০৪ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অসমে বাংলাভাষী মুসলিমদের নির্মম উচ্ছেদ বন্ধ হোক দাবি ‘জনহস্তক্ষেপ’- এর

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২ জানুয়ারী ২০২৩, সোমবার
  • / 122

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ বাঙালি মুসলিমদের নিশানা করে অসমে হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার লাগাতার উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। যার জেরে উত্তাল অসম। অধিকার সংস্থা ‘জনহস্তক্ষেপ’ মুসলিমদের উপর এই অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। অসমের বিজেপি সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে অসমিয়া জনগণকে বিভাজিত করে লোকসভা নির্বাচনের জমি প্রস্তুত করছে। উল্লেখ্য, অসমের দারাং জেলার ধলপুর ১, ২ ও ৩ গ্রামে গিয়েছিল জনহস্তক্ষেপ টিম। এই সংগঠনের আহ্বায়ক জানতে পারেন যে, চলতি উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০২২ এর ২৫-২৭ ডিসেম্বরে।

 

আরও পড়ুন: আসামে জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের সফর, নজরদারিতে পুলিশ, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা

এই অসহায় মুসলিম পরিবারগুলির পাশে এসে দাঁড়ায়নি কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দল। অসমিয়া সমাজ ও দেশবাসীর স্মরণে থাকবে যে, সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত ও শোষণ করতে সংকীর্ণ আধিপত্যবাদী লাইনে একাংশকে এনে দাঁড় করিয়েছে সরকার, দীর্ঘদিন ধরেই চলেছে এই প্রক্রিয়া। বাঙালি মুসলিমদের ওপর যে জুলুম হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে । অসমের জনগণ, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির কাছে এমনই আবেদন করেছে অধিকার সংস্থা ‘জনহস্তক্ষেপ’। বাংলাভাষী অসমিয়া মুসলিমদের যাতে এমন নির্মম উচ্ছেদ অভিযান অবিলম্বে বন্ধ হোক । অবিলম্বে এমন প্রতিহিংসামুলক উচ্ছেদ বন্ধ করা হোক । চিঠি লিখে জানিয়েছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান।

আরও পড়ুন: অসমে উপজাতি জেলায় ৩০০০ বিঘা জমি সিমেন্ট সংস্থাকে, ক্ষুব্ধ কোর্ট

 

আরও পড়ুন: কাছাড় জেলায় সরকারি দফতরে বাংলা বাধ্যতামূলক

গত কয়েক বছর ধরে, মুসলিমরা বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলিমরা অসমে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন । দারাং জেলায় উচ্ছেদ অভিযানে যা ঘটেছে তা মারাত্মক উদ্বেগজনক। আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রশাসন আচমকা নির্মমভাবে মুসলিমদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে । এই প্রবল ঠাণ্ডায় খোলা আকাশের নিচই আপাতত তাঁদের ঠিকানা ।

 

কী কারণে সরকারের জমি দরকার, সেই বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেননি সরকারের কোনও আধিকারিক বা সরকারের এজেন্সিগুলি। এমনকি গৃহহারা মানুষদের পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণ নিয়েও কেউ মুখ খোলেননি। ২০২১ সালের মে মাস থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অসমের বিজেপি সরকার মোট ৪,৪৪৯টি বাঙালি মুসলিম পরিবারের বাড়ি ধ্বংস করেছে। পুলিশি তত্ত্বাবধানে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে যাতে মানুষকে ভয় দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা যায় । এটি  বিজেপি সরকারের নৃশংস অমানবিক চেহারাকে প্রকট করে তুলেছে।

 

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢোলপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তির বুকের উপর পুলিশ-আলোকচিত্রী কীভাবে উদ্দাম নৃত্য করেছিল, তা আজও বহু জন ভুলতে পারেননি। একই ভাবে, ২০২২ সালে হোজাই জেলার লুমডিং সংরক্ষিত অরণ্যে ৫৫০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ২১ ডিসেম্বরে অসমের নওগাঁ জেলার বাতাদারওয়া তেহশিলের হাইডুবি গ্রামে ১২০টি বাড়ি, কাদমোনিতে ৪০টি, লালুং গাঁওতে ১০৮টি ও জামাই বস্তি গ্রামে ৯০টি বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে হিমন্ত শর্মা সরকার। বরপেটা জেলার বাঘবর এলাকায় ৫৬টি বাড়ি ও বিলাসিপাড়া উপ-ডিভিশনের সাগুনমারি গ্রামে ৩০টি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয় ডিসেম্বরেই।

 

সিএএ-এনআরসি ইস্যু দিয়ে এই রাজ্যের মুসলিমদের উৎখাত করতে ব্যর্থ হয়ে বিজেপি সরকার নিজেদের হতাশা ঢাকতে বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ‘অবৈধ অধিগ্রহণে’র নামে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এটা যে কেবল মুসলিদেরই নিশানা করে ঘটানো হচ্ছে তা স্পষ্ট । কারণ, হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরকার জমির পরচা বিলি করছে আদিবাসিদের মধ্যে । ঘটনাচক্রে সরকারের ‘নিয়ম’ অনুযায়ী তারাও ‘অবৈধ দখলদার’। এই সুবিধা অসমের মুসলিমদের দেওয়া হচ্ছে না, অথচ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা এই রাজ্যে বসবাস করে আসছেন।  সন্ত্রাস এমন রূপ দেখেও নীরব অসমের বহু মানুষ। যেমন এমন জুলুম দেখে চুপ রয়েছে গোটা দেশ । জানিয়েছেন ‘জনহস্তক্ষেপ’।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

অসমে বাংলাভাষী মুসলিমদের নির্মম উচ্ছেদ বন্ধ হোক দাবি ‘জনহস্তক্ষেপ’- এর

আপডেট : ২ জানুয়ারী ২০২৩, সোমবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ বাঙালি মুসলিমদের নিশানা করে অসমে হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার লাগাতার উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। যার জেরে উত্তাল অসম। অধিকার সংস্থা ‘জনহস্তক্ষেপ’ মুসলিমদের উপর এই অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। অসমের বিজেপি সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে অসমিয়া জনগণকে বিভাজিত করে লোকসভা নির্বাচনের জমি প্রস্তুত করছে। উল্লেখ্য, অসমের দারাং জেলার ধলপুর ১, ২ ও ৩ গ্রামে গিয়েছিল জনহস্তক্ষেপ টিম। এই সংগঠনের আহ্বায়ক জানতে পারেন যে, চলতি উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০২২ এর ২৫-২৭ ডিসেম্বরে।

 

আরও পড়ুন: আসামে জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের সফর, নজরদারিতে পুলিশ, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা

এই অসহায় মুসলিম পরিবারগুলির পাশে এসে দাঁড়ায়নি কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দল। অসমিয়া সমাজ ও দেশবাসীর স্মরণে থাকবে যে, সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত ও শোষণ করতে সংকীর্ণ আধিপত্যবাদী লাইনে একাংশকে এনে দাঁড় করিয়েছে সরকার, দীর্ঘদিন ধরেই চলেছে এই প্রক্রিয়া। বাঙালি মুসলিমদের ওপর যে জুলুম হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে । অসমের জনগণ, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির কাছে এমনই আবেদন করেছে অধিকার সংস্থা ‘জনহস্তক্ষেপ’। বাংলাভাষী অসমিয়া মুসলিমদের যাতে এমন নির্মম উচ্ছেদ অভিযান অবিলম্বে বন্ধ হোক । অবিলম্বে এমন প্রতিহিংসামুলক উচ্ছেদ বন্ধ করা হোক । চিঠি লিখে জানিয়েছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান।

আরও পড়ুন: অসমে উপজাতি জেলায় ৩০০০ বিঘা জমি সিমেন্ট সংস্থাকে, ক্ষুব্ধ কোর্ট

 

আরও পড়ুন: কাছাড় জেলায় সরকারি দফতরে বাংলা বাধ্যতামূলক

গত কয়েক বছর ধরে, মুসলিমরা বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলিমরা অসমে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন । দারাং জেলায় উচ্ছেদ অভিযানে যা ঘটেছে তা মারাত্মক উদ্বেগজনক। আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রশাসন আচমকা নির্মমভাবে মুসলিমদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে । এই প্রবল ঠাণ্ডায় খোলা আকাশের নিচই আপাতত তাঁদের ঠিকানা ।

 

কী কারণে সরকারের জমি দরকার, সেই বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেননি সরকারের কোনও আধিকারিক বা সরকারের এজেন্সিগুলি। এমনকি গৃহহারা মানুষদের পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণ নিয়েও কেউ মুখ খোলেননি। ২০২১ সালের মে মাস থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অসমের বিজেপি সরকার মোট ৪,৪৪৯টি বাঙালি মুসলিম পরিবারের বাড়ি ধ্বংস করেছে। পুলিশি তত্ত্বাবধানে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে যাতে মানুষকে ভয় দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা যায় । এটি  বিজেপি সরকারের নৃশংস অমানবিক চেহারাকে প্রকট করে তুলেছে।

 

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢোলপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তির বুকের উপর পুলিশ-আলোকচিত্রী কীভাবে উদ্দাম নৃত্য করেছিল, তা আজও বহু জন ভুলতে পারেননি। একই ভাবে, ২০২২ সালে হোজাই জেলার লুমডিং সংরক্ষিত অরণ্যে ৫৫০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ২১ ডিসেম্বরে অসমের নওগাঁ জেলার বাতাদারওয়া তেহশিলের হাইডুবি গ্রামে ১২০টি বাড়ি, কাদমোনিতে ৪০টি, লালুং গাঁওতে ১০৮টি ও জামাই বস্তি গ্রামে ৯০টি বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে হিমন্ত শর্মা সরকার। বরপেটা জেলার বাঘবর এলাকায় ৫৬টি বাড়ি ও বিলাসিপাড়া উপ-ডিভিশনের সাগুনমারি গ্রামে ৩০টি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয় ডিসেম্বরেই।

 

সিএএ-এনআরসি ইস্যু দিয়ে এই রাজ্যের মুসলিমদের উৎখাত করতে ব্যর্থ হয়ে বিজেপি সরকার নিজেদের হতাশা ঢাকতে বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ‘অবৈধ অধিগ্রহণে’র নামে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এটা যে কেবল মুসলিদেরই নিশানা করে ঘটানো হচ্ছে তা স্পষ্ট । কারণ, হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরকার জমির পরচা বিলি করছে আদিবাসিদের মধ্যে । ঘটনাচক্রে সরকারের ‘নিয়ম’ অনুযায়ী তারাও ‘অবৈধ দখলদার’। এই সুবিধা অসমের মুসলিমদের দেওয়া হচ্ছে না, অথচ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা এই রাজ্যে বসবাস করে আসছেন।  সন্ত্রাস এমন রূপ দেখেও নীরব অসমের বহু মানুষ। যেমন এমন জুলুম দেখে চুপ রয়েছে গোটা দেশ । জানিয়েছেন ‘জনহস্তক্ষেপ’।