০৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চলে গেলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও চিকিৎসক নাজির আহমদ সাহেব

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২২ জুন ২০২১, মঙ্গলবার
  • / 116

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ ডা. নাজির আহমদ ছিলেন একজন চিকিৎসক, একজন সমাজসেবী এবং কমিউনিটি লিডার। স্বাধীনতার পর সেই বিপর্যস্ত সময়ে তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কলকাতাসহ পশ্চিমবাংলায় এক বড় ভূমিকা পালন করেন। সেই ডা. নাজির আহমদ রবিবার সকাল ৫টায় ৮৬ বছর বয়সে এক বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তাঁর সৃষ্টিকর্তা প্রভুর সন্নিধানে চলে গেলেন।

আরও পড়ুন: আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের মা-বাবার হাতে শংসাপত্র, তুলে দিলেন স্বাস্থ্যসচিব

তিনি ছিলেন কবি পরিশিলীত ও সবরকারী এক ব্যক্তিত্ব। আর নিবেদিত একজন মানুষ হিসেবে তিনি সাফল্যের সঙ্গে মহানগরী কলকাতায় বহু দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আরও পড়ুন: R.G. Kar মামলায় গতি! ৭ জন নার্সকে তলব সিবিআইয়ের

তিনি ইসলামিয়া হাসপাতালে চিকিৎসক এবং অন্যতম পরিচালক হিসেবেও দীর্ঘদিন এই হাসপাতালটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর দায়িত্ব পালন ও নিষ্ঠা জনাব নাজির আহমদকে সেই সময়ের কলকাতার মুসলিমদের একমাত্র হাসপাতালটির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করেছিল। এছাড়া তিনি ছিলেন পশ্চিমবাংলার হজ কমিটির সদস্য। তিনি দক্ষতা ও কুরবানির জজ্বা নিয়ে হজযাত্রীদের দেখাশোনা করতেন।

আরও পড়ুন: ফার্মা কোম্পানিগুলির কাছ থেকে উপহার নিতে পারবেন না চিকিৎসকেরা, একগুচ্ছ নিয়ম জারি এনএমসি-র

এছাড়া মিল্লাতের অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। কলকাতা পুরসভার গোরস্থান কমিটিরও ডা. নাজির আহমদ সদস্য ছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেনস্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের অনিশ্চয়তার সুযোগ নিয়ে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় বহু কবরস্থান বেদখল হয়ে যাচ্ছে।

ডা. নাজির আহমদ বহু কবরস্থানে দেওয়াল তুলে সেগুলির হেফাজতের ব্যবস্থা করেন। ডা. নাজির আহমদ কলকাতায় এতিমখানার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেনডা. নাজির লক্ষ্য করেন কলকাতার এতিমখানা বাংলার অনাথ শিশু বা বালকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট নয়সব সময় সুযোগও পায় না। তাই তিনি মেদিনীপুরে (পূর্ব) পাঁশকুড়াতে একটি বড় এতিমখানা তৈরির উদ্যোগ নেন। তিনি পাঁশকুড়া এতিমখানার একজন শুধু প্রতিষ্ঠাতাই ননশেষদিন পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেন। গ্রামবাংলার জেলাগুলিতে স্বাধীনতার পর এটাই প্রথম এতিমখানা।

ডা. নাজির আহমদ-এর জন্ম ও বেড়ে ওঠা মেদিনীপুরের মাজুরহাটি গ্রামে। সেখান থেকে তিনি চলে আসেন কলকাতায়। সুরেন্দ্রনাথ কলিজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি বিএসসি পাশ করেন। মেডিক্যাল কলেজ থেকে নাজির আহমদ সাহেব এমবিবিএস পাশ করেন।

ডা. নাজির আহমদ সাহেব কলকাতার ইউনির্ভাসিটি কারমাইকেল হস্টেলেরও চিকিৎসক ছিলেন। সপ্তাহে তিনি দু’দিন কারমাইকেলে ছাত্রদের চিকিৎসার জন্য যেতেন বা টেলিফোন করলেও চলে আসতেন। কলকাতায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সময় তিনি ইসলামিয়া হাসপাতাল ও কারমাইকেল হস্টেলে ঝুঁকি নিয়ে নিজ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ছেলে ড. পাভেল আহমদ আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত। পিতার অসুস্থতার সংবাদে তিনি কলকাতায় চলে এসেছিলেন। কলকাতার ষোলোআনা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

