০২ মে ২০২৫, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মমতার পথেই মোদি সরকার, নজরে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার
  • / 10

পুবের কলম প্রতিবেদক:  মুখে মমতার হাজারো সমালোচনা , গালাগাল। পদে পদে বাংলাকে ঘিরে বৈষম্যের ষড়যন্ত্র আর বঞ্চনা। পদে পদে কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া। কিন্তু এত কিছু করেও নবান্ন থেকে আর উৎখাত করা যাচ্ছে না বাংলার অগ্নিকন্যাকে। বরঞ্চ প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঢোক গিলে স্বীকার করে নিতে হচ্ছে মমতা যে পথে হাঁটছেন সেটাই ঠিক। যা করছেন সেটাই ঠিক। সেই স্বীকারোক্তির নয়া নমুনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বাংলায় চালু হওয়া বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পটিকেই এবার অনুসরণ করছে মোদি সরকার। প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনাকে এবার মমতার দেখানো পথে হেঁটেই পরিচালনা করতে চাইছেন দেশের শাসকেরা।

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা থেকে বেশ কয়েক বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। পুরো নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করে রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষিবিমা সংস্থার মাধ্যমে পৃথক প্রকল্প চালানো শুরু করে রাজ্য।

প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত প্রকল্পটিতেও প্রিমিয়ামের অর্ধেক খরচ রাজ্য সরকারকে বহন করতে হতো। তাছাড়া কৃষকদেরও প্রিমিয়ামের কিছু অংশ বহন করতে হয়। রাজ্যের প্রকল্পটিতে চাষিদের সেটা দিতে হয় না। রাজ্য সরকারের বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পটির আরও একটি বিশেষত্ব আছে আছে, যা কোথাও নেই।

সেটি হল রাজ্য সরকারের তরফে প্রিমিয়াম বাবদ যে টাকা দেওয়া হয়, তার একটা অংশ ফেরত পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে রাজ্য সরকারের প্রচুর টাকা সাশ্রয় হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, একটি মরশুমে তো রাজ্য সরকার প্রিমিয়াম বাবদ দেওয়া টাকা থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ফেরত পেয়েছে।

২০২০ সাল থেকে বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পে ফসলের ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণের জন্য উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা ছবি ব্যবহারের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা চালু আছে। এতদিনে সেই ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের শস্য বিমা প্রকল্পটিতে চালু করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যে সব রাজ্যে এই প্রকল্পটি চলছে,  সেই রাজ্যের সরকারকে আসন্ন খরিফ মরশুম থেকে উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করে ক্ষতি নির্ধারণের ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষিবিমা সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতি নির্ধারণ করার জন্য তিন ধরনের প্রস্তাব কেন্দ্রের তরফে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এরাজ্যে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে ‘ফসল স্বাস্থ্য ফ্যাক্টর’ নির্ধারণের যে সবথেকে উন্নত ব্যবস্থা চালু আছে সেটিও কেন্দ্র অনুসরণ করছে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শস্য বিমা প্রকল্পটি নিয়ে সম্প্রতি একটি তথ্য প্রকাশ্যে আসে। ২০১৬ সালে চালু হওয়ার পর কয়েকটি বেসরকারি বিমা সংস্থা এখান থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাগুলির মুনাফা অনেক কম। প্রাপ্য প্রিমিয়ামের তুলনায় যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, সেটা অনেক কম হওয়ায় এই মুনাফা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের প্রকল্পটিতে যে ব্যবস্থা আছে, তাতে কোনও মরশুমে যে টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, তা প্রিমিয়ামের থেকে কম হলে সরকার টাকা ফেরত পায়। সেক্ষেত্রে বিমা সংস্থা প্রশাসনিক খাতে খরচের জন্য প্রিমিয়ামের ২০ শতাংশ টাকা রেখে বাকিটা সরকারকে ফেরত দেয়।

অর্থাৎ সাফ বোঝা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শস্য বিমা প্রকল্পটি কৃষকেরা যে টাকা দিয়েছেন কার্যত তাতেই পকেট বোঝাই হয়েছে বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলির। অর্থাৎ এই প্রকল্পে আদরে কৃষকদেরই শোষণ করা হচ্ছে। এবার তাই এক্ষেত্রেও মমতার দেখানো পথেই হাঁটা দিতে পারে মোদি সরকার এমনটাই মনে করা হচ্ছে। বিদায় হতে পারে বেসরকারি বিমা সংস্থা, সেই জায়গায় আসতে পারে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা।

