০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টাকা পেয়েও যাঁরা কাজ শুরু করেনি ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প নিয়ে কড়া পঞ্চায়েত দফতর

মারুফা খাতুন
  • আপডেট : ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সোমবার
  • / 102

পুবের কলম প্রতিবেদক : কেন্দ্রীয় সরকারের আবাস যোজনার অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ এলাকার গৃহহীন মানুষকে বাড়ি তৈরির জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া। কিন্তু সম্প্রতি এই প্রকল্পে কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে পঞ্চায়েত দফতর, কারণ জানা গেছে অনেক উপভোক্তা প্রাপ্ত অর্থ সঠিক কাজে ব্যবহার করছেন না।

টাকা নয়ছয় এবং অর্থ ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত : 

আরও পড়ুন: আমাদের পাড়া আমাদের সমাধানে এলাকার মানুষদের কথা শুনলেন বিধায়ক বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রকল্পের অর্থ যারা ঘর তৈরির বদলে অন্য খাতে খরচ করেছেন বা টাকা অ্যাকাউন্টে ফেলে রেখেছেন, তাদের কাছ থেকে সেই টাকা ফেরত নেওয়া হবে। বিভিন্ন জেলায় দেখা গেছে, কিছু উপভোক্তা সরকারি অনুদান পেয়েও বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেননি।

আরও পড়ুন: প্রবল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্তদের “বাংলার বাড়ি” প্রকল্পে বাড়ি বানিয়ে দেবে নবান্ন

আবার কেউ কেউ সেই টাকা ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত দফতর জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে, প্রত্যেক উপভোক্তার বাড়ির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। যদি কোনো উপভোক্তা কাজ শুরু না করেন, তবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

আরও পড়ুন: ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রথম দিনেই ৬৩২ শিবিরে কাজ শুরু, ট্যুইট করে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “বাড়ি নির্মাণের শর্তেই রাজ্য সরকার উপভোক্তাদের টাকা দেয়। সরকারি সুবিধা পেয়েও যারা বাড়ি তৈরি করছেন না, তাদের ক্ষেত্রে টাকা ফেরত নেওয়ার বিধান রয়েছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে এই অর্থ যেন সঠিক ভাবে খরচ হয়।”

প্রকল্পের অনুদান এবং সময়সীমা : 
‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি পরিবারকে বাড়ি তৈরির জন্য মোট ১.২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। যদিও প্রথমে তিন কিস্তিতে টাকা দেওয়ার কথা ছিল, পরে সিদ্ধান্ত হয় যে দু’টি কিস্তিতে এই টাকা দেওয়া হবে। প্রথম কিস্তিতে ৬০,০০০ টাকা এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬০,০০০ টাকা।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছিল এবং ২০২৫ সালের মে মাসে দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে আরও ৬০,০০০ টাকা পাঠানো হয়। নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রথম কিস্তি পাওয়ার পর ১২ মাসের মধ্যে বাড়ি তৈরি সম্পূর্ণ করার কথা।

প্রকল্পের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : 

রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এই প্রকল্পের আওতায় মোট ২৮ লক্ষ পরিবার চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২ লক্ষ পরিবার অনুদান পেয়েছে। বাকি ১৬ লক্ষ পরিবার আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর ও ২০২৬ সালের মে মাসে কিস্তি অনুযায়ী সুবিধা পাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও ১৬ লক্ষ পরিবারকে এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা করেছেন, যার ফলে ভবিষ্যতে প্রায় ৫০ লক্ষ গৃহহীন মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।

নজরদারি ও স্বচ্ছতা : 

এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি জেলায় বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, যেখানে অনুদান পেয়েও বাড়ি হচ্ছে না, সেই বিষয়ে জেলা প্রশাসন পঞ্চায়েত দফতরকে বিস্তারিত রিপোর্ট দেবে। সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই কঠোর পদক্ষেপের ফলে প্রকল্পের টাকা নয়ছয় রোধ হবে এবং প্রকৃত গৃহহীন মানুষ তাদের স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হবেন।

প্রসঙ্গত, প্রথম দফার টাকা পাওয়ার পর মুর্শিদাবাদ জেলাতেও একটি বড় অংশের মানুষ বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেনি। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছিল সেই তালিকা ধরেই বাড়ি তৈরীর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল অনেকের দাবি ছিল তাদের পরিবারের প্রধান সদস্য পরিযায়ী শ্রমিক। বাইরে কাজ করে কিছু টাকা সংগ্রহ করে ভালো বাড়ি তৈরি করবেন।

কিন্তু আদৌ কী তা হয়েছে ?এরপরেও কাজ কতটা এগিয়েছে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কি উদ্যোগ নিয়েছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে উৎসব শেষ হলেই সেই সমস্ত বাড়ির কাজ শুরু হবে। দ্বিতীয় দফা টাকার পাওয়ার পরও যারা বাড়ির কাজ শুরু করেনি তাদের বিষয়ে প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের মতো আরো বড় জেলা রয়েছে যেখানে অনেকে কাজ শুরু করেনি তাদেরও তালিকা তৈরি করছেন নবান্ন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