তাঁর মৃত্যুতে অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন জনাব আবদুল গাফফার সাহেব ও অন্যান্যরা।

পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান বলেনআমি যখন কারমাইকেল হস্টেলে থাকতাম তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। খুবই মৃদুভাষী এবং বিনয়ী মানুষ ছিলেন ডা. নাজির আহমদ। পরবর্তীতে জেনেছি কলকাতার বিভিন্ন সমাজ কল্যাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডা. নাজির আহমদ যুক্ত ছিলেন এবং মানুষের সেবা করেছেন। পাঁশকুড়ায় একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর উদ্যোগ বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য পথ নির্দেশক হতে পারে। তিনি কলকাতার উর্দু মহলেও জনপ্রিয় ছিলেন। ইমরান আরও বলেনতাঁর মৃত্যুতে আমরা ষাটের দশকে কাজ শুরু করা একজন সমাজসেবীচিকিৎসককে হারালাম। তিনি সেই সময় থেকে দীর্ঘদিন মুসলিম সমাজে সুখ-দুঃখের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিলেন। আল্লাহতায়লা তাঁকে জান্নাতে স্থান দিন এবং তাঁর পরিবারকে সবর দিন।

জনাব আবদুল গফফার সাহেব বলেন আমরা চাইব বর্তমান প্রজন্ম তাঁর জীবন ও কাজ থেকে শিক্ষা নিক। শুধু নিজের জন্য নয়কাজ করতে হবে সমাজ ও মিল্লাতের জন্যও নাজির আহমদ-এর জীবন এই বার্তা বহন করেছিল। এই ধরনের মানুষের জীবন থেকে আমরা যেন অনুপ্রেরণা নিতে পারি।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

চলে গেলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও চিকিৎসক নাজির আহমদ সাহেব

আপডেট : ২২ জুন ২০২১, মঙ্গলবার

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ ডা. নাজির আহমদ ছিলেন একজন চিকিৎসক, একজন সমাজসেবী এবং কমিউনিটি লিডার। স্বাধীনতার পর সেই বিপর্যস্ত সময়ে তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কলকাতাসহ পশ্চিমবাংলায় এক বড় ভূমিকা পালন করেন। সেই ডা. নাজির আহমদ রবিবার সকাল ৫টায় ৮৬ বছর বয়সে এক বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তাঁর সৃষ্টিকর্তা প্রভুর সন্নিধানে চলে গেলেন।

আরও পড়ুন: আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের মা-বাবার হাতে শংসাপত্র, তুলে দিলেন স্বাস্থ্যসচিব

তিনি ছিলেন কবি পরিশিলীত ও সবরকারী এক ব্যক্তিত্ব। আর নিবেদিত একজন মানুষ হিসেবে তিনি সাফল্যের সঙ্গে মহানগরী কলকাতায় বহু দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আরও পড়ুন: R.G. Kar মামলায় গতি! ৭ জন নার্সকে তলব সিবিআইয়ের

তিনি ইসলামিয়া হাসপাতালে চিকিৎসক এবং অন্যতম পরিচালক হিসেবেও দীর্ঘদিন এই হাসপাতালটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর দায়িত্ব পালন ও নিষ্ঠা জনাব নাজির আহমদকে সেই সময়ের কলকাতার মুসলিমদের একমাত্র হাসপাতালটির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করেছিল। এছাড়া তিনি ছিলেন পশ্চিমবাংলার হজ কমিটির সদস্য। তিনি দক্ষতা ও কুরবানির জজ্বা নিয়ে হজযাত্রীদের দেখাশোনা করতেন।

আরও পড়ুন: ফার্মা কোম্পানিগুলির কাছ থেকে উপহার নিতে পারবেন না চিকিৎসকেরা, একগুচ্ছ নিয়ম জারি এনএমসি-র

