মোল্লা জসিমউদ্দিন: সন্দেশখালি কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। চলতি বছরের গত ৫ জানুয়ারি শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডির উপর হামলার ঘটনায় যে তিনটি এফআইআর হয়েছে, তার ভিত্তিতে তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এছাড়া মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই হেফাজতে থাকা শেখ শাহজাহানকে হস্তান্তর করতে হবে সিবিআই-এর হাতে। এই নির্দেশও দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, শেখ শাহজাহানকে রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করার পরই ইডি-র তরফ থেকে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছিল যে, ‘রাজ্য পুলিশ, সিআইডি-র হাতে শেখ শাহজাহান থাকলে, পিএমএলএ মামলা ও ইডি-র ওপর হামলার তদন্ত দুটো ক্ষেত্রেই তথ্য প্রমাণ নষ্ট হতে পারে’। সে কারণে এর আগেই ইডি-র তরফ থেকে দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়েছিল। ইডি প্রথম থেকেই তাঁদের ওপর হামলার ঘটনার তদন্তে যে সিট গঠন করা হয়েছিল, তার বিরোধিতা করে থাকে। ইডি কর্তৃপক্ষ সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ইডি-র দাবিকে মান্যতা দিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল। আর ইডি-র আর্জি মেনেই, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে চারটের মধ্যে শেখ শাহজাহানকে সিবিআই-এর হাতে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেয়।
ইডি-র দাবি, শেখ শাহাজাহন যতক্ষণ পর্যন্ত সিআইডি হেফজতে থাকবে, তত বেশি তথ্য প্রমাণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে’। সেক্ষেত্রে অতি দ্রুত, মঙ্গলবার বিকাল চারটের মধ্যেই শেখ শাহজাহানকে সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ন্যাজাট থানার দুটি মামলা অর্থাত্ ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ইডির দায়ের করা মামলা, দ্বিতীয়ত পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা ও তৃতীয়ত, শঙ্কর আঢ্যকে ওই দিনই গ্রেফতার করতে গিয়ে ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে দায়ের হওয়া মামলা হস্তান্তর করতে হবে। জানা যাচ্ছে, সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ এই মামলার তদন্ত করবে। সিজিও কমপ্লেক্স থেকেই এই তদন্ত নিয়ন্ত্রিত হবে বলে জানা গেছে। এবার রাজ্য সরকারের কাছে কলকাতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করার আর কোনও সুযোগ থাকছে না। কারণ এই নির্দেশ দিয়েছে খোদ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। সেক্ষেত্রে রাজ্যের কাছে খোলা থাকছে সুপ্রিম কোর্টের দরজা। যদিও রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালি কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান। গত বৃহস্পতিবার মিনাখাঁর বামনপুকুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর থেকে সিআইডির হেফাজতে রাখা হয়েছে শেখ শাহজাহান কে। শাহজাহানের পুলিশি হেফাজের নির্দেশের পরই ইডি তাকে হেফাজতে চাইতে আদালতের দ্বারস্থ হয়। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, ‘সন্দেশখালিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের উপর হামলার ঘটনার তদন্ত রাজ্য পুলিশে আস্থা নেই। সিবিআই ও রাজ্য পুলিশকে নিয়ে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলেও কোনও ভরসা নেই। কারণ, রাজ্য পুলিশ এই মামলায় সহযোগিতার করবে না। তাই এই তদন্তভার শুধু সিবিআইকেই দেওয়া হোক’। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সেই আবেদন মঞ্জুর করল। উল্লেখ্য, সন্দেশখালিকা কাণ্ডে রাজ্য পুলিশের এসপি এবং সিবিআইয়ের এসপি পদমর্যাদার অফিসারকে নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের জন্য জানুয়ারিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্য হিসাবে রাজ্য আইপিএস অফিসার জসপ্রীত সিংয়ের নাম আদালতে জমা দেয়। কিন্তু যৌথ তদন্তের সেই নির্দেশে আপত্তি তুলেছিল ইডি।
আদালত সূত্রে প্রকাশ, সন্দেশখালিতে ইডি অফিসারদের উপর হামলার ঘটনায় ন্যাজাট থানায় দু’টি এফআইআর (৮ ও ৯ নম্বর) দায়ের হয়েছিল। এছাড়া বনগাঁ থানায় আরও একটি এফআইআর (১৮ নম্বর) দায়ের হয়। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দ্রুত শুনানির আর্জি জানিয়ে এদিনই সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানায় রাজ্য। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না তাতে সাড়া দেননি। এরফলে সিবিআই-য়ের কাছে শেখ শাহজাহানকে হস্তান্তর করতেই হবে সিআইডি-কে। পরবর্তী ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট কি নির্দেশ দেয়? তার দিকে তাকিয়ে অনেকেই।