সংখ্যালঘু উন্নয়নে সবাইকে পথ দেখাচ্ছে পশ্চিম বাংলা: ফিরহাদ

- আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, শনিবার
- / 9

সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্তনিগম উদ্যোগে পার্ক সার্কাস ময়দানে মিলন উৎসবের উদ্বোধন করছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। রয়েছেন মন্ত্রী গোলাম রাব্বানি, জাভেদ খান, আখরুজ্জামান, সাংসদ নাদিমুল হক, সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান প্রমুখ। ছবি- খালিদুর রহিম
আসিফ রেজা আনসারী: অন্যান্য বছরের মতো এবারও শুরু হল রাজ্য সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের অধীন সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম আয়োজিত ‘মিলন উৎসব- ২০২৩’। শুক্রবার সন্ধ্যায় পার্ক সার্কাস ময়দানের মেলাপ্রাঙ্গনে উৎসবের সূচনা হয়। তাতে ছিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য, সাংসদ ও বিশিষ্টরা। অনুষ্ঠানমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুরাও।
মিলন উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান, বিপ্লব মিত্র, গুলাম রব্বানী, বিধায়ক আখরুজ্জামান, সাংসদ নাদিমুল হক, সাবেক সাংসদ ও বিত্ত নিগমের সদস্য আহমদ হাসান ইমরান, দফতরের সচিব ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ গুলাম আলি আনসারী, বিশেষ সচিব সাকিল আহমেদ, বিধায়ক মিনহাজুল আরেফিন, আল-আমীন মিশনের সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম, রেড রোডে ইমামে ঈদাইন ক্বারী ফজলুর রহমান, মাওলানা আবদুস সামাদ, খ্রিস্টান সংগঠনের অঞ্জেলিনা ম্যান্টস জাসিন্ডা, আলিয়ার ভিসি ড. আবু তাহের কমরুদ্দিন প্রমুখ।
এদিনে অনুষ্ঠানের শুরুতেই আনজুমান গার্লস স্কুল ও আল- আমীন মিশনের পড়ুয়ারা উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন। একইসঙ্গে থিমসং-এর মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়দের জীবনযাত্রা তুলে ধরা হয়। তারপর প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
মিলন উৎসবের উদ্বোধন ফিরহাদ হাকিম বক্তব্যের শুরুতেই বাম আমলের সংখ্যালঘু বাজেট ও বর্তমান সময়ের তুলনা টানেন। তিনি বলেন, আগে মাত্র ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হতো এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করেছে। সংখ্যালঘুদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। এই রাজ্যে ৪৩ লাখ পড়ুয়াকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়, শিক্ষাঋণ, কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ইত্যাদির কাজ হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্যস্থান দখল করা নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
ডাক্তারি পড়াশোনায় আল-আমীন মিশনের ভূমিকার কথাও উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার সমালোচনাও করেন ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, কেন্দ্র সরকার চায় না সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন হোক। আমাদের রাজ্যে অনেক আর্থিক সংকট রয়েছে, কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে ঠিকই তবুও সরকার সবার উন্নয়নে সমান নজর দিচ্ছে। সরকার মনে করে, সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুদের সমুন্নত উন্নয়ন বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। হিন্দু-মুসলিম নয়, মানুষই শেষ কথা। কাজী নজরুলের কবিতার মাধ্যমে সে কথাও তুলে ধরেন ফিরহাদ।
অন্যদিকে রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী গুলাম রব্বানী পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারের সঙ্গে বাংলার সংখ্যালঘু বাজেটের তুলনা টানেন। কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগে কাশ্মীরকে দেশের জান্নাত বলা হতো, কিন্তু এখন চারিদিকে সেনাবাহিনীর পদধ্বনী শোনা যায়। বর্তমানে দেশে যদি শান্তি ও গণতন্ত্রের এক টুকরো জান্নাত থাকে তা হল বাংলা।
মিলন মেলার গুরুত্ব তুলে ধরতে সাবেক সাংসদ ও বিত্ত নিগমের সদস্য আহমদ হাসান ইমরান বলেন, এটা আমাদের কাছে আনন্দের দিন যে আমরা মিলন উৎসবের ময়দানে সবাই সমবেত হয়েছি। আজকের দিনটি আমাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বের কেননা, কেন্দ্র সরকার ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সবকিছুকে শেষ করে দিচ্ছে। শপিং মল সবকিছুকে দখল করছে। এমন অবস্থায় আমরা হাতে তৈরি জিনিসপত্রকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। অনেক স্টল রয়েছে এখানে। এটাই আমাদের কাছে বড় পাওনা। ‘সবকা সাথ-সবকা বিকাশ’-এর সরকার সংখ্যালঘু বাজেট কমিয়ে দিচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার মোদি সরকার আগের থেকে সংখ্যালঘু বাজেটে অনেক টাকা কমিয়ে দিয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, তাহলে কী কেন্দ্র মনে করছে সংখ্যালঘুদের সব উন্নয়ন হয়ে গিয়েছে নাকি তারা কিুছুই করতে চায় না?
মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান বলেন, ২০০৮ সালে বাম আমলে মাত্র ১৪৬ কোটি টাকা সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল। আমি তখন বুদ্ধবাবুকে ধন্যবাদ দিয়ে সামালোচনা করে বলেছিলাম- আপনারা সংখ্যালঘুদের ভোটে সরকারে রয়েছেন আর মাত্র ১৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করছেন! আর সাংসদ নাদিমুল হক তাঁর সংক্ষিপ ভাষণে বলেন, মিলন মেলায় একদিকে যেমন কেরিয়ার কাউন্সেলিং হবে তেমনি, হস্তশিল্পসামগ্রীর বেচাকেনা হবে। রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রও এ দিন মিলন মেলার প্রশংসা করেন। সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সংখ্যাগুরুদের মিলন ও সহযোগিতায় বাংলা আরও এগিয়ে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।