 

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মমতার পথেই মোদি সরকার, নজরে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা

আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার

পুবের কলম প্রতিবেদক:  মুখে মমতার হাজারো সমালোচনা , গালাগাল। পদে পদে বাংলাকে ঘিরে বৈষম্যের ষড়যন্ত্র আর বঞ্চনা। পদে পদে কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া। কিন্তু এত কিছু করেও নবান্ন থেকে আর উৎখাত করা যাচ্ছে না বাংলার অগ্নিকন্যাকে। বরঞ্চ প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঢোক গিলে স্বীকার করে নিতে হচ্ছে মমতা যে পথে হাঁটছেন সেটাই ঠিক। যা করছেন সেটাই ঠিক। সেই স্বীকারোক্তির নয়া নমুনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বাংলায় চালু হওয়া বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পটিকেই এবার অনুসরণ করছে মোদি সরকার। প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনাকে এবার মমতার দেখানো পথে হেঁটেই পরিচালনা করতে চাইছেন দেশের শাসকেরা।

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা থেকে বেশ কয়েক বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। পুরো নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করে রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষিবিমা সংস্থার মাধ্যমে পৃথক প্রকল্প চালানো শুরু করে রাজ্য।

প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত প্রকল্পটিতেও প্রিমিয়ামের অর্ধেক খরচ রাজ্য সরকারকে বহন করতে হতো। তাছাড়া কৃষকদেরও প্রিমিয়ামের কিছু অংশ বহন করতে হয়। রাজ্যের প্রকল্পটিতে চাষিদের সেটা দিতে হয় না। রাজ্য সরকারের বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পটির আরও একটি বিশেষত্ব আছে আছে, যা কোথাও নেই।

সেটি হল রাজ্য সরকারের তরফে প্রিমিয়াম বাবদ যে টাকা দেওয়া হয়, তার একটা অংশ ফেরত পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে রাজ্য সরকারের প্রচুর টাকা সাশ্রয় হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, একটি মরশুমে তো রাজ্য সরকার প্রিমিয়াম বাবদ দেওয়া টাকা থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ফেরত পেয়েছে।

২০২০ সাল থেকে বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পে ফসলের ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণের জন্য উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা ছবি ব্যবহারের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা চালু আছে। এতদিনে সেই ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের শস্য বিমা প্রকল্পটিতে চালু করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যে সব রাজ্যে এই প্রকল্পটি চলছে,  সেই রাজ্যের সরকারকে আসন্ন খরিফ মরশুম থেকে উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করে ক্ষতি নির্ধারণের ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষিবিমা সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতি নির্ধারণ করার জন্য তিন ধরনের প্রস্তাব কেন্দ্রের তরফে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এরাজ্যে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে ‘ফসল স্বাস্থ্য ফ্যাক্টর’ নির্ধারণের যে সবথেকে উন্নত ব্যবস্থা চালু আছে সেটিও কেন্দ্র অনুসরণ করছে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শস্য বিমা প্রকল্পটি নিয়ে সম্প্রতি একটি তথ্য প্রকাশ্যে আসে। ২০১৬ সালে চালু হওয়ার পর কয়েকটি বেসরকারি বিমা সংস্থা এখান থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাগুলির মুনাফা অনেক কম। প্রাপ্য প্রিমিয়ামের তুলনায় যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, সেটা অনেক কম হওয়ায় এই মুনাফা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের প্রকল্পটিতে যে ব্যবস্থা আছে, তাতে কোনও মরশুমে যে টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, তা প্রিমিয়ামের থেকে কম হলে সরকার টাকা ফেরত পায়। সেক্ষেত্রে বিমা সংস্থা প্রশাসনিক খাতে খরচের জন্য প্রিমিয়ামের ২০ শতাংশ টাকা রেখে বাকিটা সরকারকে ফেরত দেয়।

অর্থাৎ সাফ বোঝা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শস্য বিমা প্রকল্পটি কৃষকেরা যে টাকা দিয়েছেন কার্যত তাতেই পকেট বোঝাই হয়েছে বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলির। অর্থাৎ এই প্রকল্পে আদরে কৃষকদেরই শোষণ করা হচ্ছে। এবার তাই এক্ষেত্রেও মমতার দেখানো পথেই হাঁটা দিতে পারে মোদি সরকার এমনটাই মনে করা হচ্ছে। বিদায় হতে পারে বেসরকারি বিমা সংস্থা, সেই জায়গায় আসতে পারে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা।