বিচার বিভাগের উপর বিশ্বাস হারালে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে: প্রধান বিচারপতি

- আপডেট : ২১ অগাস্ট ২০২২, রবিবার
- / 15
পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর থেকে মানুষের আস্থা টলে যাওয়া দেশে গণতন্ত্রের বেঁচে থাকার পক্ষে হুমকি। এমনটাই মন্তব্য করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কালে শীর্ষ আদালত-সহ বিভিন্ন কোর্টের রায় নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। প্রশ্ন তুলেছেন কপিল সিব্বালের মতো বর্ষীয়ান আইনজীবীরাও। এই পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
পরের সপ্তাতেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিচ্ছেন রামান। তার আগে শনিবার অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া কোর্ট কমপ্লেক্সের উদ্বোধনে এসে তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন মানুষ যাতে বিচার ব্যবস্থার ওপর থেকে আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে না ফেলে। প্রধান বিচারপতির কথায়, ‘দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর থেকে মানুষের বিশ্বাস চলে যাওয়া দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে হুমকি। এ দিন কোর্ট কমপ্লেক্সের উদ্বোধনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস জগনমেহন রেড্ডি, অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রশান্ত কুমার মিশ্র-সহ উচ্চ আদালতের অন্যান্য বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতি রামানা বলেন, তাঁর সময়কালে তিনি সবসময় বিচার ব্যবস্থায় শূন্যপদ পূরণের উপর জোর দিয়েছেন। ২৫০ জন হাইকোর্টের বিচারপতিকে নিয়োগ করেছেন। প্রধান বিচারপতির কথায়, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর দেড় বছরের মেয়াদে তিনি দু’টি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন, বিচারকদের শূন্যপদ পূরণ ও পরিকাঠামো উন্নয়ন। ২৫০ জন হাইকোর্টের বিচারপতিকে নিয়োগ করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের ১২ জন বিচারপতি রয়েছেন।
এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টগুলিতে ১৫ জন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে। বিচার বিভাগে যাতে সমাজের সকল অংশের মানুষ বিশেষ করে নারী ও অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ যথাযথ প্রতিনিধিত্ব পায় তা তিনি নিশ্চিত করেছেন। বিচার বিভাগে শূন্যপদ পূরণ ও সারা দেশে আদালতগুলির পরিকাঠামো উন্নত করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিভিন্ন রাজ্যেরক মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ও প্রধান বিচারপতিদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন।
কিছু রাজ্যের আর্থিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আদালত ভবন নির্মাণের জন্য কেন্দ্রের কাছে ফান্ড চাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে বলেছিলাম। এই প্রসঙ্গে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘যদিও কেন্দ্র থেকে কিছু বিরোধিতা ছিল, কিন্তু কিছু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী আমাকে সমর্থন করেছিলেন ও কেন্দ্রের কাছে ফান্ড দাবি করেছিলেন। আমি তাঁদের এই সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাই।’
আদালতগুলিতে মামলার পাহাড় ঝুলে থাকা বিচারপ্রক্রিয়ায় একটি বড় সমস্যা বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি রামানা। এর পিছনে অনেক কারণ আছে বলে তিনি জানান। প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা আদালতগুলির বিচারক, বিচারপতি ও আইনজীবীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য।
বিচার বিভাগের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের কাছে ন্যায়বিচার পৌঁছে দেওয়া ও স্বল্প সময়ে যাতে দ্রুত বিচার মেলে তা নিশ্চিত করা। আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বার্তা দেন, বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগকে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন করার জন্য।
বিচারপতি রামানা সেই দিনগুলির কথা স্মরণ করেন যখন তিনি ১৯৮৩ সালে বিজয়ওয়াড়া বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, বিভক্ত হওয়ার পর অন্ধ্রপ্রদেশ আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বলে একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি সটিক হলেও রাজ্যের মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে অন্ধ্রকে একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে উন্নীত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।