১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরানের খামেনিকে হত্যার সম্ভাব্য প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রশ্ন প্রত্যাখ্যান করলেন পুতিন

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 51

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র হত্যার চেষ্টা করতে পারে – এই জল্পনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের সাইডলাইনে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আপনাদের প্রশ্নের সবচেয়ে সঠিক উত্তর হতে পারে – আমি এই সম্ভাবনা নিয়েই কিছু বলতে চাই না। আমি আলোচনায়ই যেতে চাই না।”

পুতিন এই মন্তব্য করেছেন এমন এক সময়, যখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সপ্তাহের শুরুতে বলেন, ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষে ইরানে ‘শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন’ হতে পারে। ইতিমধ্যে ইসরাইলি আক্রমণে শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।

আরও পড়ুন: গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের উপর ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন নিহত

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি ইরানি মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র গত শুক্রবার থেকে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৩৯ জনই বেসামরিক নাগরিক।

আরও পড়ুন: ইসরাইল থেকে ভারতীয়দের ফেরাতে বিবৃতি জারি করল বিদেশ মন্ত্রক

এই পরিস্থিতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র খামেনির অবস্থান সম্পর্কে অবগত। এখনই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলেও ভবিষ্যতে ইসরাইলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও অংশ নিতে পারে, এমন ইঙ্গিত দেন তিনি।

আরও পড়ুন: ইরানের পালটা হামলাকে বৈধ বললেন এরদোগান, নেতানিয়াহুকে তুলনা করলেন হিটলারের সঙ্গে

এমন উত্তেজনাপূর্ণ প্রেক্ষাপটে, পুতিন জোর দিয়ে বলেন, ইরানের জনগণ এখনো তাদের সরকারকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ। “আমরা দেখছি, ইরানে বর্তমানে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যত জটিলই হোক না কেন, জনগণ দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশে রয়েছে,” তিনি বলেন।

সম্প্রতি নিজেকে এই সংঘর্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন পুতিন। তবে তেহরানের সঙ্গে মস্কোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে বিশ্বনেতারা, বিশেষ করে ট্রাম্প, তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

পুতিন বলেন, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইসরাইলের “নির্বিশেষ নিরাপত্তা” রক্ষা – এই দুই দিক বিবেচনায় রেখে একটি সমাধান খোঁজা প্রয়োজন। “এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। আমাদের এখানে খুব সতর্ক হতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, একটি সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব,” তিনি বলেন।

তিনি জানান, জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত কৌশলগত অংশীদারিত্ব সত্ত্বেও রাশিয়া এখনো ইরানকে কোনো অস্ত্র সরবরাহ করেনি। তবে মস্কো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। তেহরান এই কর্মসূচিকে শুধুই বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য দাবি করে আসছে, যদিও ইসরাইলের অভিযোগ – ইরান পারমাণবিক বোমা বানাতে চায়।

পুতিন বলেন, ইসরাইলি বোমা হামলা সত্ত্বেও ইরানের “ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কারখানাগুলো” অক্ষত রয়েছে। “এই ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রগুলো বিদ্যমান, কিছুই হয়নি তাদের,” তিনি বলেন।

তিনি আরও জানান, রুশ নির্মিত বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এখনো ২০০-রও বেশি রাশিয়ান কর্মী কাজ করছেন এবং ইসরাইলি নেতৃত্বের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক বোঝাপড়ার পর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই অবস্থায় পুতিন বারবার রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছেন – এমন এক সময়ে, যখন ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পথে এগোনোর হুমকি দিচ্ছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ইরানের খামেনিকে হত্যার সম্ভাব্য প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রশ্ন প্রত্যাখ্যান করলেন পুতিন

আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র হত্যার চেষ্টা করতে পারে – এই জল্পনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের সাইডলাইনে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আপনাদের প্রশ্নের সবচেয়ে সঠিক উত্তর হতে পারে – আমি এই সম্ভাবনা নিয়েই কিছু বলতে চাই না। আমি আলোচনায়ই যেতে চাই না।”

পুতিন এই মন্তব্য করেছেন এমন এক সময়, যখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সপ্তাহের শুরুতে বলেন, ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষে ইরানে ‘শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন’ হতে পারে। ইতিমধ্যে ইসরাইলি আক্রমণে শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।

আরও পড়ুন: গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের উপর ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন নিহত

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি ইরানি মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র গত শুক্রবার থেকে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৩৯ জনই বেসামরিক নাগরিক।

আরও পড়ুন: ইসরাইল থেকে ভারতীয়দের ফেরাতে বিবৃতি জারি করল বিদেশ মন্ত্রক

এই পরিস্থিতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র খামেনির অবস্থান সম্পর্কে অবগত। এখনই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলেও ভবিষ্যতে ইসরাইলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও অংশ নিতে পারে, এমন ইঙ্গিত দেন তিনি।

আরও পড়ুন: ইরানের পালটা হামলাকে বৈধ বললেন এরদোগান, নেতানিয়াহুকে তুলনা করলেন হিটলারের সঙ্গে

এমন উত্তেজনাপূর্ণ প্রেক্ষাপটে, পুতিন জোর দিয়ে বলেন, ইরানের জনগণ এখনো তাদের সরকারকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ। “আমরা দেখছি, ইরানে বর্তমানে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যত জটিলই হোক না কেন, জনগণ দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশে রয়েছে,” তিনি বলেন।

সম্প্রতি নিজেকে এই সংঘর্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন পুতিন। তবে তেহরানের সঙ্গে মস্কোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে বিশ্বনেতারা, বিশেষ করে ট্রাম্প, তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

পুতিন বলেন, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইসরাইলের “নির্বিশেষ নিরাপত্তা” রক্ষা – এই দুই দিক বিবেচনায় রেখে একটি সমাধান খোঁজা প্রয়োজন। “এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। আমাদের এখানে খুব সতর্ক হতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, একটি সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব,” তিনি বলেন।

তিনি জানান, জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত কৌশলগত অংশীদারিত্ব সত্ত্বেও রাশিয়া এখনো ইরানকে কোনো অস্ত্র সরবরাহ করেনি। তবে মস্কো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। তেহরান এই কর্মসূচিকে শুধুই বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য দাবি করে আসছে, যদিও ইসরাইলের অভিযোগ – ইরান পারমাণবিক বোমা বানাতে চায়।

পুতিন বলেন, ইসরাইলি বোমা হামলা সত্ত্বেও ইরানের “ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কারখানাগুলো” অক্ষত রয়েছে। “এই ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রগুলো বিদ্যমান, কিছুই হয়নি তাদের,” তিনি বলেন।

তিনি আরও জানান, রুশ নির্মিত বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এখনো ২০০-রও বেশি রাশিয়ান কর্মী কাজ করছেন এবং ইসরাইলি নেতৃত্বের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক বোঝাপড়ার পর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই অবস্থায় পুতিন বারবার রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছেন – এমন এক সময়ে, যখন ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পথে এগোনোর হুমকি দিচ্ছে।