স্ত্রী’র চাকরি করায় আপত্তি! রাগে উন্মত্ত হয়ে হাত কবজি থেকে কেটে দিল স্বামী

- আপডেট : ৬ জুন ২০২২, সোমবার
- / 23
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: আধুনিক সমাজে মেয়েরা শিক্ষিত হবে, চাকরি করবে, স্বনির্ভর হবে এটাই স্বাভাবিক। ছোট থেকেই মেয়েরা সেভাবে গড়ে তুলছে নিজেকে। কিন্তু সেখানেও বাদ সাধছে হীন মানসিকতা। এখনও সমাজ পড়ে আছে, এমন একটি গণ্ডির মধ্যে যেখানে একশ্রেণির মানুষ এখনও মনে করে মেয়েরা জন্মেছে চার দেওয়ালে বন্দি হয়ে থাকার জন্য। সেই লক্ষ্ণণ সীমা পার হতেই চাইলেই নেমে আসছে নির্যাতন।
এমন একটি ঘটনার সাক্ষী থাকল পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের চিকিসপুর। নির্যাতিতার অপরাধ সে চাকরি করে স্বনির্ভর হতে চেয়েছিল। স্ত্রী’য়ের এই জেদ স্বামীর পছন্দ হয়নি। তাই কথা না শোনার শাস্তি পেতে হল ‘অবাধ্য স্ত্রী’কে। রাগে অন্ধ হয়ে স্ত্রীয়ের ডান হাত কবজি থেকে কেটে দিল স্বামী। নির্যাতিতার নাম রেণু খাতুন।
এই ঘটনার কথা জানাজানি হতে হতবাক হয়ে গেছে মেয়ের বাড়ির লোকজন। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের চিনিসপুরের বাসিন্দা আজিজুল হকের মেয়ে রেণু খাতুনের ডান হাত কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী শের মহম্মদ শেখের বিরুদ্ধে। রেণুর পরিবারের দাবি, সামনের সপ্তাহেই তাঁর নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই এই ঘটনা।
আজিজুলের হকের পাঁচ মেয়ে এবং তিন ছেলে। তার মধ্যে ছোট মেয়ে রেণু। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কোজলসা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ শেখের একমাত্র ছেলে মহম্মদ ওরফে সরিফুলের সঙ্গে রেণুর বিয়ে হয়। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করতেন রেণু। কিন্তু রেণুর চাকরি করা প্রথম থেকেই পছন্দ করেনি তার পরিবার।
আজিজুল হক জানিয়েছেন, চাকরি করা নিয়ে মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে প্রায় গঞ্জনা শুনতে হত। কিন্তু মেয়ে সরকারি চাকরির সুযোগ ছাড়তে রাজি ছিল না। দুর্গাপুরে বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করার সময় রেণুর সঙ্গেই থাকত মহম্মদ। সম্প্রতি সে কেতুগ্রামে ফিরে বাবার মুদিখানার দোকান সামলাত।
আজিজুল হক আরও জানিয়েছেন, জামাইয়ের ধারণা হয়েছিল, রেণু চাকরি করলে সে আর বোধ হয় শ্বশুরবাড়িতে থাকবে না’।
বোনের এই অবস্থায় ভেঙে পড়েছেন রেণুর দাদা রিপন শেখ। রিপন জানিয়েছেন, দুই পরিবারের মধ্যে কথাবার্তার পর ওদের বিয়ে হয়েছিল। বোনের এই অবস্থা করবে ভাবতে পারিনি। সরকারি চাকরি পাকা হয়ে গিয়েছে বলে বোন দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ইস্তফাপত্র জমা দিতে গিয়েছিল। সেখান থেকে শনিবার প্রথমে আমাদের বাড়িতে আসে। তার পর রাতে শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। সেই রাতেই বোনের ওপরে নির্যাতন চালানোর খবর আসে।
জানা গেছে, রেণু যখন ঘুমোচ্ছিল তখন তার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তার ডান হাত কবজি থেকে উড়িয়ে দেয় তার স্বামী মহম্মদ। তার বন্ধুরা তাকে জানায় সরকারি চাকরি পেলেই তাকে ছেড়ে চলে যাবে রেণু। তার পরেই এই কাণ্ড ঘটায় মহম্মদ। প্রথমে রেণুকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সে সময় মহম্মদ রেণুর ডান হাতের কাটা অংশটি লুকিয়ে রাখেন বলেও অভিযোগ। পরে দুর্গাপুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় রেণুকে।
প্রসঙ্গত, রেণু খাতুন নার্সিং কোর্স সম্পূর্ণ করে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরিতে যোগদান করেন। তার মাঝেই সরকারি চাকরিতে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। সম্প্রতি চাকরির প্যানেলে তাঁর নামও ওঠে। হাতে পেয়েছিলেন সরকারি চাকরিতে যোগদানের চিঠিও। কিন্তু সেই চাকরিতে যোগদানের আগেই এই ঘটনা হল রেণু খাতুনের সঙ্গে।
ওই ঘটনায় রেণু খাতুনের স্বামী মহম্মদ, তার বাবা, মা সহ মহম্মদের দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকে সকলেই পলাতক। তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।