সংস্কৃতই হোক যোগাযোগের ভাষা: ভাগবত

- আপডেট : ২ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার
- / 463
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : কে বলেছে সংস্কৃত ‘মৃত’ ভাষা! দেবভাষা সংস্কৃততে দেশের ক’টা মানুষ কথা বলতে পারেন সেটা না হয় আমরা জানি না। তাই বলে কি সংস্কৃতকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে না? কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবতের কথা অনুযায়ী, এটাই সব ভাষার মা। সংস্কৃত ভাষাকেই দেশবাসীর কথাবার্তার ভাষা (সংযোগকারী ভাষা) করার দাবি জানালেন আরএসএস সর্বাধিনায়ক।
শুক্রবার কবিকুলগুরু কালিদাস সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাগবত বলেন, ভারতের সব ভাষার জনক হচ্ছে সংস্কৃত ভাষা। তবে সংস্কৃত ভাষাকে বোঝা এবং ওই ভাষায় কথা বলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এই সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাবে, একইসঙ্গে দরকার জনসাধারণের পৃষ্ঠপোষকতা।
ভাগবত বলেন, আমি সংস্কৃত ভাষা শিখেছি, কিন্তু সাবলীলভাবে কথা বলতে পারি না এই ভাষায়। আমি মনে করি, দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে সংস্কৃত ভাষা পৌঁছনো দরকার। এই ভাষাকেই সংযোগকারী ভাষা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ভাগবত আরও বলেন, আত্মনির্ভর হওয়ার প্রশ্নে মতানৈক্য রয়েছে। এর জন্য আমাদের বুদ্ধি এবং জ্ঞানকে প্রসারিত করতে হবে। ভাগবতের মতে, ভাষা হল একটা ভাব বা আবেগ। ব্যক্তিসত্তা ছাড়া সত্তা বাস্তবোচিত নয়। তা ভাষার মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়। সংস্কৃত জানা মানে দেশকে জানা।এ দিন তিনি অভিনব ভারতী আন্তর্জাতিক অ্যাকাডেমি ভবনেরও উদ্বোধন করেন।
প্রসঙ্গত, ইতিহাসবিদরা সংস্কৃতকে একটি মৃত, অবলুপ্তপ্রায় ভাষা হিসেবেই দেখেন। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংস্কৃতকে নানাভাবে সামনে তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা ভিন রাজ্যে বাংলা বললে বেধড়ক মার খাচ্ছেন, তাদেরকে ‘বাংলাদেশি’ বলে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে ভাগবতের ‘মোহন-বচন’—সংস্কৃত একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ভাষা, যার মধ্যে ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং শিল্পের বিশাল সম্ভার রয়েছে।
যদি এই ভাষা সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে এই জ্ঞানভাণ্ডার সহজেই সবার কাছে পৌঁছে যাবে। তবে ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, বর্তমানে সংস্কৃত দৈনন্দিন কথোপকথনের ভাষা নয়। এটি মূলত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, শ্লোক পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই হঠাৎ করে একে সাধারণের যোগাযোগকারী ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত কঠিন।
সংস্কৃত ভাষা শেখাও তুলনামূলকভাবে কঠিন। এর জটিল ব্যাকরণ এবং উচ্চারণ রীতি সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় বাধা। বর্তমানে ভারতে হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগু, মারাঠিসহ অসংখ্য আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত। এই ভাষাগুলোতে সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অনেক সমৃদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে একটি অপ্রচলিত ভাষাকে সবার উপর চাপিয়ে দিলে তা আঞ্চলিক ভাষাগুলোর গুরুত্ব কমিয়ে দেবে এবং নতুন করে ভাষাগত বিভাজন তৈরি করতে পারে।