টাকা পেয়েও যাঁরা কাজ শুরু করেনি ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প নিয়ে কড়া পঞ্চায়েত দফতর

আপডেট : ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম প্রতিবেদক : কেন্দ্রীয় সরকারের আবাস যোজনার অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ এলাকার গৃহহীন মানুষকে বাড়ি তৈরির জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া। কিন্তু সম্প্রতি এই প্রকল্পে কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে পঞ্চায়েত দফতর, কারণ জানা গেছে অনেক উপভোক্তা প্রাপ্ত অর্থ সঠিক কাজে ব্যবহার করছেন না।

টাকা নয়ছয় এবং অর্থ ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত : 

আরও পড়ুন: আমাদের পাড়া আমাদের সমাধানে এলাকার মানুষদের কথা শুনলেন বিধায়ক বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রকল্পের অর্থ যারা ঘর তৈরির বদলে অন্য খাতে খরচ করেছেন বা টাকা অ্যাকাউন্টে ফেলে রেখেছেন, তাদের কাছ থেকে সেই টাকা ফেরত নেওয়া হবে। বিভিন্ন জেলায় দেখা গেছে, কিছু উপভোক্তা সরকারি অনুদান পেয়েও বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেননি।

আরও পড়ুন: প্রবল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্তদের “বাংলার বাড়ি” প্রকল্পে বাড়ি বানিয়ে দেবে নবান্ন

আবার কেউ কেউ সেই টাকা ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত দফতর জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে, প্রত্যেক উপভোক্তার বাড়ির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। যদি কোনো উপভোক্তা কাজ শুরু না করেন, তবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

আরও পড়ুন: ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রথম দিনেই ৬৩২ শিবিরে কাজ শুরু, ট্যুইট করে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “বাড়ি নির্মাণের শর্তেই রাজ্য সরকার উপভোক্তাদের টাকা দেয়। সরকারি সুবিধা পেয়েও যারা বাড়ি তৈরি করছেন না, তাদের ক্ষেত্রে টাকা ফেরত নেওয়ার বিধান রয়েছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে এই অর্থ যেন সঠিক ভাবে খরচ হয়।”

প্রকল্পের অনুদান এবং সময়সীমা : 
‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি পরিবারকে বাড়ি তৈরির জন্য মোট ১.২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। যদিও প্রথমে তিন কিস্তিতে টাকা দেওয়ার কথা ছিল, পরে সিদ্ধান্ত হয় যে দু’টি কিস্তিতে এই টাকা দেওয়া হবে। প্রথম কিস্তিতে ৬০,০০০ টাকা এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬০,০০০ টাকা।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছিল এবং ২০২৫ সালের মে মাসে দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে আরও ৬০,০০০ টাকা পাঠানো হয়। নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রথম কিস্তি পাওয়ার পর ১২ মাসের মধ্যে বাড়ি তৈরি সম্পূর্ণ করার কথা।

প্রকল্পের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : 

রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এই প্রকল্পের আওতায় মোট ২৮ লক্ষ পরিবার চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২ লক্ষ পরিবার অনুদান পেয়েছে। বাকি ১৬ লক্ষ পরিবার আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর ও ২০২৬ সালের মে মাসে কিস্তি অনুযায়ী সুবিধা পাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও ১৬ লক্ষ পরিবারকে এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা করেছেন, যার ফলে ভবিষ্যতে প্রায় ৫০ লক্ষ গৃহহীন মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।

নজরদারি ও স্বচ্ছতা : 

এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি জেলায় বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, যেখানে অনুদান পেয়েও বাড়ি হচ্ছে না, সেই বিষয়ে জেলা প্রশাসন পঞ্চায়েত দফতরকে বিস্তারিত রিপোর্ট দেবে। সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই কঠোর পদক্ষেপের ফলে প্রকল্পের টাকা নয়ছয় রোধ হবে এবং প্রকৃত গৃহহীন মানুষ তাদের স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হবেন।

প্রসঙ্গত, প্রথম দফার টাকা পাওয়ার পর মুর্শিদাবাদ জেলাতেও একটি বড় অংশের মানুষ বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেনি। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছিল সেই তালিকা ধরেই বাড়ি তৈরীর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল অনেকের দাবি ছিল তাদের পরিবারের প্রধান সদস্য পরিযায়ী শ্রমিক। বাইরে কাজ করে কিছু টাকা সংগ্রহ করে ভালো বাড়ি তৈরি করবেন।

কিন্তু আদৌ কী তা হয়েছে ?এরপরেও কাজ কতটা এগিয়েছে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কি উদ্যোগ নিয়েছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে উৎসব শেষ হলেই সেই সমস্ত বাড়ির কাজ শুরু হবে। দ্বিতীয় দফা টাকার পাওয়ার পরও যারা বাড়ির কাজ শুরু করেনি তাদের বিষয়ে প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের মতো আরো বড় জেলা রয়েছে যেখানে অনেকে কাজ শুরু করেনি তাদেরও তালিকা তৈরি করছেন নবান্ন।