মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা আজ ১ নম্বর জেলাঃ শামিমা সেখ
বিপাশা চক্রবর্তী
- আপডেট :
৮ জানুয়ারী ২০২২, শনিবার
- / 7
শামিমা সেখ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসাবে সুনামের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। জেলা সভাধিপতি হিসাবে তিনবার তাঁর উপর আস্থা রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গৃহবধূর পাশাপাশি তিনি দক্ষতার সঙ্গে প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলে চলেছেন। শামিমা সেখের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ‘পুবের কলম’ প্রতিনিধি রফিকুল হাসান।
রাজনীতিতে আপনার হাতেখড়ি ঠিক কীভাবে হয়েছিল?
শামিমা সেটা বলতে গেলে বিগতদিনে ফিরে যেতে হয়। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে রাজনীতিতে আসা। আমরা কে কোথা থেকে এসেছি– সেটা বড় কথা নয়। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করতে পারছি এটাই বড় পাওনা।
সভাধিপতি হিসাবে বর্তমানে আপনার তৃতীয় টার্ম চলছে। বিগতদিনে জেলার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কী কাজ করেছেন এবং আগামীদিনে কী পরিকল্পনা আছে?
শামিমাঃ আসলে আমাদের এই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পিছিয়ে পড়া জেলা ছিল। সবসময় আমাদের শুনতে হয়েছে এই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা অন্য জেলার থেকে পিছিয়ে। বিগতদিনে ১৯তম জেলা ছিল। এই জেলার সঙ্গে সমুদ্রের সংযোগ– নদীমাতৃক এলাকার পাশাপাশি সুন্দরবনে দ্বীপ অঞ্চল রয়েছে। অথচ আমাদের এই জেলা থেকে দু’বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন সাতগাছিয়া থেকে। রাজ্যে আমাদের সরকার আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই জেলা এখন সবসময় ১ নম্বর। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। এই জেলার মানুষের আর আলাদা করে কিছু চাওয়ার নেই। শুধু এই জেলা নয় গোটা বাংলাজুড়ে উন্নয়ন হচ্ছে। আর সেজন্যই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলার মানুষের একটা মায়ের মতো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
গঙ্গাসাগর মেলা এই জেলার একটা গুরত্বপূর্ণ পার্ট। এতো মানুষ আসে– কি ভাবে সামলান? গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কি বলবেন।
শামিমা সাগর মেলা আমাদের দক্ষিণ ২৪ পরগনার গর্ব। কপিল মুনির আশ্রম আমাদের এই জেলার মধ্যেই। এই মেলার জন্য একটা বিশাল অঙ্কের টাকার প্রয়োজন হয়। আমরা ক্ষমতায় আসার পর আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আগত পুণ্যার্থীদের থেকে ৫ টাকা করে যে ট্যাক্স নেওয়া হত– তা আমরা তুলে দিয়েছি। তারপরে যে সমস্ত মানুষ আসছেন– তাঁদের জন্য ইন্সিওরেন্স চালু করেছি। যদি কোনও পুণ্যার্থী দুর্ঘটনায় মারা যায়– তাহলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকার ইন্সিওরেন্স চালু করা হয়েছে। আগে বলত সব তীর্থ বারবার– গঙ্গসাগর একবার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে গঙ্গাসাগরকে সাজিয়ে দিয়েছেন– সেটা এখন সারাবছরের জন্য ট্যুরিস্ট স্পট হয়েছে।
এই মেলায় শুধু রাজ্যের নয়– সারাদেশের মানুষ আসেন। তাই মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন এই মেলাকে জাতীয়স্তরের একটা নাম দেওয়া হোক। সেটা হয়নি। ভেসেলে করে রিস্ক নিয়ে পুণ্যার্থীদের যেতে হয়– তাই ওখানে একটা ব্রিজ হয়ে গেলে খুব ভাল। কিন্তু কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সহযোগিতা নেই। তাঁদের একটু ভাবা উচিত।
এই করোনা পরিস্থিতির মাঝেও গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে আপনাদের ভাবনা চিন্তা কি?
