বিচারপতি ইস্তফা দিয়ে ভোটে দাঁড়ালে তাঁর রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই : গাভাই

- আপডেট : ৪ জুন ২০২৫, বুধবার
- / 60
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : বিচারপতিদের অবসরের পর বা আচমকা চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে কোনও সরকারি পদ গ্রহণ করা উচিত নয়, অথবা কোনও দলের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাও উচিত নয় । ফের লণ্ডনে গিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এই কথা বললেন।
গাভাই সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষ পদে বসার পর থেকেই একাধিকবার এই কথা বলে আসছেন। শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ওকার অবসর গ্রহণের অনুষ্ঠানে গাভাই এবং কয়েকজন বিচারপতি বলেছিলেন, আমরা শপথ নিয়ে বলছি আমরা অন্তত অবসরের পর কোনও সরকারি পদ নেব না। আমরা এই শপথ নিচ্ছি, বিচারবিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে।
লণ্ডনের ওই বৈঠকে বিচারপতি গাভাই বলেন, এইসব কাজ করলে আমাদের নৈতিকতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন চিহ্ন মাথা তোলে, বিচারবিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা কমতে থাকে। অবসরের পরে সরকারি পদ নিলে মানুষের মনে এই সন্দেহ দানা বাধা স্বাভাবিক যে, ওই পদের লোভে লালায়িত হয়ে তিনি বিচারপতি থাকাকালীন বিচার করেছেন এবং রায় দিয়েছেন। কোনও বিচারপতি কাজে ইস্তফা দিয়ে ভোটে দাঁড়ালে বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতা এবং স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। সেখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং সাধারণ মানুষ মনে করবে, ওই বিচারপতি সরকারের বদান্যতা পেতেই এতকাল রায়ে পক্ষপাতিত্ব করেছেন। কোন সময়ে কোনও বিচারপতি এই সুবিধা নিলেন এবং কী ধরনের সুবিধা নিলেন, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অবসরের পরেই সুবিধা নেওয়া আর বহু বছর পরে সুবিধা নেওয়ার মধ্যে কিছুটা ফারাক থাকে।
বিচারপতি গাভাই বলেন, মনে রাখতে হবে, আদালত শুধু বিচার করে না, একইসঙ্গে সত্যকে তুলে ধরে। মানুষের আস্থার উপরই নির্ভর করে বিচারবিভাগের বৈধতা, যা স্বাধীনতা, সংহতি এবং নিরপেক্ষতার মতো সাংবিধানিক মূল্যবোধ থেকে উঠে আসে।
সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে, স্বচ্ছ নিয়োগ বিচারবিভাগের বড় মানদণ্ড। কলেজিয়াম নিয়ে সমালোচনা হবেই। বিচারপতিরা যদি বাইরের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেন তাহলে এই সমালোচনার ভিত্তি থাকবে না।বিচারবিভাগ ক্ষমতার স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছে, সেটিও বিচারবিভাগের আর এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
বিচারপতিদের বিচার করার সময়ে প্রখর যুক্তিবোধকে কাজে লাগাতে হবে, যাতে মানুষ কোনও রায় নিয়ে সন্দেহ করতে না পারে। বিচারপতিদের জীবন স্বচ্ছ হতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট তো কোন বিচারপতির কী কী সম্পত্তি রয়েছে সেই বিষয়ে ওয়েবসাইটে বিশদে জানিয়ে দিয়েছে। কারণ বিচারপতিরা সাধারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। আজকাল বিচারের লাইভ টেলিকাস্ট হয়। এটা ভালো।
আবার এই সম্প্রচার দেখে ভুলভাল রিপোর্ট প্রকাশ করা হলে তা বিচারের পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ জাগাবে। গত সপ্তাহেই আমাদের এক বিচারপতি হালকা মেজাজে এক আইনজীবীকে কিছু বলেছিলেন। তা পরের দিন সংবাদপত্রে ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে লেখা হয়ে গেল। এটা একেবারেই অনুচিত।
বিচারপতি গাভাই বলেন, বিচারপতিরা যে কখনও কারও প্রতি দুর্ব্যবহার করেন না তা নয়, করেন, দুর্নীতির সঙ্গেও যোগের অভিযোগ ওঠে। যখনই এসব হয় তখন অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে তার সমাধান করতে হবে, যাতে মানুষ ভুল না বোঝে, বিচারবিভাগের প্রতি আস্থা না হারায়। বিচারপতি বিক্রম নাথ, ইংল্যান্ড এর মহিলা প্রধান বিচারপতি ব্যারোনেস কার, লর্ড লেগাট প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বরিষ্ঠ আইনজীবী গৌরব ব্যানার্জি।