২৮ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন ওবিসি তালিকায় স্থগিতাদেশ খারিজ শীর্ষ কোর্টে, জয় রাজ্যের

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৫, সোমবার
  • / 28

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক : কলকাতা হাইকোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তৈরি করা নতুন ওবিসি তালিকায় যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল তা খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার প্রধান বিচারপতি গাভাই, বিচারপতি বিনোদচন্দ্রন এবং বিচারপতি এন ভি আঞ্জারিয়ার এক ডিভিশন বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ দেওয়ার সময়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, হাইকোর্ট কী করে বলল একথা যে একমাত্র আইনসভারই ওবিসি তালিকায় অনুমোদন করার ক্ষমতা রয়েছে! এই যুক্তির ভিত্তিতে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

 

আরও পড়ুন: ‘পুলিশের অনুমতি ছাড়া নবান্ন অভিযান করলে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে’, কলকাতা হাইকোর্ট

আমরা এই বিষয়ে নোটিশ দিচ্ছি। কীভাবে হাইকোর্ট এই স্থগিতাদেশ দেয়? সংরক্ষণ প্রশাসনের কাজের অঙ্গস্বরূপ। সেই ইন্দিরা সাহানি মামলার সময় থেকে এটা প্রায় প্রতিষ্ঠিত আইন হয়ে গিয়েছে যে, সংরক্ষণের তালিকা প্রশাসন করতে পারে। প্রশাসনের নির্দেশই এক্ষেত্রে যথেষ্ট। এখানে বিধানসভার অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। আমরা বিস্মিত। হাইকোর্টের কী যুক্তি! এইসব কথা এদিন মামলার শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন। তিনি বলেন, হাইকোর্ট যে বলেছে ২০১২ সালের আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকারের তৈরি নতুন তালিকা এবং রিপোর্ট অনুমোদনের জন্য বিধানসভায় পেশ করা উচিত ছিল, তার সঙ্গে আমি একমত নই।

আরও পড়ুন: রাহুলকে সতর্ক করে সমনে স্থগিতাদেশ শীর্ষ কোর্টের

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন, এই স্থগিতাদেশ দেওয়ার কারণে বহু নিয়োগ এবং পদোন্নতি আটকে রয়েছে। হাইকোর্টে একটি অবমাননার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার নাকি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না মেনে শীর্ষ আদালতকে অবমাননা করছে। রাজ্য সরকারের বিরোধীদের কৌঁসুলি রঞ্জিত কুমার বলেন, রাজ্য নিজেই যে আইন করেছে তাতে কিন্তু বলা হচ্ছে, বিধানসভার অনুমোদন জরুরি।

আরও পড়ুন: ওবিসি তালিকা ইস্যুতে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য, প্রধান বিচারপতির অনুমতি, শুনানি সোমবার

 

আরও এক পক্ষের আইনজীবী জি কৃষ্ণকুমার বলেন, কোনও তথ্য ছাড়াই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাই কোনও রকম অন্তর্বতী আদেশ যেন না দেওয়া হয়। বেঞ্চ কিন্তু অন্তর্বতী আদেশ দিতেই প্রস্তুত ছিল। তবে বিপক্ষের এই দুই আইনজীবীর বক্তব্য শুনে কোনও রকম অন্তর্বতী আদেশ না দিয়ে নতুন তালিকায় স্থগিতাদেশ খারিজ করে দেয়।

 

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা হাইকোর্টকে বলতে পারি বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করুন, তবে অন্য বেঞ্চের বিচারপতিদের দিয়ে। যদি আপনারা রাজি থাকেন আমি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে এই কথা জানাতে পারি। ততদিন স্থিতাবস্থা থাকুক। তখন রাজ্য সরকারের বিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টেই সওয়াল করতে আগ্রহী। তখন উপায় না দেখে গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ শুধু স্থগিতাদেশ খারিজ করে বলে, প্রাথমিকভাবে এটা ভুল মনে হয়েছে বলেই এটা খারিজ করা হচ্ছে। তবে ওবিসি কমিশন যে পদ্ধতিতে কাজ করেছে তা ঠিক কি ভ্রান্ত সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে হাইকোর্ট।

সিব্বাল বলেন, রাজ্য সরকার তার অনগ্রসর সম্প্রদায়ের কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এবং নতুন করে সমীক্ষা করে নতুন তালিকা তৈরি করেছে। এমন কি হাইকোর্টও একথা বলেনি যে, কমিশন কোনও কাজ করেনি। উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের করা নতুন ওবিসি তালিকায় স্থগিতাদেশ দেয়।

 

এর আগে ২০২৪ সালের মে মাসে হাইকোর্ট এর এক বেঞ্চ নতুন ৭৭ সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা খারিজ করে দেয়। এরপর রাজ্য সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট এর রায় বহাল রেখে বলেছিল, নতুন করে তালিকা তৈরি করতে পারবে রাজ্য। সেই তালিকায় হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিতেই সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা হল। রাজ্য সরকার প্রাথমিকভাবে জয়ী হল আইনি লড়াইয়ে। তবে লড়াই এখনও শেষ হয়নি। চলবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নতুন ওবিসি তালিকায় স্থগিতাদেশ খারিজ শীর্ষ কোর্টে, জয় রাজ্যের

আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক : কলকাতা হাইকোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তৈরি করা নতুন ওবিসি তালিকায় যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল তা খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার প্রধান বিচারপতি গাভাই, বিচারপতি বিনোদচন্দ্রন এবং বিচারপতি এন ভি আঞ্জারিয়ার এক ডিভিশন বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ দেওয়ার সময়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, হাইকোর্ট কী করে বলল একথা যে একমাত্র আইনসভারই ওবিসি তালিকায় অনুমোদন করার ক্ষমতা রয়েছে! এই যুক্তির ভিত্তিতে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

 

আরও পড়ুন: ‘পুলিশের অনুমতি ছাড়া নবান্ন অভিযান করলে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে’, কলকাতা হাইকোর্ট

আমরা এই বিষয়ে নোটিশ দিচ্ছি। কীভাবে হাইকোর্ট এই স্থগিতাদেশ দেয়? সংরক্ষণ প্রশাসনের কাজের অঙ্গস্বরূপ। সেই ইন্দিরা সাহানি মামলার সময় থেকে এটা প্রায় প্রতিষ্ঠিত আইন হয়ে গিয়েছে যে, সংরক্ষণের তালিকা প্রশাসন করতে পারে। প্রশাসনের নির্দেশই এক্ষেত্রে যথেষ্ট। এখানে বিধানসভার অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। আমরা বিস্মিত। হাইকোর্টের কী যুক্তি! এইসব কথা এদিন মামলার শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন। তিনি বলেন, হাইকোর্ট যে বলেছে ২০১২ সালের আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকারের তৈরি নতুন তালিকা এবং রিপোর্ট অনুমোদনের জন্য বিধানসভায় পেশ করা উচিত ছিল, তার সঙ্গে আমি একমত নই।

আরও পড়ুন: রাহুলকে সতর্ক করে সমনে স্থগিতাদেশ শীর্ষ কোর্টের

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন, এই স্থগিতাদেশ দেওয়ার কারণে বহু নিয়োগ এবং পদোন্নতি আটকে রয়েছে। হাইকোর্টে একটি অবমাননার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার নাকি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না মেনে শীর্ষ আদালতকে অবমাননা করছে। রাজ্য সরকারের বিরোধীদের কৌঁসুলি রঞ্জিত কুমার বলেন, রাজ্য নিজেই যে আইন করেছে তাতে কিন্তু বলা হচ্ছে, বিধানসভার অনুমোদন জরুরি।

আরও পড়ুন: ওবিসি তালিকা ইস্যুতে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য, প্রধান বিচারপতির অনুমতি, শুনানি সোমবার

 

আরও এক পক্ষের আইনজীবী জি কৃষ্ণকুমার বলেন, কোনও তথ্য ছাড়াই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাই কোনও রকম অন্তর্বতী আদেশ যেন না দেওয়া হয়। বেঞ্চ কিন্তু অন্তর্বতী আদেশ দিতেই প্রস্তুত ছিল। তবে বিপক্ষের এই দুই আইনজীবীর বক্তব্য শুনে কোনও রকম অন্তর্বতী আদেশ না দিয়ে নতুন তালিকায় স্থগিতাদেশ খারিজ করে দেয়।

 

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা হাইকোর্টকে বলতে পারি বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করুন, তবে অন্য বেঞ্চের বিচারপতিদের দিয়ে। যদি আপনারা রাজি থাকেন আমি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে এই কথা জানাতে পারি। ততদিন স্থিতাবস্থা থাকুক। তখন রাজ্য সরকারের বিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টেই সওয়াল করতে আগ্রহী। তখন উপায় না দেখে গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ শুধু স্থগিতাদেশ খারিজ করে বলে, প্রাথমিকভাবে এটা ভুল মনে হয়েছে বলেই এটা খারিজ করা হচ্ছে। তবে ওবিসি কমিশন যে পদ্ধতিতে কাজ করেছে তা ঠিক কি ভ্রান্ত সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে হাইকোর্ট।

সিব্বাল বলেন, রাজ্য সরকার তার অনগ্রসর সম্প্রদায়ের কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এবং নতুন করে সমীক্ষা করে নতুন তালিকা তৈরি করেছে। এমন কি হাইকোর্টও একথা বলেনি যে, কমিশন কোনও কাজ করেনি। উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের করা নতুন ওবিসি তালিকায় স্থগিতাদেশ দেয়।

 

এর আগে ২০২৪ সালের মে মাসে হাইকোর্ট এর এক বেঞ্চ নতুন ৭৭ সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা খারিজ করে দেয়। এরপর রাজ্য সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট এর রায় বহাল রেখে বলেছিল, নতুন করে তালিকা তৈরি করতে পারবে রাজ্য। সেই তালিকায় হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিতেই সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা হল। রাজ্য সরকার প্রাথমিকভাবে জয়ী হল আইনি লড়াইয়ে। তবে লড়াই এখনও শেষ হয়নি। চলবে।