এছাড়া মিল্লাতের অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। কলকাতা পুরসভার গোরস্থান কমিটিরও ডা. নাজির আহমদ সদস্য ছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেনস্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের অনিশ্চয়তার সুযোগ নিয়ে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় বহু কবরস্থান বেদখল হয়ে যাচ্ছে।

ডা. নাজির আহমদ বহু কবরস্থানে দেওয়াল তুলে সেগুলির হেফাজতের ব্যবস্থা করেন। ডা. নাজির আহমদ কলকাতায় এতিমখানার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেনডা. নাজির লক্ষ্য করেন কলকাতার এতিমখানা বাংলার অনাথ শিশু বা বালকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট নয়সব সময় সুযোগও পায় না। তাই তিনি মেদিনীপুরে (পূর্ব) পাঁশকুড়াতে একটি বড় এতিমখানা তৈরির উদ্যোগ নেন। তিনি পাঁশকুড়া এতিমখানার একজন শুধু প্রতিষ্ঠাতাই ননশেষদিন পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেন। গ্রামবাংলার জেলাগুলিতে স্বাধীনতার পর এটাই প্রথম এতিমখানা।

ডা. নাজির আহমদ-এর জন্ম ও বেড়ে ওঠা মেদিনীপুরের মাজুরহাটি গ্রামে। সেখান থেকে তিনি চলে আসেন কলকাতায়। সুরেন্দ্রনাথ কলিজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি বিএসসি পাশ করেন। মেডিক্যাল কলেজ থেকে নাজির আহমদ সাহেব এমবিবিএস পাশ করেন।

ডা. নাজির আহমদ সাহেব কলকাতার ইউনির্ভাসিটি কারমাইকেল হস্টেলেরও চিকিৎসক ছিলেন। সপ্তাহে তিনি দু’দিন কারমাইকেলে ছাত্রদের চিকিৎসার জন্য যেতেন বা টেলিফোন করলেও চলে আসতেন। কলকাতায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সময় তিনি ইসলামিয়া হাসপাতাল ও কারমাইকেল হস্টেলে ঝুঁকি নিয়ে নিজ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ছেলে ড. পাভেল আহমদ আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত। পিতার অসুস্থতার সংবাদে তিনি কলকাতায় চলে এসেছিলেন। কলকাতার ষোলোআনা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

তাঁর মৃত্যুতে অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন জনাব আবদুল গাফফার সাহেব ও অন্যান্যরা।

পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান বলেনআমি যখন কারমাইকেল হস্টেলে থাকতাম তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। খুবই মৃদুভাষী এবং বিনয়ী মানুষ ছিলেন ডা. নাজির আহমদ। পরবর্তীতে জেনেছি কলকাতার বিভিন্ন সমাজ কল্যাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডা. নাজির আহমদ যুক্ত ছিলেন এবং মানুষের সেবা করেছেন। পাঁশকুড়ায় একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর উদ্যোগ বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য পথ নির্দেশক হতে পারে। তিনি কলকাতার উর্দু মহলেও জনপ্রিয় ছিলেন। ইমরান আরও বলেনতাঁর মৃত্যুতে আমরা ষাটের দশকে কাজ শুরু করা একজন সমাজসেবীচিকিৎসককে হারালাম। তিনি সেই সময় থেকে দীর্ঘদিন মুসলিম সমাজে সুখ-দুঃখের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিলেন। আল্লাহতায়লা তাঁকে জান্নাতে স্থান দিন এবং তাঁর পরিবারকে সবর দিন।

জনাব আবদুল গফফার সাহেব বলেন আমরা চাইব বর্তমান প্রজন্ম তাঁর জীবন ও কাজ থেকে শিক্ষা নিক। শুধু নিজের জন্য নয়কাজ করতে হবে সমাজ ও মিল্লাতের জন্যও নাজির আহমদ-এর জীবন এই বার্তা বহন করেছিল। এই ধরনের মানুষের জীবন থেকে আমরা যেন অনুপ্রেরণা নিতে পারি।