ধার শোধ করতে সন্তান ‘বন্ধক’, খামার মালিকের বিরুদ্ধে ছেলেকে খুনের অভিযোগ মায়ের
- আপডেট : ২৪ মে ২০২৫, শনিবার
- / 87
পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ মধ্যযুগীয় বর্বরতা! স্বামীর ধার করা টাকা শোধ করতে না পারার জন্য শিশুপুত্রকে বন্ধক রাখতে বাধ্য করেন খামার মালিক। পরে ধারের টাকার শোধ করে সন্তান ফেরত চাইতে গিয়ে মা দেখেন সন্তান মৃত। ঘটনাটি ঘটেছে অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতিতে। মঙ্গলবার তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরমের কবর থেকে পুলিশ মৃতের দেহ উদ্ধার করে।ঘটনায় ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত খামার মালিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের।
জাতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২৫ হাজার টাকা ধারের বিনিময়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক মহিলা এবং তার তিন সন্তানকে দাস শ্রমিক হিসাবে রাখেন তিরুপতির এক হাঁস পালনকারী খামার মালিক।
জানা গেছে, অভিযোগকারী মহিলার নাম আনাকাম্মা। তারা ইয়ানাদি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ। বিগত এক বছর ধরে তিরুপতির হাঁস পালনকারীর কাছে কাজ করেছিলেন। আনাকাম্মার স্বামী চেনচাইয়া মারা যান। এরপর অমানুষিক পরিশ্রমিক থেকে মুক্তি পেতে আনাকাম্মা খামারের কাজ ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু খামার মালিক তখন তাদের জানান, তারা কাজ ছেড়ে দিতে পারবে না। কারণ, তাঁর স্বামী ২৫ হাজার টাকা তার কাছ থেকে ধার করেছে। কিন্তু উদয়অস্থ পাশবিক পরিশ্রমে ক্লান্ত আনাকাম্মা মজুরিবৃদ্ধির অনুরোধ করেন। খামার মালিক তাতে রাজি না হওয়ায় অভিযোগকারী মহিলা কাজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য জোর জবরদস্থি শুরু করেন। তখন অভিযুক্ত খামার মালিক ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ৪৫ হাজার টাকা(সুদ-সহ) দাবি করেন। খামার মালিকের দাবি মেনে টাকা ব্যবস্থা করার জন্য ১০ দিন সময় চান অভিযোগকারী মহিলা। কিন্তু অভিযুক্ত খামার মালিক মহিলার এক সন্তানকে জমানত হিসাবে বন্ধক রাখার দাবি করেন। নিরূপায় আনাকাম্মা অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাতেই রাজি হন।
এরপর অসহায় মা, মাঝেমধ্যেই তাঁর ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। প্রতিবারই সেই ছেলে মা অনুরোধ করত, সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ছেলের অভিযোগ ছিল তাকে খামার মালিক খুব খাটিয়ে নিচ্ছে। শেষবার ছেলের সঙ্গে আনাকাম্মার কথা হয় গত মাসের ১২ এপ্রিল। অবশেষে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে সেই মহিলা চড়া সুদে টাকার ব্যবস্থা করেন।
তারপর খামার মালিকের সঙ্গে মহিলা যোগাযোগ করে বলেন তিনি তাঁর ছেলেকে নিতে আসছেন। কিন্তু অভিযুক্ত খামার মালিক তাঁকে বলে, তার ছেলেকে অন্য জায়গায় কাজে পাঠানো হয়েছে। মা তখন ছেলের সম্পর্কে জানতে বারবার চাপ দিলে খামার মালিক জানায় ছেলেটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সেখান থেকে সে পালিয়ে গেছে। তার ছেলের কিছু হয়েছে এই ভয়ে আনাকাম্মা কিছু উপজাতীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সহায়তায় স্থানীয় পুলিশের কাছে যান।
এরপর পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত খামার মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন হাঁস পালনকারী স্বীকার করে যে ছেলেটি মারা গেছে এবং সে গোপনে কাঞ্চিপুরমে তার শ্বশুরবাড়ির কাছে মৃতদেহটি পুঁতে রেখেছেন। এরপরেই পুলিশ অভিযুক্ত খামার মালিক, তার স্ত্রী এবং ছেলেকে আটক করে। সোমবার বন্ডেড লেবার সিস্টেম (অ্যাবোলিশন) আইন, শিশু শ্রম আইন, কিশোর বিচার আইন, এসসি/এসটি অ্যাট্রোসিটি আইন এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। মঙ্গলবার মৃতের দেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
তিরুপতির কালেক্টর ভেঙ্কটেশ্বর বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা গেছে ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হাঁস পালনকারীর পরিবার দাবি করেছে, ছেলেটি জন্ডিসে মারা গেছে। কিন্তু তাকে গোপনে কবর দেওয়া হয়েছিল এবং মৃতের পরিবারকে জানানো হয়নি। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।”
এক সমাজকর্মী বলেন, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের ফাঁদে ফেলার জন্য অগ্রিম ‘ধার’-এর টোপ দেওয়া হয়। বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ইয়ানাদি উপজাতিরা সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই ধরনের বন্ডেড লেবারের ঝুঁকিতে রয়েছে। সাম্প্রতিককালে এই সম্প্রদায়ের ৫০ জন মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।