অভিযান পুরোপুরি বন্ধ করা হবে না। শুধুমাত্র জনবহুল এলাকায় আংশিক বিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গাজার একমাত্র জল বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টটিতে গত মার্চ থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনীর দাবি, রবিবার থেকে সেই প্ল্যান্টে ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।

 

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা সংস্থা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তীব্র সমালোচনা করেছে ত্রাণের পরিমাণ নিয়ে। তাদের অভিযোগ, ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবেই গাজায় দুর্ভিক্ষ তৈরি করছে। বহু শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে এবং খিদের কারণে প্রাণ হারাচ্ছে। গাজার বহু পরিবার দিনের পর দিন না খেয়ে কাটাচ্ছে।

 

এ দিকে, সম্প্রতি এক ইসরাইলি সেনা আধিকারিক স্বীকার করে নেন যে গাজায় খাদ্য নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। তবে তিনি ‘দুর্ভিক্ষ’ শব্দটি ব্যবহার করতে রাজি হননি। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এখনও তাঁর অবস্থানে অনড়। তাঁর যুক্তি, রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পাঠানো ত্রাণসামগ্রী হামাসের হাতে চলে যাচ্ছে। সেই কারণেই ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে বিশ্বজুড়ে। ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স-সহ বহু দেশে গাজার সমর্থনে পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ় প্রকাশ্যে নিন্দা করেছেন ইসরাইলের এই নীতি। আন্তর্জাতিক চাপে পড়েই গাজায় খাদ্য বর্ষণের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় আইডিএফ, এমনটাই মত কূটনৈতিক মহলের।

 

তবে এখনো পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তার মাত্রা একান্তই সীমিত। গাজার মানুষের কাছে যা কার্যত অচল— বলছে ত্রাণ সংস্থাগুলি। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন না হলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হতে পারে বলেই আশঙ্কা।