পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ লোকসভা ভোটের প্রচারে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন জনসভা থেকে যে ভাষণ দিচ্ছেন তাতে মুসলিম বিদ্বেষ প্রকট হয়ে উঠছে। তৃতীয় দফার ভোটের আগে মঙ্গলবার তেলেঙ্গনার মেডাক জেলায় একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদি বলেন, “ওরা( কংগ্রেস) ভোট ব্যাংকের জন্য সংবিধানকে অপমান করতে চায়। কিন্তু আমি তাদের জানাতে চাই, যতদিন আমি বেঁচে আছি ততদিন দলিত, জনজাতি, উপজাতি ওবিসিদের জন্য ধার্য সংরক্ষণ ধর্মের নামে মুসলিমদের দিয়ে দিতে দেবো না।”
একই দিনে সংরক্ষণ ইস্যুতে একই সুর শোনা গেছে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর মতে কংগ্রেস সমাজবাদী পার্টি-সহ ইন্ডিয়া জোট নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়কে সংরক্ষণের আওতায় আনতে চায়। পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসে মুসলিম বিরোধী সুর চড়ান। তিনি বলেন, রামনবমীতে দাঙ্গাকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে বুঝিয়ে দিতাম। আদিত্য নাথ বলেন, আপনাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। ঠকানো হচ্ছে। মুসলমানদের সংরক্ষণের পক্ষে ওকালতি করা ভারতকে আরও একবার ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করার সমান। কোনও পরিস্থিতিতে ভারতকে ভাগ করতে দেওয়া যাবে না।
এর আগেও প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস শাসিত রাজ্য সরকারগুলিকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ মুসলিমদের দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে আক্রমণ করেছিলেন। কর্ণাটক সরকারের মুসলিমদের ওবিসি-র অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন তিনি। এই মর্মে দলের লোকসভার প্রার্থীদের চিঠিও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দলের প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, সংরক্ষণ ইস্যুতে সুর চড়াতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী তথা গুজরাটের পোরবন্দর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মনসুখ মাণ্ডব্য মঙ্গলবার হিন্দিতে লেখা নরেন্দ্র মোদির সেই চিঠি এক্স হ্যান্ডেকে পোস্ট করেছেন।
প্রসঙ্গত, কর্ণাটকের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল রবি কুমার ভারতের এসসি এসটি ওবিসি শ্রেণির সংরক্ষণের আইনি ও সামাজিক দিকগুলি ব্যাখ্যা করে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন দেশে মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণ কখনোই ধর্মের ভিত্তিতে ছিলো না।
উল্লেখ্য, ভারতে মুসলমানরা কেমন আছে তা জানতে নিয়োজিত হয়েছিল রাজেন্দ্র সাচার কমিটি। সেই কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, ভারতীয় মুসলিমদের অবস্থা তফসিলি জাতি, উপজাতির চেয়েও খারাপ। যদিও সাচার কমিটির বৈধতাকে প্রশ্ন করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল। পিটিশনে বলা হয়, সংবিধানের ১৪ ও ১৫ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য আলাদাভাবে আচরণ করা যায় না। তবে এই বিতর্কের মধ্যেই কর্ণাটকে মুসলিমদের ৪ শতাংশ সংরক্ষণের আওতায় আনে কংগ্রেস সরকার। পরে বিজেপির আমলে তা তুলে নেওয়া হলেও নতুন করে সে রাজ্যে ক্ষমতায় এসে তা চালু করে হাত শিবির।
পর পর দুই বারে দশ বছর কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনা করার পরেও মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার জন্য ফের মুসলিম বিরোধিতাকেই প্রচারের প্রধান বিষয় করে তোলায় বিস্মিত রাজনৈতিক মহল। কোথায় গেল উন্নয়নের স্লোগান ‘মোদি গ্যারান্টি’ প্রশ্ন তুলছে বিরোধী দলগুলি।