১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দু’বেলার আহার জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে গ্রামীণ ভারত: গবেষণা রিপোর্ট

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, বুধবার
  • / 75

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ক্ষমতায় এসে ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকী খুব সম্প্রতি তিনি দাবি করেছিলেন, সেদিন আর বেশি দূরে নেই যখন ভারত ৫ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ হতে চলেছে। যদিও একটি গবেষণা রিপোর্ট যে তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে তা ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্নকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

একদিকে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন ঢাকঢোল পিটিয়ে তাঁর সরকারের ‘সাফল্য’ তুলে ধরে বলছেন যে, তাঁর সরকারের আমলে দেশে চরম দারিদ্র্য ৮০ শতাংশ কমেছে ও ২৫ কোটি জনতা দারিদ্র্য সীমার উপরে উঠে এসেছে সেই পরিস্থিতিতে এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরা হল ওই গবেষণা রিপোর্টে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ভাঙা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মমতার, চাইলেন হস্তক্ষেপ

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দিনে দু’বার পূর্ণ খাবারের খরচ বহন করতে পারে না। এদিকে, সোমবারই আবার বিজেপির তরফে প্রকাশিত একটি নথিতে নীতি আয়োগ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরাম থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী মোদির ক্ষমতায় থাকার গত ১১ বছরে ভারত দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জনকল্যাণে অভূতপূর্ব পরিবর্তন হয়েছে, যা দলটি বলেছে ‘স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করে রাখার যোগ্য’।

আরও পড়ুন: মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে মন্ত্রীদের করতে হবে কোভিড পরীক্ষা!

বিশ্বব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও আবার বলা হয়েছে, ভারতের চরম দারিদ্র্যের হার ২০২২-২৩ সালে ৫.৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১১-১২ সালে ২৭.১ শতাংশ ছিল এবং ওই একই সময়ে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৩৪ কোটি ৪৪ লক্ষ ৭০ হাজার থেকে কমে মাত্র ৭ কোটি ৫২ লক্ষ ৪০ হাজারে নেমে এসেছে। আর এখানেই মোক্ষম প্রশ্নটি ছুড়ে দিয়েছে ‘খাদ্য বঞ্চনা: থালি মূল্য সূচক-এর ভিত্তিতে একটি প্রকাশ, যা দারিদ্র্য হিসেব-নিকেশে ফুটে ওঠে না’ শীর্ষক একটি অ্যাকাডেমিক গবেষণা।

আরও পড়ুন: ভারত বাছ-বিচার না করেই বাসিন্দাদের বিতাড়ন করছে, দরিদ্র বলে তারা আদালতে যেতে পারছে না

চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত এই অ্যাকাডেমিক গবেষণা একটি ‘থালি’র হিসেবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান প্রকাশ করেছে এবং ভারতে দারিদ্র্য পরিমাপের বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছে। সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পুলাপ্রে বালকৃষ্ণণ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের ক্রেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমান রাজের যৌথ গবেষণায় এই রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে। থালি-সূচকের মাধ্যমে খাদ্য দারিo্যতা মাপতে দু’টো পূর্ণ থালিকে ‘সম্পূর্ণ মিল’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এক একটি পূর্ণ থালি বলতে তাতে খাদ্য, শাকসবজি এবং ডাল সহ সুষম আহার অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে।

গবেষণা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, পুষ্টির ঘাটতি ও আয়-ব্যয়ের বিচারে অনেক সময় দারিদ্র্য তার সঠিক চিত্র ধরা পড়ে না। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রামীণ ভারতে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ প্রতিদিন দু’টি নিরামিষ থালি কিনতে পারে না। আর ৮০ শতাংশ মানুষ রোজ একটি নিরামিষ এবং একটি আমিষ থালি একসঙ্গে কিনতে পারে না, যার মোট দাম ৮৮ টাকা।

শহরাঞ্চলে জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন দুটি নিরামিষ থালি কিনতে পারে না। আর প্রতিদিন ৫০ শতাংশ মানুষ একটি নিরামিষ এবং একটি আমিষ থালি একসঙ্গে কিনতে পারে না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গ্রামীণ ভারতে খাদ্য বঞ্চনা মানুষের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত। থালি সূচক দেখায় যে, শুধুমাত্র খাদ্য-ব্যয় ধরে নিলেও গ্রামীণ জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ এবং শহুরে জনসংখ্যার ২০-৩০ শতাংশের জন্য প্রতি ব্যক্তির জন্য দৈনিক দুটি নিরামিষ থালি সরবরাহ করে না।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের বিশ্ব ক্ষুধার সূচকে ভারতের স্থান ১২৭টি দেশের মধ্যে ১০৫ নম্বরে। এই র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতকে বাংলাদেশের পরেই রাখা হয়েছে।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দু’বেলার আহার জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে গ্রামীণ ভারত: গবেষণা রিপোর্ট

আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, বুধবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ক্ষমতায় এসে ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকী খুব সম্প্রতি তিনি দাবি করেছিলেন, সেদিন আর বেশি দূরে নেই যখন ভারত ৫ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ হতে চলেছে। যদিও একটি গবেষণা রিপোর্ট যে তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে তা ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্নকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

একদিকে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন ঢাকঢোল পিটিয়ে তাঁর সরকারের ‘সাফল্য’ তুলে ধরে বলছেন যে, তাঁর সরকারের আমলে দেশে চরম দারিদ্র্য ৮০ শতাংশ কমেছে ও ২৫ কোটি জনতা দারিদ্র্য সীমার উপরে উঠে এসেছে সেই পরিস্থিতিতে এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরা হল ওই গবেষণা রিপোর্টে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ভাঙা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মমতার, চাইলেন হস্তক্ষেপ

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দিনে দু’বার পূর্ণ খাবারের খরচ বহন করতে পারে না। এদিকে, সোমবারই আবার বিজেপির তরফে প্রকাশিত একটি নথিতে নীতি আয়োগ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরাম থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী মোদির ক্ষমতায় থাকার গত ১১ বছরে ভারত দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জনকল্যাণে অভূতপূর্ব পরিবর্তন হয়েছে, যা দলটি বলেছে ‘স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করে রাখার যোগ্য’।

আরও পড়ুন: মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে মন্ত্রীদের করতে হবে কোভিড পরীক্ষা!

বিশ্বব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও আবার বলা হয়েছে, ভারতের চরম দারিদ্র্যের হার ২০২২-২৩ সালে ৫.৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১১-১২ সালে ২৭.১ শতাংশ ছিল এবং ওই একই সময়ে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৩৪ কোটি ৪৪ লক্ষ ৭০ হাজার থেকে কমে মাত্র ৭ কোটি ৫২ লক্ষ ৪০ হাজারে নেমে এসেছে। আর এখানেই মোক্ষম প্রশ্নটি ছুড়ে দিয়েছে ‘খাদ্য বঞ্চনা: থালি মূল্য সূচক-এর ভিত্তিতে একটি প্রকাশ, যা দারিদ্র্য হিসেব-নিকেশে ফুটে ওঠে না’ শীর্ষক একটি অ্যাকাডেমিক গবেষণা।

আরও পড়ুন: ভারত বাছ-বিচার না করেই বাসিন্দাদের বিতাড়ন করছে, দরিদ্র বলে তারা আদালতে যেতে পারছে না

চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত এই অ্যাকাডেমিক গবেষণা একটি ‘থালি’র হিসেবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান প্রকাশ করেছে এবং ভারতে দারিদ্র্য পরিমাপের বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছে। সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পুলাপ্রে বালকৃষ্ণণ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের ক্রেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমান রাজের যৌথ গবেষণায় এই রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে। থালি-সূচকের মাধ্যমে খাদ্য দারিo্যতা মাপতে দু’টো পূর্ণ থালিকে ‘সম্পূর্ণ মিল’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এক একটি পূর্ণ থালি বলতে তাতে খাদ্য, শাকসবজি এবং ডাল সহ সুষম আহার অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে।

গবেষণা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, পুষ্টির ঘাটতি ও আয়-ব্যয়ের বিচারে অনেক সময় দারিদ্র্য তার সঠিক চিত্র ধরা পড়ে না। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রামীণ ভারতে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ প্রতিদিন দু’টি নিরামিষ থালি কিনতে পারে না। আর ৮০ শতাংশ মানুষ রোজ একটি নিরামিষ এবং একটি আমিষ থালি একসঙ্গে কিনতে পারে না, যার মোট দাম ৮৮ টাকা।

শহরাঞ্চলে জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন দুটি নিরামিষ থালি কিনতে পারে না। আর প্রতিদিন ৫০ শতাংশ মানুষ একটি নিরামিষ এবং একটি আমিষ থালি একসঙ্গে কিনতে পারে না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গ্রামীণ ভারতে খাদ্য বঞ্চনা মানুষের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত। থালি সূচক দেখায় যে, শুধুমাত্র খাদ্য-ব্যয় ধরে নিলেও গ্রামীণ জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ এবং শহুরে জনসংখ্যার ২০-৩০ শতাংশের জন্য প্রতি ব্যক্তির জন্য দৈনিক দুটি নিরামিষ থালি সরবরাহ করে না।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের বিশ্ব ক্ষুধার সূচকে ভারতের স্থান ১২৭টি দেশের মধ্যে ১০৫ নম্বরে। এই র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতকে বাংলাদেশের পরেই রাখা হয়েছে।