ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কোর্টে যেসব অভিযোগ তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা

- আপডেট : ১৩ জানুয়ারী ২০২৪, শনিবার
- / 16
বিশেষ প্রতিবেদন: ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার অভিযোগ এনে গত ২৯ ডিসেম্বর ইসরাইলের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস’ (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে দু’দিনের শুনানি শেষ হয়েছে শুক্রবার। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্যানুযায়ী, ইসরাইল গাজায় হামলা চালিয়ে ২৩ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ১০ হাজার শিশু। আন্তর্জাতিক আদালতে এই ঘটনাকে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। দেশটি বলেছে, ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, কোনও গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা বা শারীরিক-মানসিক ক্ষতিসাধন, আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, নতুন মানবশিশুর জন্মে বাধাদান ও উদ্বাস্তুতে পরিণত করার মতো ব্যাপারগুলোকে গণহত্যা চালানোর উপায় বলে মনে করা হয়। গাজায় এসব ব্যাপারই ঘটিয়েছে যায়নবাদী বাহিনী। তাই তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধ, যত দ্রুত সম্ভব ‘প্রভিশনাল মেসার্স’ ব্যবহার করে ইসরাইলকে যেন থামায় আদালত। মূলত ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে এই জরুরি আদেশ দিয়ে আগেভাগেই ধ্বংসলীলা থামিয়ে দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার জন্য জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘনকারী ইসরাইল যেন দায়মুক্তি না পায়, সেটিও চায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ প্রত্যাখান করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা, গণহত্যার জন্য আমরা দায়ী নই, দায়ী হামাস। তারা যদি পারত আমাদের সবাইকে হত্যা করত। বরং, আইডিএফ যথাসম্ভব নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করছে।’ ইহুদি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জগও এই মামলাকে ‘অবাস্তব’ বলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসা বলেছেন, ‘গাজার জনগণের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছি। একসময় বৈষম্য, বর্ণবাদ, জাতিভেদ ও রাষ্ট্রের মদদে ঘটা সহিংসতার তিক্তস্বাদ নিতে হয়েছে আমাদেরও, কাজেই আমরা স্পষ্ট জানি যে ইতিহাসের সঠিক পক্ষেই আমরা দাঁড়িয়েছি।’
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে হোক বা বিপক্ষে; কয়েক সপ্তাহের ভেতর আদালত তার প্রাথমিক রায় ঘোষণা করতে পারে। তবে মূল মামলার ক্ষেত্রে আরও অনেক সময় লাগবে। আইসিজে-র বিচারিক কার্যক্রম এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে আইনি প্রতিনিধিদের মৌখিক তর্কাতর্কির পর বিস্তারিত লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে আদালতে। ফলে মামলায় চূড়ান্ত রায় পেতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগতে পারে।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে করা এই মামলায় দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ নিয়েছে বেশকিছু দেশ। মালয়েশিয়া, তুরস্ক, জর্ডান, বলিভিয়া, মালদ্বীপ, নামিবিয়া, পাকিস্তান, কলম্বিয়া এবং ওআইসি-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো রয়েছে এই তালিকায়। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক্ষেত্রে চুপ। এদিকে, ইসরাইল আমেরিকার সমর্থন পাচ্ছে। মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ম্যাট মিলারের মতে, ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাষ্ট্রসংঘ গঠিত হলে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আইনি পরামর্শ দেওয়ার কাজ করে থাকে এই আদালত।