শামিমাঃ মানুষজন কম আসবে– সেটা তো আমরা বলতে পারি না। করোনাটা হঠাৎ করে বেড়ে গেল। তবুও আমরা আগে থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা করে রেখেছি। যে মানুষজন আসছেন তাঁদের মাস্ক– স্যানিটাইজারসহ কোভিড বিধি মেনে সব কিছু করতে হবে।
সুন্দরবন লাগোয়া এলাকায় বেড়েছে বাঘের উপদ্রব। জঙ্গলে মধু সংগ্রহ– নদীতে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। এই বিষয়ে আপনাদের ভূমিকা?
শামিমাঃ আসলে অনেক দ্বীপে এখনও জল জমে রয়েছে। হয়তো ঠিকঠাক খাবার না পেয়ে বাঘ লোকালয়ে চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে দেখব। সচেতনতার পাশাপাশি যারা কাঁকড়া ধরে তাঁদের জন্য বিকল্প জীবিকা হিসাবে সুন্দরবনের জন্য নতুন প্রজেক্ট আসছে। আমরা টাকা দিয়ে তাঁদেরকে কাঁকড়া চাষের ব্যবস্থা করব।
সভাধিপতি হিসাবে আপনার তিনটে টার্ম হয়ে গেছে। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বিগতদিনে গোটা জেলায় নজির সৃষ্টি হয়েছে বা আগামীদিনে নতুন কোনও পরিকল্পনা?
শামিমাঃ আমাদের এই জেলার পাথরপ্রতিমা দিগম্বরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দিল্লি থেকে পুরস্কার নিয়ে এসেছে। ওরা পরিবেশ সচেতনতা ও মহিলা যোজনার উপর ভাল কাজ করেছে। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত সুন্দরীনি বলে একটা প্রকল্প চলছে। সেখানে সুন্দরবনের মধু– ডেয়ারি প্রোডাক্ট থেকে ৫০টির মতো মিষ্টি তৈরি করছে তাঁরা। এ ছাড়া ডাল– ডিম– মাশরুম চাষ করে মহিলাদের স্বাবলম্বী করা হচ্ছে। প্রায় ৫-৭ হাজার মহিলারা এখানে রোজগারের মুখ দেখছে। সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ থেকে ওই প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরও ৩ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে।
একজন গৃহবধূর পাশাপাশি রাজনীতি– সভাধিপতির কাজ কীভাবে সামলান?
শামিমাঃ মানুষ যদি মনে করে কোনও কাজ করব– তাহলে তিনি তা পারবেন। আমরা যেটা অভ্যাসে পরিণত করব– সেটাই হবে। ভালো– মন্দ বিচার করে মন পরিষ্কার রেখে যদি আমরা ভেবে নেই যে– মানুষের জন্য ভালো কাজ করব। তাহলে ঠিক সে কাজ করা যাবে।
সুন্দরবনকে আলাদা জেলা হিসাবে ভাগের কথা উঠেছিল– আর নতুন করে কোনও পরিকল্পনা?
শামিমাঃ আমাদের আলাদা করে ডায়মন্ড হারবার– সুন্দরবন ও বারুইপুর পুলিশ জেলা করা হয়েছে। আর দুয়ারে সরকার হওয়ার পরে মানুষের আলাদা করে কিছু চাওয়ার থাকে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা দিয়েছেন– তাতে মানুষ খুব খুশি।
জেলার ৩১টি বিধানসভার মধ্যে একমাত্র ভাঙড় বিধানসভা আপনাদের হাতছাড়া। ওই এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা-সহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। ভোটে তার কি কোনও প্রভাব পড়েছে?
শামিমাঃ সেরকম কোনও ব্যাপার নয়– আমরা রাস্তাঘাট থেকে সব কিছুই করেছি। সারা বাংলার মানুষের মতো ওখানকার মানুষও তেমন পরিষেবা পাচ্ছেন। তাঁরা আজকে হয়তো ভোটটা দিয়েছেন– কিন্তু পরে তাঁরা চিন্তা করছেন হয়তো আমরা ভুল করেছি।